
কক্সবাংলা ডটকম(১১ অক্টোবর) :: বাল্যবিবাহে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে অষ্টম।
ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এক যৌথ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৮ বছর হওয়ার আগে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে। এই বয়সের আগে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন ২৪ শতাংশ নারী।
১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিতদের প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ৪৭ শতাংশ। এখনো জীবদ্দশায় স্বামী বা জীবনসঙ্গীর দ্বারা ৭০ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার। স্নাতক ডিগ্রিধারী নারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
পুরুষের ১২ শতাংশ, নারী ২৯ শতাংশ। ফলে এখনো নারী অনিরাপদ। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ ধর্ষণের শিকার হন।
২০২০ সালের এক প্রতিবদন অনুযায়ী, প্রতি লাখ নারীর মধ্যে অন্তত ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৩৯০ জন কন্যাশিশু ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশে আজ ১১ অক্টোবর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘আমি কন্যাশিশু- স্বপ্নে গড়ি, সাহসে লড়ি, দেশের কল্যাণে কাজ করি’।
বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য দেশ প্রতিবছর ১১ অক্টোবর দিনটি পালন করে থাকে। ২০১২ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য বিশ্বজুড়ে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা।
এ ছাড়া শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ ও বলপূর্বক কিংবা বাল্যবিবাহ রোধ করতেও দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কন্যাশিশুরা এখনো নানা রকম সামাজিক ও কাঠামোগত বৈষম্যের শিকার। বাল্যবিবাহ, শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চনা তাদের উন্নয়নের পথে বড় বাধা।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনো প্রতি তিনজন মেয়ের একজন ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। তবে আশার কথা, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাল্যবিবাহের হার কিছুটা কমেছে এবং মেয়েদের স্কুলে ভর্তির হার বেড়েছে।
গত বুধবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ‘জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় সমাজ কল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘কন্যাশিশুদের অন্ধকারে রেখে একটি সুষ্ঠু সমাজ কাঠামো যেমন গড়ে তোলা সম্ভব নয়, তেমনি দেশকে আলোকিত করাও সম্ভব নয়।’
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি কন্যাশিশু সমাজ, রাষ্ট্র তথা পরিবার থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েই নারী হিসেবে বেড়ে ওঠে। কিন্তু কন্যাশিশুদের অন্ধকারে রেখে একটি সুষ্ঠু সমাজ কাঠামো যেমন গড়ে তোলা সম্ভব নয়, তেমনি দেশকে আলোকিত করাও সম্ভব নয়।’
উপদেষ্টা শারমীন বলেন, ‘কন্যাশিশুদের অগ্রগতিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলোর বিপরীতে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রকে কী কী করণীয় পালন করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
কন্যাশিশুরা এখন আর বোঝা নয়, বরং কন্যাশিশুরা প্রমাণ করেছে সুযোগ পেলে তারা দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠতে পারে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো জায়গায় যদি কোনো মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, সেই জায়গায় আমার মন্ত্রণালয়ের টিম পৌঁছে যাচ্ছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস কন্যা দিবসের বার্তায় বলেছেন, ‘পৃথিবী সংকটে জর্জরিত। জলবায়ু বিপর্যয় ত্বরান্বিত হচ্ছে। স্থানচ্যুতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রায়ই এতে মেয়েরা সর্বোচ্চ মূল্য দেয়। যখন সংকট দেখা দেয়, তখন যৌন সহিংসতা এবং মাতৃমৃত্যুর হার বেড়ে যায়। ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে বাল্যবিবাহ বিশ্ব গড়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি। মেয়েদের নিয়মিতভাবে তাদের জীবন গঠনকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি সর্বত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, মেয়েদের শক্তিকে স্বীকৃতি দিন এবং তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের দাবি মেনে চলুন। তাদের অধিকারকে অগ্রাধিকার দিন। তাদের সুযোগগুলোতে বিনিয়োগ করুন- কেবল সঠিক কারণেই নয়, বরং শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ সমাজের জন্যও এটি অপরিহার্য। প্রত্যেক মেয়ে, সর্বত্র, সমানতা, সুযোগ এবং মর্যাদার অধিকারী।
এই আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে আসুন আমরা মেয়েদের জন্য একটি উন্নত পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হই।’

Posted ১:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta