কক্সবাংলা ডটকম(১০ জুলাই) :: বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ১১ জুলাই মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে এবারের বৈঠকে পোশাক শিল্প মূল্যায়ন-সংক্রান্ত চুক্তি সাসটেইনেবল কম্প্যাক্ট বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য এবং ইউরোপে থাকা বাংলাদেশী শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চাপে থাকবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইইউ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১১ জুলাই ব্রাসেলসে ইইউর সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে যোগ দিতে এরই মধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন ঢাকাস্থ ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়িদু।
ইইউর পক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন যৌথ কমিশনের সহসভাপতি ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউগো আসটুটো। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের পক্ষে সভাপতিত্ব করবেন যৌথ কমিশনের সহসভাপতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম।
জানা যায়, ২০০১ সালে সই করা ‘কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট অন পার্টনারশিপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ চুক্তির আওতায় প্রতি বছর বাংলাদেশ ও ইইউর যৌথ কমিশনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার এবারের সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। এর পরের দিন বাণিজ্য-বিষয়ক সাব-গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাণিজ্য-বিষয়ক সাব-গ্রুপের বৈঠকে সুশাসন, মানবাধিকার, অভিবাসন, বাণিজ্য ও অর্থনীতি এবং উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।
সূত্র জানায়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী প্রায় ৯৩ হাজার বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সময়সীমা বেঁধে দিতে চায় ইইউ। এ-সংক্রান্ত একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপিতে সময়সীমা প্রস্তাব করেছে ইইউ। আর এ নিয়ে পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা।
এবারের বৈঠকে ইইউ’কে শরণার্থী প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া প্রস্তাব করবে ঢাকা। এছাড়া বৈঠকে গুরুত্ব পাবে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপের বাজারে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি)। সম্প্রতি ইইউ বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকার নিয়ে তাদের মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
মূল্যায়নের প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে পোশাক খাত। এতে জনপ্রতি কার্বন নিঃসরণ, শিল্পবর্জ্যের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত নগরায়ণ, বায়ুদূষণ, চিংড়ি চাষের প্রভাবে মাটির রাসায়নিক গঠনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব, সর্বজনীন মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিনিরাপত্তা, বিচার ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ইইউ।
স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার ও লিঙ্গবৈষম্য-সংক্রান্ত অধিকারও বাংলাদেশে ভঙ্গ হচ্ছে বলে জিএসপি সুবিধার মধ্যবর্তী মূল্যায়নের প্রাথমিক ফলাফলে দাবি করেছে ইইউ। এ নিয়ে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করার হুমকি দিয়েছে ইইউ। আর সেসঙ্গে রয়েছে সাসটেইনেবল কম্প্যাক্ট বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সাসটেইনেবল কম্প্যাক্ট ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন এ দুটো ইস্যু নিয়ে যৌথ কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশকে চাপ দেবে ইইউ। তবে এর প্রস্তুতি বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিয়েছে।
জুনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বৈঠকে বাংলাদেশ তাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধন, বিধি বাস্তবায়ন এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার প্রক্রিয়া সহজীকরণের বিষয়ে বলে এসেছে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ। ফলে বৈঠকেও বাংলাদেশ একই সময় চাইবে।
শরণার্থী প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। আর বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন এবং নীতিমালা অনুসরণ করেই তাদের ফেরানো হবে। সেখানে সবার আগে ওই ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ব্যাপক যাচাই-বাছাই (ভেরিফিকেশন) করতে চায় ঢাকা। এ কাজে যেটুকু সময় প্রয়োজন, তা-ই নিতে চায় বাংলাদেশ। এতে কোনো টাইম ফ্রেম বা সময়সীমা বেঁধে দেয়া সমীচীন হবে না।
এবারের বৈঠকে বাংলাদেশ-ইইউর মধ্যে সম্পর্কের নতুন কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্লু ইকোনমি শীর্ষক কারিগরি সহযোগিতা।
এর মধ্যে সমুদ্র থেকে উত্পাদিত লবণসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর সংরক্ষণ, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার, মেরিন বায়োটেকনোলজি এবং সমুদ্র থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও উপকূল সুরক্ষা। এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসবে।
Posted ২:০৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১০ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta