কক্সবংলা ডটকম :: বর্ষা আসতে আর বেশি দিন কিন্তু বাকি নেই। আর এই সময় চারিধারে সাপের উৎপাত ক্রমশ বাড়তে থাকে। যদিও শহরাঞ্চলের থেকে গ্রামাঞ্চলে সাপ বেশি দেখা যায়।
ঘরে, রান্নাঘরে, বাগানে, আনাচে কানাচে সাপের উৎপাত বাড়তেই থাকে।
যে কারণে ভয়, আতঙ্ক তৈরি হয় গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। সবসময় যে বাড়িতে কার্বলিক অ্যাসিড থাকে, তা কিন্তু নয়।
যদি আপনার বাড়িতে কার্বলিক অ্যাসিড না থাকে তাহলে কোন উপায় দ্রুত সাপ তাড়াবেন, জানুন।
যদি আপনার হাতের কাছে কার্বলিক অ্যাসিড না থাকে তাহলে আপনি লাল রঙের সাবান ব্যবহার করতে পারেন। কারণ লাল সাবানে কর্বনিল থাকে। আপনি এই সাবান টুকরো টুকরো করে কেটে ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে দেন তাহলে কিন্তু সাপ ঘরে প্রবেশ করবে না।
আপনি সালফারের গুঁড়ো দিয়ে খুব সহজেই বাড়ি থেকে বিষধর সাপের উপদ্রব কমাতে পারেন বাড়িতে যেসব জায়গায় আপনার সাপের আনাগোনা রয়েছে সেই জায়গাগুলোতে সালফারের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন। কারণ সালফারের গুঁড়ো সাপের গায়ে লাগলে জ্বালা হয়। ফলে সাপ একবার সেখানে এলে দ্বিতীয়বার আর একদমই আসবে না।
কার্বলিক অ্যাসিড ছাড়াও আপনি কিন্তু রসুন, সরষের তেল দিয়ে খুব সহজেই বাড়ি থেকে সাপ এড়াতে পারেন। রসুন বেটে তাতে সরষের তেল মিশিয়ে তা রেখে দিন। বাড়ির যেকোনও কোণে বা বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে দিতে পারেন।
যদি আপনি ন্যাপথলিন গুঁড়ো বাড়ির চারপাশে দিয়ে রাখতে পারেন। তাহলেও কিন্তু সব সেই বাড়িতে প্রবেশ করে না সাপ। ন্যাপথলিনের ঝাঁঝালো গন্ধ সাপ সহ্য করতে পারে না।
সাপ এড়াতে আপনি মশলাগুলো ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- গোলমরিচ, লঙ্কার গুঁড়ো, লেবুর রস মিশিয়ে আপনি আপনার বাড়ির চারপাশে দিয়ে দিন। সেই সঙ্গে আপনি পেঁয়াজ বেটেও কিন্তু দিতে পারেন। তাহলে আপনার বাড়ির চারপাশে কখনোই সাপ আসবে না।
আপনি ব্লিচিং পাউডার বাড়িতে দিয়ে রাখলেও কিন্তু সাপ, পোকামাকড় একদমই আপনার বাড়িতে প্রবেশ করবে না।
বিষধর সাপ কিন্তু ভিনেগারের ঝাঁঝালো গন্ধ একদমই সহ্য করতে পারে না। তাই বাড়ির চারপাশে যদি ভিনেগার ছড়িয়ে রাখেন তাহলে কোনও বিষধর সাপ আপনার ঘরে প্রবেশ করবে না।
রাসেলস ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয়:
বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বনবিড়াল, মেছোবিড়াল, তিলানাগ ঈগল, সারস, মদনটাক পাখি এবং কিছু প্রজাতির সাপও রাসেল ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্যপ্রাণী মানুষ নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেলস ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মনে রাখা প্রয়োজন রাসেলস ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। এই সাপ ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাপ মারা থেকে বিরত থাকুন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
এছাড়া স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সাপের কামড় এড়াতে করণীয়:
– যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
– লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না।
– সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরুন।
– রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চলাইট ব্যবহার করুন।
– বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন।
– পতিত গাছ, জ্বালানি লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
– সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।
– প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।
সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে করণীয়:
– দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশন করলে বসে পড়তে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনের ক্ষেত্রে হাত নড়াচাড়া করা যাবে না। হাত-পায়ের গিরা নাড়াচাড়ায় মাংসপেশির সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।
– আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে ফেলতে হবে।
– শরীরে ঘড়ি, অলঙ্কার, তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলুন।
– দংশিত স্থানে কাঁটবেন না, সুই ফোটাবেন না কিংবা কোন রকম প্রলেপ বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।
– সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
– যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান।
– আতঙ্কিত হবেন না, রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম আছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Posted ৪:৪৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta