জামাল জাহেদ ফিচার(২৩ জুলাই) :: পৃথিবীর বেশির ভাগ মহান মানুষ ক্ষীণজম্মা শ্রেনীর। খুব অল্প সময়েই পরোপকারী মানুষ গুলো বিগত হয়ে যায়। সৃষ্টির কি অমোঘ নিয়ম ইতিহাস সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ ও জীবনের বেড়াজালে কখনো কখনো নিজেকে আত্বগোপনে রয়েছিলেন।নিজের দেশ ও স্বাধীনতার প্রয়োজনে।
জগত বিখ্যাত পলিটিশিয়ান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালিন পাকিস্তানের সাজানো নাটকে অতীষ্ট হয়ে যখন আত্বগোপনে ছিলেন।তখন নিজের জন্য নিরাপদ স্থান মনে করেন কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপকে।
তথ্যসুত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পলাতক হয়ে সর্ব প্রথম কক্সবাজারের উখিয়ায় রাখাইন পল্লীতে আশ্রয় গ্রহন করেছিলো এক মহিলার কাছে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিল।
১৯৬৮ সালের প্রথম ভাগে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের অখন্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই মামলাটির পূর্ণ নাম ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং মামলা।
তবে এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসাবেই বেশি পরিচিত, কারণ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল যে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় কথিত ষড়যন্ত্রটি শুরু হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তির চার যুগ পর মামলার আসামী ক্যাপ্টেন এ. শওকত আলী ২০১১ সালে প্রকাশিত একটি স্বরচিত গ্রন্থে এ মামলাকে সত্য মামলা’ বলে দাবী করেন।
এদিকে আসল ঘটনার দিকে অবতারনা করলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু নৌকা/সাম্পানে করে সোনাদিয়ায় আসেন। তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ফুল দিয়ে বরণ করেন সোনাদিয়ার জমিদার তথা প্রয়াত নাগু মেম্বারের পিতা মরহুম আছদ আলী মিয়া।
তখন তিনি খাসমহলের জমিদার ছিলেন এবং তার ছেলেমেয়েরা বুদ্ধিমান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন নিরুপায় হয়ে জনবিছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া এসে মৃত আছদ আলীর কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। তখন প্রয়াত আছদ আলী বলেছিলেন, “আমার গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও আপনার কেউ ক্ষতি করতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ।
পরে সে সময় আজকের সোনাদিয়া দ্বীপে শেখ মুজিবুর রহমান তিনদিন অবস্থান করেছিলেন। জলদস্যুদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত নাগু মেম্বার এর পিতা সে সময় বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন ভাবে আপ্যায়ন করেছিলেন। খাসি জবাই করে মেহমানধারী করেছিলেন।
ইতিহাসসুত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু ঢাকা চলে যাবার সময় মৃত আছদ আলীর চার পুত্র সন্তানকে সাথে নিয়ে প্রয়াত গাজী মেম্বার ঢাকা গিয়েছিলেন একদিন। ঢাকায় তাদের পরিচয় জেনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,”তোমরা আমার বন্ধুর ছেলে তোমাদের কি লাগবে আমাকে বল”।
তখন ওরা বলেছিলো আমাদেরকে ফরেষ্ট বা ম্যানগ্রোভ প্যারাবন গুলো দিলে ভালো হয়। কেননা সমুদ্রে পাড়ে বসবাস করি। মাছ আর চিংড়ি চাষ করে যেনো জীবিকা নির্বাহ হয়। তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু চারজনকে চারটি লাল কার্ড দিয়েছিলেন।
বড়ই দুর্ভাগ্য ১৯৯১ সালের প্রলয়কারী ঘুর্নিঝড় মেরি এনে তাদের সেই লাল কার্ড গুলো পানিতে ভেসে যায়। যার ফলে কোন প্রমান আর বাকি রইলোনা। যতদুর মনে পড়ে তখন মহেশখালী কুতুবদিয়ার এম পি ছিলেন মৃত ইছহাক মিয়া। যিনি মহেশখালি কুতুবজোমের জনগনের ভোটে প্রথম আওয়ামী সাংসদ।
১৯৯১সালের পরে প্রয়াত এমপি ইছহাক যখন গনভবনে যেতেন তখন বঙ্গবন্ধু বলতেন আমার বন্ধু আছদ আলী মিয়া কেমন আছে!! আমার কাছে আসতে বলিও—-
জীবনের বড় বিচিত্র রুপ পরে নাগু মেম্বারের পিতা আছদ আলী মারা যায়। এ কথা বঙ্গবন্ধু শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন—-
সেসব অতীত কাহিনীর বাস্তবতার কালের স্বাক্ষী আল্লাহর রহমতে এখনো বেঁচে আছেন পৃথিবীতে। তিনি হলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ এর প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম প্রকাশ কালা নজরুল। সোনাদিয়ার আছদ আলীর সাথে বঙ্গবন্ধুর কি সম্পর্ক ছিলো তা তিনি সব জানতেন।
এমনকি আরো একজন মানুষ সব কিছু নিজের চোখে দেখেছিলেন তিনি হলেন মাননীয় এম,পি,জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কক্সবাজার মাটিও মানুষের প্রিয় মুখ মোস্তাক আহমদ চৌধুরী।
দীর্ঘদিন বিছিন্ন এ দ্বীপের জনপ্রতিনিধি ছিলেন আব্দুল গফুর প্রকাশ নাগু মেম্বার। যিনি ছিলেন কুতুবজোম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি, ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সোনাদিয়া ওয়ার্ডের চার বার নির্বাচিত সফল ইউপি সদস্য।
গত বছরের ২৭শে রমজান যিনি তারাবি নামায পড়ে বাড়ি ফেরার পথে জলদস্যুরা গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে এই প্রিয় মানুষটিকে । শুধু ডাকাতি বন্ধ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হলো অসম্ভব জনপ্রিয় এই জনপ্রতিনিধিকে।
তিনি ছিলেন অসাধারন জনপ্রিয় এক মানুষ। এখনো হাজার হাজার মানুষ প্রিয় মানুষটির জন্য অঝরে কাঁদেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সোনাদিয়া তথা মহেশখালির আপামর জনসাধারণের বিনীত আবেদন বঙ্গবন্ধুর পথধুলিত সোনাদিয়াকে বিশ্ব পর্যটনকেন্দ্রের এক খন্ড স্থান হিসাবে তৈরি করতে।
সোনাদিয়ার দ্বীপকে যেনো সোনার দ্বীপ হিসাবে তৈরি করে জগত বিখ্যাত রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবর রহমানের নামে ববঙ্গবন্ধু দ্বীপ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় । কেনোনা পুর্ব পুরুষেরা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেলেও স্মৃতি কখনো হারিয়ে যায়না। স্মৃতি হারানো কষ্ট।
ধানমন্ডি ৩২নং বাড়িতে যেমন জাতির জনক ঘুমাতেন। ঠিক তেমনি জীবনের ৭২টি ঘন্টা কিংবা তিনটি দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনাদিয়ার পুর্ব পাড়ায় অবস্থান করেছিলেন। যে বাড়িতে রাত্রি যাপন করেছিলেন এখনো সে বাড়িটি অখ্যাত রয়েছে হুবহু সেই কালের স্বাক্ষী হয়ে।
এ বিষয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ কিংবা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও স্মৃতি সংরক্ষক কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। স্বীকৃতি দেওয়া হোক সোনাদিয়াকে বঙ্গবন্ধু দ্বীপ হিসাবে নামকরণ করার এবং সোনাদিয়া চরকে বিশ্বমানের পর্যটন শিল্প গড়ে তোলতে।
জে,জাহেদ সাংবাদিক ও ফিচার লেখক।
Posted ১০:১৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৩ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta