কক্সবাংলা ডটকম(৫ জুলাই) :: ভারতে নতুন গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) প্রবর্তনের জের ধরে শ্লথগতিতে পড়েছে স্থলপথে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য। ভারতের শুল্কস্টেশনগুলোয় বহুস্তরবিশিষ্ট জিএসটি নিরূপণে বিশেষ সফটওয়্যার সংযোজনের কারণে সে দেশের ব্যবসায়ীরা যথাসময়ে শিপিং বিল ও বিল অব এন্ট্রি পাচ্ছেন না। এতে করে দুই দেশের স্থলবন্দরগুলোয় পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারে বিলম্ব হচ্ছে।
ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ে বহুধাবিভক্ত কর ব্যবস্থাকে এক সুতোয় গাঁথতে সে দেশের সরকার জিএসটি প্রবর্তন করেছে। সর্বাত্মক ও গন্তব্যনিবিষ্ট বলে অভিহিত জিএসটি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। বহুস্তরবিশিষ্ট জিএসটি হার নিরূপণে ভারতের শুল্কস্টেশনগুলোয় বিশেষ সফটওয়্যার সংযোজন করা হয়েছে। এ কারণে দেশটির আমদানি ও রফতানিকারকরা শুল্ক আনুষ্ঠানিকতা সারতে বেগ পাচ্ছেন।
জিএসটি প্রবর্তনের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত পয়েন্টগুলোয় পণ্য পারাপারে শ্লথগতি নেমে এসেছে। পেট্রাপোল, গোজাডাঙ্গা, চেংড়াবান্ধা, মাহাদিপুরসহ ভারতের বিভিন্ন শুল্কস্টেশনে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি সীমান্ত পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু শুল্ক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নে বিলম্ব হওয়ায় যথাসময়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারছে না এসব ট্রাক।
ভারতের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জিএসটি ব্যবস্থা প্রবর্তন হলেও ভারতের শুল্কস্টেশনগুলোর অনলাইন অবকাঠামো তার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। এ কারণে স্থলপথে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। জোড়াতালি ব্যবস্থায় জিএসটি কার্যকর করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভুল হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও অনলাইন ব্যবস্থা ছেড়ে আগের অ্যানালগ পদ্ধতিতে শুল্ক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হচ্ছে।
ক্যালকাটা কাস্টমস হাউজ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সুজিত চক্রবর্তী পিটিআইকে বলেছেন, জিএসটি অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। কাজ চালিয়ে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ কারণে আন্তঃসীমান্ত ট্রাক পারাপার খুব ধীর হয়ে পড়েছে। পেট্রাপোলসহ বিভিন্ন স্থলসীমান্তে তাই ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।
সুজিত চক্রবর্তী আরো বলেন, ১ জুলাই থেকে আমরা সমস্যার মোকাবেলা করছি। শিপিং বিল ও বিল অব এন্ট্রি পেতে চেষ্টা করছি আমরা, কিন্তু অনেক ভুল হচ্ছে। সবমিলে ছাড়পত্র পেতে দেরি হচ্ছে। এসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনাও আমরা পাইনি।
অবশ্য পেট্রাপোল শুল্কস্টেশনের এ শ্লথগতির কোনো প্রভাব সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে এখনো পড়েনি বলে জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমসের উপকমিশনার মারুফুর রহমান। তিনি বলেন, জিএসটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার আশঙ্কা নেই। প্রতিদিন বেনাপোল দিয়ে গড়ে ৩৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি এবং ১৫০ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়ে থাকে, যা অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেট্রাপোল শুল্কস্টেশনের ট্রাক টার্মিনালে বিপুল সংখ্যক গাড়ি রয়েছে। এ কারণে জিএসটিজনিত জটের প্রভাব এখনো এপাশে পড়েনি। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক জামাল হোসেন জানান, জিএসটির কারণে ভারতের শুল্কস্টেশনে শ্লথগতি অব্যাহত থাকলে পরবর্তীতে বাংলাদেশে প্রভাব পড়তে পারে।
ভারতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেট্রাপোল হয়ে দৈনিক গড়ে ৩৫০টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও জিএসটি প্রবর্তনের পর সংখ্যাটি দৈনিক ১০০ ট্রাকে নেমে এসেছে। জিএসটির কারণে পেট্রাপোলের চেয়ে গোজাডাঙ্গা স্থলসীমান্তে বেশি সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তের ওপারে ভারতের এ শুল্কস্টেশনেও ফল, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পচনশীল পণ্যবাহী বিপুল সংখ্যক ট্রাক আটকা পড়েছে বলে সুজিত চক্রবর্তী জানিয়েছেন।
জিএসটি প্রবর্তনের কারণে সৃষ্ট জটিলতার প্রভাব পড়েছে লালমনিরহাটের বুড়িমারীর ওপাশে চেংড়াবান্ধা স্থলবন্দরেও।
বুড়িমারী বন্দরসূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে ২ জুলাই থেকে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও গত তিনদিনে ভারত থেকে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। তবে এ কয়দিনে ভুটান থেকে পণ্য আমদানি অব্যাহত রয়েছে। ভুটান থেকে ২ জুলাই ৫২ ট্রাক, ৩ জুলাই ১৭ ও ৪ জুলাই ৩২ ট্রাক পাথর আমদানি হয়েছে। উল্লিখিত দিনগুলোয় বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে ৬৫ ট্রাক, ৩ ও ৩২ ট্রাক জুস ও ঝুট কাপড় রফতানি হয়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে দৈনিক দুই থেকে তিনশ ট্রাক পণ্য আমদানি-রফতানি হলেও ঈদের পর ভারত থেকে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।
পেট্রাপোল, গোজাডাঙ্গা ও চেংড়াবান্ধার মতো শ্লথগতিতে পড়েছে ভারতের মাহাদিপুর শুল্কস্টেশন। সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের ওপাশের শুল্কস্টেশনটিতে ২ জুলাই থেকে অপেক্ষমাণ ট্রাকের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টারস কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, আটকে থাকা ট্রাকগুলোতে ফলমূল, পাথর, পেঁয়াজ, মসলাসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। দ্রুত শুল্কস্টেশন থেকে ছাড় না পেলে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যাবে। মাহাদিপুর শুল্কস্টেশনের অচলাবস্থায় একদিনে ১০ কোটি রুপি ক্ষতি হচ্ছে বলে একজন কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন।
Posted ১:০৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৫ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta