কক্সবাংলা ডটকম(২৪ জুলাই) :: এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় যারা ফেল করেছে- তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। একটি পরীক্ষায় পাস না করলে জীবন নষ্ট হয়ে যায় না কিংবা জীবনে ব্যর্থতার সূচনা হয় না। বরং ফেল বা অকৃতকার্যতাই আমাদের সফলতার পথ দেখাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।
পরীক্ষায় ফেল করে ভেঙে পড়লে চলবে না; জীবন সাজাতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মানুষ সব সময় সফল হতে চায়। সফলতা পেতে আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেই। জীবনে যেকোনো কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অব্যাহত চেষ্টায় সফলতা অবশ্যই আসবে।
অনেক সময় আমাদের সব চেষ্টায় তাৎক্ষণিত সফলতা পাওয়া যায় না। তার সেটাকেই আমরা অকৃতকার্য বা ব্যর্থতা বলে মনে করি। মনে রাখতে হবে, অকৃতকার্য এবং ব্যর্থতা এক বিষয় নয়।
বিভিন্ন কাজ এবং পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পেছনে কিছু কারণ থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, চেষ্টায় ঘাটতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং অভিভাবকের যথাযথ দায়িত্ব পালনে ঘাটতি।
সব কাজে একবারের চেষ্টায় সফলতা আসলে পৃথিবীতে অকৃতকার্য বলে কোনো শব্দ থাকতো না। আর প্রত্যেকটা মানুষ নিজের মতো একটা করে পৃথিবী বানিয়ে নিতেন। এতে মানুষ অলস হয়ে পড়তেন। নতুন কিছু করার চেষ্টাও করতেন না। কিন্তু এখন অকৃতকার্য হওয়ার ভয়ে পরিশ্রম করে মানুষ। নিজের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করা হয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ফেল বা অকৃতকার্য মানেই ব্যর্থতা নয়। একবার কোনো কাজে অকৃতকার্য হওয়া মানে অনেকগুলো সম্ভাবনা দ্বার উন্মোচন হওয়া। সুতরাং অকৃতকার্য হওয়ার পর নতুন উদ্যমে শুরু করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীতে প্রচুর সফল মানুষ আছেন- যারা প্রথম জীবনে এক বা একাধিকবার ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছেন। সে রকমই কিছু মানুষের কথা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছে অর্থসূচক
১) উইস্টন চার্চিল: পারিবারিক পরিবেশেই পড়ালেখার হাতেখড়ি। ছোটবেলা থেকে স্বাধীনচেতা ও বিদ্রোহী স্বভাবের ছিলেন তিনি। একাডেমিক রেকর্ড খুব একটা ভালো ছিল না। প্রায় সাজা ভোগ করতে হতো। সর্বশেষ হ্যারো স্কুলে পড়েন ১৮৮৮ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর যোগ দেন হ্যারো রাইফেল কপর্সে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ভারত, সুদান, মিশরসহ কয়েকটি দেশে মিলিটারি সার্ভিসে নিযুক্ত ছিলেন।
প্রথম জীবনে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সদস্য ছিলেন উইস্টন চার্চিল। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০০২ সালে বিবিসির এক জরিপে সর্বকালের সেরা ব্রিটেনবাসী হিসেবে মনোনীত হন চার্চিল। মতাদর্শগত বিরোধের কারণে নিজের রাজনৈতিক পার্টি থেকে ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ছিলেনতিনি। এমন অবস্থা থেকেই ১৯৪০ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হন চার্চিল।
২) অপরাহ উইনফ্রে: আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত টক শো ‘দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো’ তাকে একাধিক এমি অ্যাওয়ার্ড এনে দিয়েছে। এই শো’ টেলিভিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত বলে গণ্য। ম্যাগাজিন প্রকাশকের পাশাপাশি একজন শক্তিমান সাহিত্য সমালোচক এবং অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড মনোনীত অভিনেত্রী তিনি।
এই জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব কুইন অফ টেলিভিশন টক শো নামে পরিচিত। ফোর্বস ম্যাগাজিন সূত্র মতে, ২৯০ কোটি ডলারের মালিক অপরাহ ক্যারিয়ার শুরু করেন টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে।
৩) ওয়াল্ট ডিজনি: ওয়াল্ট ডিজনি ছিলেন পৃথিবীর প্রথম এনিমেশন প্রোগ্রামার এবং বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী এবং সফল প্রযুক্তি ভাবনার অধিকারী | একজন মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক, নির্দেশক, কাহিনীকার, নেপথ্য কণ্ঠ শিল্পী ও অ্যানিমেটর।
১৯০১ সালে সিকাগো শহরে জন্মগ্রহন করেন ডিজনি। ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকার প্রতি তার অনুরাগ ছিল। বালক বয়স থেকেই ছবি আঁকা শেখাতেন তিনি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইলাস্ট্রেটর হিসাবে চাকরি পান জিজনি।
৪) টমাস আলভা এডিসন: বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী ছোটবেলায় খুবই দুর্বল ছাত্র ছিলেন- শিক্ষকরা বলতেন, ‘কোনো কিছু শিখতে নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিতো সে।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা এবং দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাতিসহ বহু যন্ত্র তৈরি করেছিলেন এই মহান বিজ্ঞানী। অর্জন করেছিলেন নিজের নামে এক হাজারেরও বেশি আবিষ্কারের পেটেন্ট।
৫) স্যার আইজ্যাক নিউটন: নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয় বাড়ির পাশের এক ক্ষুদ্রায়তন স্কুলে। ১২ বছর বয়সে তাকে গ্রান্থামের ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে এক ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার বাড়িতে থাকতেন তিনি। ওই স্কুলে নিউটন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্ব্বি; যা থেকে তার মেধার পরিচয় পাওয়া যায়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন আইজ্যাক নিউটন। আইজ্যাক নিউটনকে ছোটবেলায় তার মা স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছিলেন এবং পারিবারিক ফার্মের দায়িত্ব দেন; সেখানে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থতার পর লেখাপড়ার সুযোগ পান তিনি। পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন শাখায় সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করেন।
৬) জে কে রাউলিং: রাউলিং এর বাবা-মা দুজনই ছিলেন পেশাজীবী। তাই রাউলিং ও তার বোনকে একাকী সময় কাটাতো হতো। তাই তাদের দুই বোনকে মজার মজার সব গল্পের বই কিনে দিতেন বাবা-মা। সে সময় থেকেই মজার মজার গল্প লিখতেন তিনি। মূলত বোনকে পড়ে শোনানোর জন্যই গল্পগুলো লিখতেন তিনি। এভাবেই তার মনের মধ্যে বাসা বাঁধে নামকরা লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন। তার স্বপ্ন ছিল, তার লেখা বই দোকানে আসা মাত্র পাঠকরা লুফে নেবেন। এক সময় তার সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।
জনপ্রিয় কল্পকাহিনী হ্যারি পটার সিরিজের রচয়িতা এবং একইসঙ্গে বই বিক্রি করে প্রথম বিলিয়ন ডলার আয় করা জে কে রাউলিং যখন প্রথম হ্যারি পটার উপন্যাস শুরু করেন তখন তিনি সিংগেল মম হিসেবে কাজ করতেন।
৭) চালর্স ডারউইন: বিবর্তনবাদের ধারণার আবিষ্কারক বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ছোটবেলায় সাধারণ ছাত্র ছিলেন। মেডিসিনে ক্যারিয়ার গড়ার পথ থেকে সরে গিয়ে সামান্য যাজক হওয়ার জন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রকৃতির প্রতি ডারউইনের গভীর আগ্রহের কারণে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়নে মনোযোগী ছিলেন না তিনি; বরং সামদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণি নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন তার মধ্যকার প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের আগ্রহকে অনুপ্রাণিত করে। এইচ.এম.এস. বিগলে তার পাঁচ বছরব্যাপী যাত্রা তাকে একজন ভূতাত্ত্বিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং বিগলের ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হলে- তা তাকে জনপ্রিয় লেখকের খ্যাতি এনে দেয় ।
৮) ভিনসেন্ট ভ্যান গগ: পৃথিবীর সেরা চিত্র শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ ছিলেন অসম্ভব আবেগপ্রবণ আর আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ। ছোটকাল থেকেই আঁকাআঁকি করলেও জীবদ্দশায় একটি মাত্র ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন তিনি; তাও মৃত্যুর কিছুদিন আগে।
যুবক বয়সে চিত্রকর্ম আঁকা শুরু করেন ভ্যান গগ। জীবনের শেষ দুই বছরে অসংখ্য বিখ্যাত চিত্রকর্ম করেন তিনি। প্রতিকৃতি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, সূর্যমুখী ফুল, গমের ক্ষেত ইত্যাদি তার আঁকার বিষয়বস্তু ছিল।
শৈশবে শান্ত স্বভাবের ছিলেন ভ্যান গগ। ১৮৬০ সালে জুন্ডার্থ গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি হন তিনি। এই স্কুলের ২০০ জন ছাত্রের জন্য মাত্র একজন ক্যাথলিক শিক্ষক ছিলেন। ১৮৬১ সালের অক্টোবরে বাড়ি থেকে ২০ মাইল দূরের জেভেনবার্গেনের একটি আবাসিক স্কুলে ভর্তি হন ভ্যাগ গগ।
৯) হ্যারিসন ফোর্ড: ‘ইন্ডিয়ানা জোনস’ ও ‘স্টার ওয়ার্স’ খ্যাত, বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা হ্যারিসন ফোর্ড প্রথম মুভিতে অভিনয়ের পর একজন সম্পাদক বলেছিলেন, হ্যারিসন কখনও মুভিতে সফল হতে পারবেন না। বয় স্কাউট অব আমেরিকার সক্রিয় সদস্য ছিলেন ফোর্ড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ র্যাঙ্ক লাইফ স্কাউট অর্জন করেন তিনি। ১৯৬০ সালে ফোর্ড ইলিনয়েসের পার্ক রিজে অবস্থিত মেইন ইস্ট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। উইসকনসিনের রিপন কলেজে অধ্যয়নের সময় সিগমা ন্যু ফ্যাটারনিটির সদস্য হন তিনি। লজ্জাভাব দূর করতে ড্রামা ক্লাসেও অংশ নেন ফোর্ড।
১০) জ্যাক মা: বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি চীনের শিল্পপতি জ্যাক মা। স্কুলে ৫ বার ফেল করেছিলেন আলিবাবা গ্রুপের কর্ণধার। স্কুল ও কলেজ জীবনে যে চূড়ান্ত অসফল, সম্প্রতি একটি ইন্টারভিউতে তা অকপটে স্বীকার করেন তিনি।
জ্যাক মা’র কথায়, যখন হার্ভার্ড আমাকে বার বার বাতিল করে দেয়- তখন মনে মনে ঠিক করেছিলাম, এ বিশ্ববিদ্যালয়েই আমি একদিন ক্লাস নেব। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। অতিথি হিসেবে হার্ভার্ডে ম্যানেজমেন্টের ক্লাস নিয়েছি। এখানেই শেষ নয়; চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন ফুডচেন KFC-তে। সেখানেও আমার আবেদনপত্র খারিজ করে দেওয়া হয়।
Posted ৩:২৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta