কক্সবাংলা ডটকম(১২ আগস্ট) :: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদানকারী প্রয়োজনাতীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে শিক্ষা বোর্ড। বন্ধ করে দেওয়া হবে ‘কলেজ’ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। মাদরাসা, কারিগরিসহ সাধারণ সবকটি শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ভর্তি ও পাবলিক পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে খারাপ পারফরম্যান্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা হচ্ছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কাক্সিক্ষত সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করেনি এবং ভর্তি নেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে নিজ নিজ বোর্ড। খারাপ পারফরম্যান্সের যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা না করলে এমপিও সুবিধা বাতিল, প্রতিষ্ঠানের নবায়ন স্থগিত কিংবা বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ২৩ জুলাই প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে এ বছর ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। শূন্য পাসের প্রতিষ্ঠান গত বছর ছিল ২৫টি। এ বছর বেড়েছে ৪৭টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খারাপ পারফরম্যান্সে প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, কেন এসব প্রতিষ্ঠানের একজনও পাস করেনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, রাজধানীসহ জেলা শহরে বিভিন্ন গলিতে, মার্কেটে, বাড়িতে ঝোলানো হয়েছে কলেজের সাইন বোর্ড। মানহীন এসব কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে কোনো আগ্রহ নেই। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় এসব কলেজ বেশি বিপদে পড়েছে। এখন জোরজুলুম করে বা কাউকে বিনা পয়সায় লেখাপড়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভর্তি করাতে পারছে না কলেজগুলো। ফলে শিক্ষার্থী শূন্যতায় অস্তিত্ব সংকটে।
এগুলোর অনুমোদনের ক্ষেত্রে এলাকায় জনসংখ্যার তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আছে কী নেই? তার কোনো হিসাবে না কষে রাজনীতিক চাপ, পেশিশক্তি আর বাড়তি টাকা-কড়ি খরচ করে নেওয়া হয় কলেজের অনুমোদন। কোথাও চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী দিয়ে চলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠদান।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্যানুযায়ী, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ১৮৫টি প্রতিষ্ঠানে কোনো আবেদন পড়েনি। এর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ২৯, যশোর বোর্ডের ৯, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বোর্ডের একটি করে, বরিশাল বোর্ডের ৮, সিলেট বোর্ডে ২, দিনাজপুর বোর্ডের ৯০, রাজশাহী বোর্ডের ৩৮ এবং মাদ্রাসা বোর্ডের ৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডে শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোর অবশ্য সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। এ ছাড়া ভর্তির জন্য ৬৩টি প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৫ জনের আবেদন, ১৩০টিতে ১০ জন, ২১৬টিতে ১৫ জন এবং ২৮৮টিতে সর্বনিম্ন ২০ জন আবেদন করেছেন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, খারাপ পারফরম্যান্সের প্রতিষ্ঠানের তালিকা হচ্ছে। একই ধরনের সমস্যার কারণে সরকারের নির্দেশে আমরা এর আগেও কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। এ বছরের তথ্য কয়েক দিন আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতো আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। এর আগেও ৭৯টি কলেজ বন্ধের নোটিশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। অন্য শিক্ষা বোর্ডকেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে এ বছর একই ধরনের চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফ উল্যা জানান, শিক্ষার্থী পায়নি এ ধরনের মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। তবে ইতোমধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। খারাপগুলোকে নবায়ন দিচ্ছি না।
উল্লেখ্য, সারা দেশে ভর্তির জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিষ্ঠান (কলেজ-মাদ্রাসা) ৯ হাজার ১৫৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আসন ২৮ লাখ ৬২ হাজার ৯টি। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। এর বিপরীতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ১৩ লাখ ১০ হাজার ৯৪৭ জন। সেই হিসাবে ১৫ লাখ আসন শূন্য থাকছে।
Posted ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta