কক্সবাংলা ডটকম(১৩ জুন) :: গত দেড় বছর ধরে অব্যাহতভাবে কমছে রেমিটেন্স প্রবাহ। এর ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি নির্ধারকরা। সরকারও এ নিয়ে বেশ চিন্তিত। অবশ্য গেল কয়েক মাস ধরে রেমিটেন্স বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না।
৮ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছেন, ‘২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৮১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ হাজার ৭৩৫ টাকা কম।’
রেমিটেন্স সংক্রান্ত পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকও বলছে, অফিসিয়াল চ্যানেলে হয়রানি ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার কম থাকার কারণে অনেকেই অবৈধ হুন্ডিতে উৎসাহিত হচ্ছেন। আর হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় রেমিটেন্স আসা কমেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। পরিস্থিতি বুঝতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ঘুরে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া প্রবাসী আয় কমার আরেকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কমার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীদের বেতন ও মজুরিও কমেছে।’
জানা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠালে ডলারের বিপরীতে ৭৮ টাকা পাওয়া যায়। অন্যদিকে হুন্ডিতে পাঠালে মিলছে ৮৫ টাকারও বেশি। এজন্যই প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেসব রেমিটেন্স আসছে, সেগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে হুন্ডি।
রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার জন্য প্রবাসীদের আয় কমে যাওয়া ও ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান কমাকেও দায়ী করা হচ্ছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়াও এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কেউ কেউ রেমিটেন্স কমার পেছনে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করছেন ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘রেমিটেন্স কমার পেছনে বিভিন্ন দেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি অনেকটা দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরোর দাম কমে গেছে। এমনকি মালয়েশিয়ান রিংগিত ও সিঙ্গাপুরি ডলারের মূল্যমানও কমে গেছে। এর ফলে ওইসব দেশের শ্রমিকদের আয়ও কমে গেছে।’
দেশে রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে। অথচ এই দেশগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের অর্থনীতিও নাজুক।
প্রসঙ্গত, প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা প্রথম দেখা দিয়েছিল ২০১৩ সালে। আগের বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি ঘটলেও ওই বছর রেমিটেন্স কমে যায়। ২০১৩ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার পাঠান, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল।
অবশ্য চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে এসে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে রেমিটেন্স প্রবাহ। সদ্য গত মে মাসে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এই অংক বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। আসন্ন ঈদ সামনে রেখে এখন আরও বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। সে কারণে চলতি জুন মাসে রেমিটেন্স আরও বাড়বে।’
Posted ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta