কক্সবাংলা ডটকম(২১ জুন) :: ঘোষণার পর থেকেই প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। সমালোচনা চলছে সংসদের ভেতরেও। প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে আরোপিত অনেক বিষয় প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে খোদ সরকারি দলের মধ্য থেকে। এ অবস্থায় বাজেটে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে।
এনবিআর সূত্র বলছে, ব্যাংক আমানতে বর্ধিত আবগারি শুল্কে শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন আসছে। কমানো হতে পারে বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাটহার। ভ্যাট অব্যাহতির আওতাও আরো বাড়তে পারে। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারসহ যেসব কৃষিযন্ত্রে নতুন করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব করা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের কথা ভাবা হচ্ছে। ভ্যাট অব্যাহিতর সুবিধা পেতে পারে সোলার প্যানেলও। তবে সোলার প্যানেল আমদানিতে প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উত্সাহিত করতে প্রস্তাবিত এ শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল থেকে।
বাজেট ঘোষণার আগে থেকেই সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ভ্যাট আইন। অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবের পরও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। সংসদে ও সংসদের বাইরে ভ্যাট আইন নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানেও পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। সে আলোকে আইনের বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছে এনবিআর।
রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মতে, নতুন ভ্যাট আইন সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাস্তবায়ন করলেও ভ্যাটহার কমানো, একক হার না রেখে পণ্য ও সেবাভেদে একাধিক হার নির্ধারণ, ট্যারিফ ভ্যালু অব্যাহত রাখা এবং ভ্যাট অনলাইন পদ্ধতি নির্ধারিত সময়ে কার্যকর না করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, বাজেট ঘোষণার পর এ বিষয়ে নানা কথাবার্তার সুযোগ রয়েছে। জাতীয় সংসদে জনপ্রতিনিধিদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেসব পরিবর্তনের নির্দেশনা আসবে, চূড়ান্তভাবে তা কার্যকর করা হবে।
১৯৯১ সালের আইনকে সময় অনুপযোগী ও জটিল উল্লেখ করে ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন পাস করে সরকার। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আগামী অর্থবছর থেকেই তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। এক হাজারের বেশি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ঘোষণা এলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ হারে একক ভ্যাটহার আরোপ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিলে ভোক্তা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ নিয়ে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। ট্যারিফ ভ্যালুতে ভ্যাট পরিশোধ করা এলপিজিতে একক ভ্যাট আরোপিত হওয়ায় এর দাম ১৩-১৪ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা হলেও তাতে রিবেট পদ্ধতি রাখার ফলে চূড়ান্তভাবে এর খড়গ ব্যবসায়ীদের ওপর পড়বে না বলে এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হলেও তাতে দ্বিমত ব্যবসায়ীদের। তারা বলেছেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যেভাবে হিসাব রাখতে হবে, এ কাঠামো হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ীর রয়েছে। ফলে তারা ভ্যাট রিবেট সুবিধা পাবেন না। ১৫ শতাংশ ভ্যাটহারের ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যাতে ক্রেতা কমে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভ্যাট আইন সংশোধনসহ বাজেটে একগুচ্ছ পরিবর্তনের সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের কাছে জমাও দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এসব সুপারিশ আমলে নিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাজেটের সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো ভ্যাট আইনটি স্পষ্ট না হওয়া। ব্যবসায়ীরা এখনো এ আইন নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন। ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে রাজস্ব আদায় করতে হবে। আমরা কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। এগুলো আমলে নিয়েই বাজেট পাস হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
দেশে সৌরবিদ্যুৎকে উত্সাহিত করতে সোলার প্যানেল আমদানিতে এতদিন কর অব্যাহতি দিয়ে আসছিল এনবিআর। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সোলার প্যানেল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে ভোক্তা পর্যায়ে। এতে সৌরবিদ্যুতের ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। সোলার প্যানেলের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। একই দাবি উঠেছে সংসদেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোলার প্যানেলে প্রস্তাবিত ভ্যাট প্রত্যাহার হতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
সোলার প্যানেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, সৌরবিদ্যুৎকে ভবিষ্যতের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে গড়ে তুলতে বড় উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন। তবে হঠাৎ করেই সোলার প্যানেল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় এটিভি, এআইটিসহ ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর যুক্ত হয়েছে। এটি হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে দাবি জানিয়েছি। আশা করছি, বাজেট পাসের আগেই সোলার প্যানেলের ওপর সব ধরনের কর প্রত্যাহার হবে।
জনপ্রিয় কৃষিযন্ত্র ট্রাক্টরে বর্তমানে শুধু ১ শতাংশ কাস্টম ডিউটি (সিডি) ও ৫ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) ধার্য আছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সিডি একই রেখে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৩ শতাংশ অগ্রিম কর ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর থেকে কৃষিযন্ত্রটিতে ১৯ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক-কর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ব্যাহত হতে পারে, এ আশঙ্কায় এরই মধ্যে বর্ধিত শুল্ক-কর প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। দাবির বিষয়টি বিবেচনায় ট্রাক্টরের শুল্ক-করে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখতে প্রকল্পের মাধ্যমে পাওয়ার টিলার, হারভেস্টার ও রাইস রিপার মেশিন ক্রয়ে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছে সরকার। ভর্তুকির এসব কৃষি যন্ত্রপাতিতেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এসব কৃষিযন্ত্রের ওপর থেকেও প্রস্তাবিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর বিবেচনায় রয়েছে বলেও জানা গেছে।
শীর্ষস্থানীয় কৃষিযন্ত্র ও মেশিনারি আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দ্য মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল বলেন, ১৫ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট আরোপের ফলে স্বাভাবিকভাবেই এসব যন্ত্রের দাম বাড়বে, যা কৃষকের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই কৃষিযন্ত্রের ওপর থেকে প্রস্তাবিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি আমরা। আশা করি, তা বিবেচনায় নেয়া হবে।
Posted ৩:২০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta