কক্সবাংলা ডটকম(৩১ জানুয়ারি) :: ২০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করেছেন। যদিও আপাতদৃষ্টিতে বলা হচ্ছে যে, এখন ট্রাম্প প্রশাসনের যে জঞ্জাল সেই জঞ্জাল পরিষ্কার করাই এখন নতুন মার্কিন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জো বাইডেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর একের পর এক অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করছেন।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও একটা সংকুল পরিস্থিতির মধ্যে। বিশেষ করে ট্রাম্পের অভিশংসন এবং শ্বেতাঙ্গ উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের আশঙ্কায় সেখানে এক ধরনের জরুরি অবস্থা চলছে। কিন্তু এর মধ্যেও নতুন মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের দিকে নজর দিচ্ছে। একাধিক কারণে জো বাইডেন প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এখানে একটি বড় ব্যাপার লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাইডেনের যেই প্রশাসন সেই প্রশাসনে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের জয়জয়কার। কাজেই ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের রাখার প্রধান কারণ হলো উপমহাদেশে মার্কিন উপস্থিতি এবং মার্কিন প্রভাব বৃদ্ধি করা। এই উপমহাদেশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হলো বাংলাদেশ। একাধিক কারণে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন আগ্রহ বেশি।
প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গোপসাগরের দিকে নজর ছিল। বিশেষ করে এখানে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন করার জন্য তারা সেন্টমার্টিনদ্বীপ কিংবা অন্যকোন দ্বীপ তারা বিভিন্ন সময়ের চেয়ে আসছিল। আবার নতুন করে এই অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়টির দিকে জো বাইডেন সরকার গুরুত্ব দিবে বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে এবং বাংলাদেশ একটি বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, চীন যেভাবে বাংলাদেশের বাজার দখল করছে, সেই তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক পিছিয়ে পড়েছে। সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বাংলাদেশে বাজার বিস্তৃতি এবং বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশও হয়তো বেশকিছু বাণিজ্যিক সুবিধা পেতে যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, অতীতে বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল সবচেয়ে বড় অংশীদার। সেখানে তাদের প্রভাব ধীরে ধীরে কমে গেছে। এখন আবার নতুন করে জো বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানসহ তেল-গ্যাসের যে বিনিয়োগ, সেই বিনিয়োগ বাড়াতে চায়।
চতুর্থত, বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি মডেল। এজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক এবং কূটনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের যে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান নীতি সেই সহঅবস্থান নীতিকে অন্যত্র ছড়িয়ে দেওয়ার যে কৌশল ওবামা সরকার গ্রহণ করেছিল সেই কৌশলের ধারাই জো বাইডেন সরকার এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
পঞ্চমত, জো বাইডেন সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে যে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী আছে তাদেরকে নাগরিকত্ব দিবে। বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণে অধিবাসী এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে, যা ডেমোক্রেটদের জন্য একটি বড় ভোট ব্যাংক হতে পারে। আর এই কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সুন্দর সুসম্পর্ক রাখতে চায়, যা তাদের ভোট ব্যাংকের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে থাকবে।
এই সমস্ত কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন নীতিতে যেমন বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন ছিল, বাংলাদেশে তার অগ্রাধিকারের মধ্যে ছিল না, জো বাইডেনের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটতে যাচ্ছে না। কারণ, উপমহাদেশকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেই জো বাইডেন আন্তর্জাতিক কূটনীতি সাজাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
Posted ১:০৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta