কক্সবাংলা ডটকম(১৮ মে) :: বাংলাদেশে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জুন-ডিসেম্বর) জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল সরবরাহে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ১১টি কোম্পানি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চাওয়া বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে এরই মধ্যে দরপত্র জমা দিয়েছে এসব কোম্পানি। এর মধ্যে একাধিক কোম্পানি সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও রয়েছে।
তবে নতুন প্রস্তাবে বিদ্যমান দামের চেয়ে বেশি দর হেঁকেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিপিসিকে জ্বালানি তেল বেশি দামে কিনতে হবে বলে গতকাল জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের বার্ষিক জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ টন। এর মধ্যে দেশের গ্যাসকূপ থেকে প্রাপ্ত গ্যাসের সহজাত পেট্রোলিয়াম থেকে পেট্রল ও অকটেন উৎপাদন করা হয়। কিন্তু মোট জ্বালানির সিংহভাগ তথা ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, জেট অয়েল ও কেরোসিন আমদানি করতে হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৩ লাখ ৯৩ হাজার টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছিল। আর গত বছর এ আমদানির পরিমাণ ৫৫ লাখ টন ছাড়িয়েছে।
এসব জ্বালানি তেল দুটি প্রক্রিয়ায় আমদানি করা হয়। এর মধ্যে মোট জ্বালানি তেলের অর্ধেক আমদানি করা হয় জিটুজি ভিত্তিতে। আর বাকি অর্ধেক তেল আমদানি করা হয় উন্মুক্ত দরপত্রের (ওপেন টেন্ডার) মাধ্যমে। বর্তমানে সৌদি আরব ও আবুধাবি থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হচ্ছে। আর পরিশোধিত তেল সরবরাহ করছে বিভিন্ন দেশের ১৩টি কোম্পানি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চলতি বছরের জুন-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ ৬০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে চায় বিপিসি। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপনও দিয়েছিল সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১৬ মে ছিল দরপত্র জমাদানের শেষ তারিখ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি তেল সরবরাহের ইচ্ছা প্রকাশ করে আবেদন করেছে।
এর মধ্যে চীনের সিনপেকের বাণিজ্যিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক, নেদারল্যান্ডসের ভিটোল, সিঙ্গাপুরের বহুজাতিক কোম্পানি ট্রাফিগুরা ও সুইজারল্যান্ডের গ্লেনকোর উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে জেট ফুয়েল ও গ্যাস অয়েলের জন্য সর্বনিম্ন দর প্রস্তাব করেছে ইউনিপেক। আর ফুয়েল অয়েলের জন্য সবচেয়ে কম দর প্রস্তাব করেছে ভিটোল। চলতি মাসের শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, ইউনিপেক প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে প্রিমিয়াম হিসেবে ২ দশমিক ২৭ থেকে ২ দশমিক ৪৭ ডলার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে প্রতি ব্যারেলের বিপরীতে প্রিমিয়াম দেয়া হচ্ছে ২ দশমিক ২০ ডলার। এক্ষেত্রে অন্য কোম্পানিগুলো ২ দশমিক ৪৭ থেকে ৪ দশমিক ৬৫ ডলার পর্যন্ত প্রস্তাব দিয়েছে। আর ফুয়েল অয়েলের জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ২৯ দশমিক ৭৩ ডলার প্রস্তাব করেছে ভিটোল। বর্তমানে এ সংস্থার কাছ থেকে ১৫ দশমিক ৮০ ডলার দরে জ্বালানি তেল কেনার চুক্তি রয়েছে বিপিসির। এছাড়া এ ধরনের জ্বালানি তেলের জন্য অন্য কোম্পানিগুলো ৪১ দশমিক ২২ থেকে ৬৭ দশমিক ৮০ ডলার পর্যন্ত প্রস্তাব দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, জ্বালানি তেল সরবরাহে ১১টি বহুজাতিক কোম্পানির দেয়া প্রস্তাবে বিদ্যমান দামের চেয়ে বেশি দাম হাঁকা হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবকারী কোম্পানি ইউনিপেক কিংবা ভিটোলের দরও বিদ্যমান দরের চেয়ে বেশি। ফলে এসব কোম্পানির যার সঙ্গেই বিপিসি চুক্তি করুক না কেন, আগের চেয়ে বেশি দামেই তাকে জ্বালানি তেল কিনতে হবে।
এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও প্ল্যানিং) এসএম মোজাম্মেল হক বলেন, ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করেই চুক্তি করা হবে। তবে বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে তেল কেনা হচ্ছে, তাদের সঙ্গেও চুক্তি নবায়ন হতে পারে।
Posted ১২:২০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta