কক্সবাংলা ডটকম(৬ জুন) :: আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ বাড়ছে। এ নিয়ে কথা উঠছে সংসদেও। বাজেটে ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের একজন হুইপ। আবগারি শুল্কের পাশাপাশি সোলার প্যানেল আমদানির ওপর প্রস্তাবিত শুল্কও প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
একই দাবি তুলেছেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ীরা। চা আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে তা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএ)। অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনও বাজেট নিয়ে তাদের অসন্তোষের কথা এরই মধ্যে ব্যক্ত করেছে।
১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি। আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে আর্থিক লেনদেন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন ব্যাংকারসহ বিভিন্ন মহল। আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, এ আশঙ্কায় এবার জাতীয় সংসদে বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানালেন হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার।
সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের এ সংসদ সদস্য বলেন, আবগারি শুল্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের মানুষ ১ লাখ, ২ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখেন। এখন আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, আমানতের টাকা কেটে নেয়া হবে। তবে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা বলছি না। এটা যেন আগের অবস্থায় থাকে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করতে সোলার প্যানেল উত্পাদন, আমদানি বা সরবরাহ পর্যায়ে এতদিন কোনো ধরনের শুল্ক, কর বা ভ্যাট পরিশোধের প্রয়োজন হতো না। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সোলার প্যানেল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর ওপর রয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এতে সৌরবিদ্যুতের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এর ব্যবহারে মানুষ নিরুৎসাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা খাতসংশ্লিষ্টদের।
এ আশঙ্কা থেকে সোলার প্যানেল আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এ খাতের সংগঠন বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড
রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ)। ইডকলপিও ফোরাম, বাংলাদেশ সোলার এনার্জি সোসাইটি, সোলার মিনিগ্রিড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বিএসআরইএ আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে সোলার প্যানেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে ভোক্তাপর্যায়ে সৌরপণ্যের দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। এ সিদ্ধান্তের ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে ঘিরে সরকারের লক্ষ্য অর্জনও ব্যাহত হবে। শিল্পটি রক্ষায় তাই সোলার প্যানেল আমদানিতে শুল্কহার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ীদের মতোই সোলার প্যানেল আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার। সংসদ অধিবেশনে গতকাল তিনি এ দাবি জানান।
চা আমদানিতে বর্তমানে ট্যারিফ ভ্যালু চালু রয়েছে। অর্থাত্ যে দামেই চা আমদানি হোক না কেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ দাম ধরেই শুল্ক পরিশোধ করতে হয় আমদানিকারককে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রতি কেজি চায়ের ট্যারিফ ভিত্তি নির্ধারিত আছে ১ ডলার ৬০ সেন্ট। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২ ডলার ৫০ সেন্ট করা হয়েছে। প্রতি ডলার ৮০ টাকা ৫৭ পয়সা হিসাবে প্রতি কেজি চায়ের ভিত্তি ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ২০১ টাকা ৪৩ পয়সা।
এর সঙ্গে বিভিন্ন শুল্ক যুক্ত হয়ে প্রতি কেজি চায়ের আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে ৩৯৭ টাকা। চলতি বাজেটের ট্যারিফ ও শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী আমদানি মূল্য পড়ে ২৪৬ টাকা। শুল্ক ও ট্যারিফ ভ্যালু বৃদ্ধির ফলে প্রতি কেজি চায়ের দাম ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে চায়ের ট্যারিফ ও শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তাই বাতিলের দাবি জানিয়েছে চা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিটিটিএ। গতকাল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে চা আমদানিতে শুল্ক না বাড়ানো ও ট্যারিফ ভ্যালু ১ ডলার ৬০ সেন্টে রাখার প্রস্তাব করেছে তারা।
বিটিটিএ সভাপতি ও ইস্পাহানি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) শান্তনু বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, অস্বাভাবিক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাই পথে চা আসবে। এতে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে খাতটি। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা এ খাত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। তাই সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের পর্যায়ে থাকা চা আমদানিতে শুল্ক আগের মতো রেখে এর বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সেলফোন হ্যান্ডসেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে চোরাই পথে ডিভাইসটির প্রবেশ বাড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বর্ধিত এ শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)।
সংগঠনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, সরকার স্থানীয়ভাবে সেলফোন হ্যান্ডসেট উত্পাদন-সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এখন পর্যন্ত আমদানিনির্ভর হওয়ায় সেলফোন হ্যান্ডসেটে শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব উদ্বেগজনক। এতে বাজারে চোরাচালান উৎসাহিত হবে, সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বাড়বে ও অসম প্রতিযোগিতার ফলে বৈধ আমদানিকারকরা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না।
রফতানিতে ১ শতাংশ উেস কর নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ১ শতাংশ হারে উেস কর বাস্তবায়ন হলে রফতানিমুখী শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে, শিল্পের সক্ষমতা কমে যাবে। এ যুক্তিতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য উেস করহার দশমিক ২৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
Posted ২:৪৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta