আব্দুল হামিদ,নাইক্ষ্যংছড়ি(১৩ আগষ্ট) :: বান্দরবানের বহুল আলোচিত রাবার শিল্প নগরীর হিসাবে খ্যাত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একটি বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন বাইশারী। ভৌগোলিক দিক দিয়ে তিন পাশেই রয়েছে কক্সবাজার জেলা। বাইশারীবাসী শান্তপ্রিয় হলেও পার্শ্ববর্তী বহিরাগত লোকজন এসে প্রায় সময়ই অপরাধ, প্রবণতা, সন্ত্রাসীর কার্যক্রম চালাতে বারবার হানা দেয় বাইশারীতে।
বাইশারীর পাশে রয়েছে ঈদগড় ইউনিয়নের গহীন বন ও পাহাড়, ঈদগড় রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেখানে রয়েছে দীর্ঘকাল থেকে দেশীয় তৈরী অস্ত্রের কারখানা। বহুবার র্যাব-পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলা বারুদ ও অস্ত্র তৈরী কারিগরদের গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়।
উক্ত এলাকা থেকে দেশীয় তৈরী স্বস্তা দামে অস্ত্র ক্রয় করে ঢুকে পড়ে সন্ত্রাসীরা বাইশারীতে। প্রতিনিয়ত রাবার বাগান ম্যানেজারদের নিকট চাঁদার দাবীতে হুমকি, অপহরণ, মুক্তিপন বানিজ্য, চুরি, ডাকাতিতে অস্বস্তিতে এলাকার কর্মজীবি সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
তবে বিগত এক বছর যাবত আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি অনেক উন্নতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সুশীল সমাজের লোকজন। তুলনামূলকভাবে এসআই মুসা দায়িত্ব পালনকালে ভাল রয়েছেন বলে ও জানালেন অনেক প্রবীন ব্যক্তিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসের ১ম সপ্তাহে বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যোগদান করেন বর্তমান ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবু মুসা। বিগত একটি বছর উল্লেখযোগ্য তেমন কোন ঘটনার জন্ম হয় নাই। তবে এসআই মুসাকে অনেকে আবার ফায়ার মুসাও বলে থাকে। তিনি সন্ত্রাসীদের ধরতে গিয়ে প্রায় সময়ই ফায়ার করে থাকেন। তাছাড়া বিগত বছরে জেলায় সবচেয়ে বেশি ফায়ার করেছেন তিনি। যার কারণে ফায়ার মুসা হিসেবে খ্যাত।
এসআই মোঃ আবু মুসা যোগদানের তিন মাস আগে বাইশারী বাজারে শক্তিশালী বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। এসময় এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। এছাড়া পরপর ভান্তে হত্যা, আওয়ামীলীগ নেতা মংশৈলুং মার্মা হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপন বানিজ্য সহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। একটার পর একটা ঘটনা লেগেই ছিল। কিন্তু বিগত ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে এসআই মুসা যোগদানের পর থেকে আস্তে আস্তে কমে যায় সন্ত্রাসীর কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে যায় খুন-খারাবি, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মুক্তিপন বানিজ্য।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বিগত এক বছরে খুন, ডাকাতি, অপহরণের মত বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে স্থানীয়রা অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে কিছু কিছু অনাকাঙ্খিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পেয়েছে বাইশারীবাসী। এছাড়া বিগত এক বছরে দু’একটি মামলা ছাড়া কোন ধরনের মামলা ও রেকর্ড হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান।
বর্তমানে আবারো এসআই আবু মুসা এক বছরের জন্য ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসছে। তবে সন্ত্রাসীরা রয়েছে আতংকে। দারোগা মুসা পুনরায় দায়িত্ব পাবার খবরটি মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে অনেক সন্ত্রাসীদের বলতে শোনা যায় আবারো অতংক। আবার সাধারণ মানুষেরা বলেন, আরো একটি বছর স্বস্তিতে থাকব। গতকাল এই প্রতিবেদক সরজমিনে গিয়ে এলাকার সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বর্তমান ইনচার্জ মোঃ আবু মুসা বলেন, এই পর্যন্ত এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তার। পুলিশ সদস্যদের রাতের বেলা ঘুম হারাম করতে হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ টহলের পাশাপাশি ছয়টি স্থানে রাতের বেলায় পুলিশ ডিউটি বসানো হয়েছে। যেমন- চাকপাড়া, করলিয়ামুরা, ধৈয়াবাপের পাড়া, বটতলী বাজার, ব্রীকফিল্ড ও বাইশারী বাজার এলাকা। এছাড়া তিনি পুলিশের পাশাপাশি জনসাধারণকে রাত জেগে পাহারা বসিয়ে সম্ভাব্য স্থানে অভিযান ও পরিচালনা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, গত ২০১৬ সালে যোগদানের পর পরই এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, হেডম্যান, কারবারি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে পাড়া মহল্লা ও উপজাতীয় পল্লীতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সভা, সমাবেশ করেছেন। তাছাড়া সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম বন্ধে পাড়ায় মহল্লায় পুলিশের পাশাপাশি এলাকাবাসীদের পালাক্রমে ডিউটির ব্যবস্থাও করেছেন। সব মিলিয়ে কিভাবে শান্তি ফিরিয়ে আসে সেই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এবং তিনি সফল ও হয়েছেন বলে জানান।
আগামী একটি বছরের জন্য পুনরায় ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে তার কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি মৃদু হেসে বলেন, চাকরীটা এমনই, সিনিয়র যেখানে আদেশ দিবে সেখানেই যেতে হবে। আমি সিনিয়রের আদেশ মানতে বাধ্য। পাশাপাশি ইনচার্জ হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পাওয়ায় এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে বিগত বছরের চেয়ে কিভাবে আরো আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে সদা চেষ্টা অব্যাহত রাখব।
ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, এসআই আবু মুসার বিচক্ষণতায় ও কলা কৌশলে অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমে গেছে। পুনরায় ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় বাইশারীবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও বাইশারী বাজার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর বলেন, পুনরায় ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। বিগত এক বছরে তার কার্যক্রম সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আপোষহীন মনোভাব থাকায় এলাকার লোকজন শান্তিতে বসবাস করেছে, এবং এলাকায় শান্তির সুবাতাস বইছে। আবারো নতুনভাবে তিনি দায়িত্ব পাওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানান।
এ বিষয়ে ওসি নাইক্ষ্যংছড়ি এসএসএম তৌহিদ কবির বলেন, তার কর্মদক্ষতা কারণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আবারো স্বপদে বহাল রেখেছেন।
এ বিষয়ে এএসপি সার্কেল (লামা) আব্দুস সালাম জানান, বিগত এক বছরের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করায় আবারো ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আশা করি এবারো তিনি ভাল করবেন।
Posted ২:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৩ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta