কক্সবাংলা রিপোর্ট(৭ জানুয়ারী) :: কোনো দেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বা শরণার্থীদের আগের স্থানে একই ধরনের অবকাঠামোসহ পুনর্বাসন করতে হয়। শরণার্থী প্রত্যাবাসনে এটিই আন্তর্জাতিক রীতি। কিন্তু মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটছে।
বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে ফিরে গিয়ে মিয়ানমারেও ক্যাম্পে অবস্থান করতে হবে তাদের। তবে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের যাতে দীর্ঘদিন ক্যাম্পে থাকতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। তাই ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকেই বিষয়টি তুলবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জানুয়ারি। বৈঠকে গত ১৯ ডিসেম্বর সই করা টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী একটি ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্ট সই করবে দুই দেশ।
‘এগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ শীর্ষক ওই চুক্তি অনুযায়ী ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্ট করবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। আর মূল চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের অস্থায়ী ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হবে।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। তারা প্রতি চার মাসে সরকারের কাছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরবে। মূল চুক্তির তারিখ থেকে দুই মাসের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রত্যাবাসন শুরু করবে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, কেবল স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদেরই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। সেখানে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারের নাগরিক হতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। কোনো রোহিঙ্গা নাগরিককেই জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যাবে না।
প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের শর্ত হলো, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের অবশ্যই মিয়ানমারের বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে ৯ অক্টোবরের পর যে তারা মিয়ানমার ত্যাগ করেছে, তার প্রমাণও দিতে হবে।
এদিকে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রীর বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, ২২ জানুয়ারি থেকে দেশটি বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার জন্য এবং তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তাদের প্রতিনিধিরা প্রস্তুত।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে না পারলেও তা খুব একটা দেরি হবে না। আর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে দুই দেশই আগ্রহী। ফলে খুব বেশি হলেও ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমার বাংলাদেশকে একটি ফর্ম পাঠিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ফর্মটি রোহিঙ্গারা পূরণ করার পর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ফের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে। তবে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ একটি ফর্মও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত যায়নি বলেও অভিযোগ করেছে দেশটি।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করার পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
Posted ২:১৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta