কক্সবাংলা ডটকম(১০ জানুয়ারি) :: ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতা ছেড়েছিল বিএনপি-জামাত জোট। কিন্তু ড: ইয়াজ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্বাবধায়ক সরকার ছিলো আসলে পুতুল সরকার। মূল ক্ষমতা ছিলো খালেদা-তারেকের হাতেই। ড: ইয়াজউদ্দিন খালেদা জিয়ার নির্দেশেই সব কাজ করতেন। সেই হিসেবে ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি।
আজ (১০ জানুয়ারি) বিএনপির ক্ষমতা হারানোর ১৪ বছর। ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নেয়া দলটির জন্য ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এক বিরাট পরীক্ষা।
বাস্তবিক কারণেই দলটি অস্তীত্বের সংকটে ভুগছে। বিএনপির এই পরিণতির জন্য দায়ী কে? বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা এব্যাপারে তাদের মতামত রেখেছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপি আজকের অবস্থানের জন্য যারা দায়ী, তাদের তালিকা উপস্থাপন করা হলো:-
১. তারেক জিয়া: অধিকাংশ বিএনপির নেতা-কর্মীই মনে করে, বিএনপির আজকের এই অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী তারেক জিয়া। তার দুর্নীতি, লাম্পট্য এবং অপরিনামদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারনেই বিএনপির এই হাল।
২. খালেদা জিয়া: বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না। অন্ধ পুত্র প্রেম, সন্তানের বাড়াবাড়ি এবং অপকর্মের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেননি। যার দায় নিতে হয়েছে গোটা দলকে।
৩. গিয়াস উদ্দিন আল মামুন: বিএনপির কোন পর্যায়ের নেতা না হয়েও সরকারের নীতি নির্ধারক হয়েছিলেন। টেন্ডার, নিয়োগ সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতেন। তার কারণেই বিএনপি একটি দুর্নীতিগ্রস্থ দলের পরিচয় পেয়েছে।
৪. হারিছ চৌধুরী: হারিছ চৌধুরী ছিলেন দুর্নীতি এবং অপকর্মের অন্যতম কারিগর। প্রশাসনে অবৈধ হস্তক্ষেপ, চাঁদাবাজির মাধ্যমে হারিছ চৌধুরী বিএনপিকে জনপ্রিয়তার তলানিতে নিয়ে যান।
৫. লুৎফুজ্জামান বাবর: বাবর ছিলেন তারেকের লাঠিয়াল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানী সহ বহু অপকর্মের হোতা। বিএনপির এই বিপর্যয়ের জন্য তাকেও দায়ী করা হয়।
৬. ড: ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ: অধ্যাপক ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে হটিয়ে ড: ইয়াজ উদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু ইয়াজ উদ্দিনের ব্যক্তিত্বহীন মোসাহেবী, ক্ষমতায় থাকার লোভের চরম মূল্য দিতে হয়েছে বিএনপিকে।
৭. মোখলেছুর রহমান চৌধুরী: ড. ইয়াজউদ্দিনের প্রেস সেক্রেটারী করা হয়েছিল মোখলেছকে। তিনি তখন হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গভবনে হাওয়া ভবনের প্রতিনিধি। তার বাড়াবাড়ি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বিএনপির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছিল।
৮. জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদ: ৭ জনকে ডিঙ্গিয়ে জেনারেল মঈনকে সেনা প্রধান করেছিলেন বেগম জিয়া। মঈন ইউ আহমেদ ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিএনপিকে ছিন্ন ভিন্ন করেন বলে, বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী মনে করেন।
৯. মেজর (অব.) সাঈদ ইস্কান্দার: বেগম জিয়ার প্রয়াত ভাই। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছিলেন। তার নিজের লোকজনকে ভালো রাখতে সেনাবাহিনীতে বিএনপির বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি করেন।
১০. আবদুল মান্নান ভুইয়া: বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। প্রয়াত এই নেতা দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে মনে করেন বিএনপির অনেক নেতা কর্মী।
১১. মতিউর রহমান নিজামী: যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীকে মন্ত্রী করা হয়েছিলো বিএনপির এক বড় ভুল। মন্ত্রী হয়ে তার কাজ কর্ম স্বাধীনতাকামী জনগনকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
১২. আলী আহসান মুজাহিদ: আরেক যুদ্ধাপরাধী। তাকে মন্ত্রী করাও সাধারণ মানুষ মেনে নেয়নি।
১৩. আরাফাত রহমান কোকো: কোকোর অর্থ লিস্পার বিষয়টি ছিলো ওপেন সিক্রেট। এর ফলে বিএনপিতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়।
১৪. শফিক রেহমান: শফিক রেহমানের নোংরা, অরুচিকর এবং আক্রমনাত্মক বক্তব্য বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল।
এরা ছাড়াও আরো অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং সীমাহীন দুর্নীতির জন্যই বিএনপির এই হাল বলে মনে করেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
Posted ৬:৫৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta