কক্সবাংলা ডটকম(৪ জুন) :: ভ্যাটের ১৫ শতাংশ একক হার এবং কোনো কোনো পণ্যে সম্পূরক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী ১ জুলাই থেকে বাজেট কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রড, সিমেন্ট, ঢেউটিন, প্রিন্টিং প্লেটসহ মসলাজাতীয় বেশকিছু পণ্যের দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে।
বাজেট ঘোষণার পর সবচেয়ে বেশি জটিলতায় পড়েছে ইস্পাতপণ্য ও সিমেন্ট। অবকাঠামো নির্মাণের মূল উপাদান রড ও সিমেন্ট বিক্রিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। একদিনের ব্যবধানে রডের দাম বেড়েছে টনে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা। বস্তাপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে সিমেন্ট।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজেটের আগে ৪০ গ্রেডের প্রতি টন রডের দাম ছিল ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে তা ৪২ হাজার থেকে সাড়ে ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬০ গ্রেডের প্রতি টন রডের দাম ছিল ৪৮ হাজার টাকা। বাজেট ঘোষণার পর একই রড বিক্রি হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ৫০০ টাকায়।
বায়েজিদ স্টিলের বিক্রয় বিভাগের কর্মকর্তা মো. রাশেদ বলেন, গতকাল রডের বাজারে লেনদেন ছিল খুবই কম। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট আরোপের ফলে পণ্য বিক্রিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া গেলে পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
একই অবস্থা আরেক নির্মাণ উপকরণ সিমেন্টেরও। বাজেট প্রস্তাবের আগে খুচরা বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) সিমেন্ট ৪১০-৪২০ টাকায় পাওয়া যেত। একই সিমেন্ট গতকাল বস্তাপ্রতি ৪২০-৪২৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে। মিল মালিকরা আগে কমিশন ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে ৩৭০-৩৯০ টাকার মধ্যে প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি করতেন। বাজেট ঘোষণার পর দুদিন ছুটি থাকায় মিল পর্যায়ে পণ্যটির দাম এখনো বাড়ানো হয়নি।
দেশের অন্যতম সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রডের ওপর নির্ধারিত প্যাকেজ ভ্যাট তুলে দেয়া হলে পণ্যটির দাম বাড়বে। এতে সিমেন্টের বাজারও অস্থির হবে। তবে দেশীয় চাহিদার তুলনায় সিমেন্টের উৎপাদন বেশি হওয়ায় রডের মতো অতটা হয়তো বাড়বে না।
বাজেটে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণায় বেড়ে গেছে প্রিন্টিং প্লেটের দাম। আগের চেয়ে ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে একেকটি প্রিন্টিং প্লেট। বাজেটের আগে যে প্রিন্টিং প্লেট ১০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০৫ টাকা। এছাড়া ১১৪ টাকার প্লেট বিক্রি হচ্ছে ১২০ ও ১৫০ টাকার প্লেট ১৫৫ টাকায়।
বর্ষা মৌসুম হওয়ায় বর্তমানে ঢেউটিনের বাজারে বিক্রয় মন্দা চলছে। তার পরও বাজেটের প্রভাবে দাম বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীটির। বাজেটের পর সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও গতকাল বানপ্রতি (৭২ ফুট) সর্বোচ্চ ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ঢেউটিন। তবে মিল মালিকরা দাম বাড়ালে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে দাম আরো বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মেসার্স মনোয়ারা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. শাহাদাত্ হোসেন বলেন, শুক্রবার বাজারে দাম তেমন না বাড়লেও গতকাল কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে ঢেউটিন। তবে বর্ষা মৌসুমের কারণে পণ্যটির চাহিদা কম থাকায় বাজেটের প্রকৃত প্রভাব এখনো পড়েনি।
আমদানিকৃত কাপড়ের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে বেশি দামে পোশাক বিক্রি হচ্ছে বলে বাজার অনুসন্ধানে দেখা গেছে।
বাজেটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মসলাজাতীয় পণ্যের বাজারেও। মসলাজাতীয় পণ্যের সম্পূরক শুল্ক দ্বিগুণ করার একদিনের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জিরার বুকিং দর ও স্থানীয় বাজারে মসলাটির চাহিদা স্বাভাবিক রয়েছে।
ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গতকাল সব ধরনের জিরার দামই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি কেজি ভারতীয় জিরা (সাধারণ) এদিন বিক্রি হয় ৩৪৫-৩৫০ টাকায়। অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার দিনও একই পণ্য বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৩২৫-৩৩০ টাকায়।
বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সিরিয়া ও ইরান থেকে আমদানি করা জিরাও। বাজেটের আগে সিরিয়া থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছিল ৩৫৫ টাকায়। বাজেট ঘোষণার পর গতকাল তা বিক্রি হয় ৩৭০-৩৭৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ১৫ টাকা বেড়ে ভালো মানের ইরানি জিরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৬৫-৩৭০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী আবু জাফর বলেন, সাধারণত মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের বুকিং দরের ওপর। দেশের চাহিদা ও আমদানির সঙ্গেও বাজার ওঠানামা করে। আগামী বাজেটে মসলাজাতীয় পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব রাখায় আমদানিকারকরা একদিনেই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও বাজারে স্বাভাবিক রয়েছে পণ্যটির চাহিদা ও সরবরাহ।
বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতার বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, বাজেট বাস্তবায়নের আগেই দাম বাড়ানোর এ প্রবণতা ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার কৌশল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু এ প্রসঙ্গে বলেন, মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থা বাজারে দ্রব্যমূল্যের ওপর নজরদারি করে। রমজান উপলক্ষে এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। নজরদারিতে যদি বাজেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান প্রয়োগ করা হবে। প্রমাণসাপেক্ষে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়ার পরিকল্পনাও আছে আমাদের।
Posted ২:১৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৪ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy