মো: ফারুক,পেকুয়া(১৩ জুলাই) :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সিকদার পাড়া এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরহুম মৌলভী ছৈয়দুল হক। এলাকায় ভাল মনের মানুষ হিসাবে পরিচিতি ছিল তার। বসবাস করেছেন মাটির তৈরি একটি টিনসেট বাড়িতে। ওই বাড়িতে জন্ম নেন সালাউদ্দিন আহমেদ ও নাসির উদ্দিন নামে তার দু’পুত্র ও তিন মেয়ে। শিক্ষাগত করে ছেলেদের মানুষের মত মানুষ করার প্রত্যয় ছিল তার।
শত কষ্টের সংসারে মাটির তৈরি ঘরে তার দৃঢ় প্রত্যয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ প্রথমে আইনজীবি পরে বগুড়ার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় বিএনপি সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বগুড়া সফরে গেলে সালাউদ্দিন আহমেদের কর্মদক্ষতা দেখে তাকে তার এপিএস হিসাবে নিয়োগ দেন।
সেই সালাউদ্দিন আহমেদ এপিএস থেকে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়ার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখে চকরিয়া-পেকুয়ায় কাজ শুরু করেন। তারপর চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ, প্রতিমন্ত্রী, জেলা বিএনপি’র সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র প্রভাবশালী যুগ্ন-মহাসচিব, সর্বশেষ কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য।
অল্প আয়ের শিক্ষক পরিবারের সন্তান। বিএনপি নেত্রীর আস্থাবাজন হওয়ায় মাটির ঘর থেকে বিশাল দালানের বাড়ি। অর্থ সম্পদ জমি কাড়ি কাড়ি। ব্যাপক দূণীর্তির অভিযোগ এর সাথে সাথে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ পেকুয়া উপজেলায়ও উন্নয়ন করেছেন।
তৎক্ষালীন বিরোধী দল বর্তমান সরকার দলীয় আওয়ামী নেতাকর্মীদের দমন ও মামলা দিয়ে অহরহ হয়রানীরও অভিযোগ। এছাড়াও চকরিয়া-পেকুয়ায় তার এক দলীয় শাসন ব্যবস্থায় সিকদার পাড়ার বেশিরভাগ দলীয় নেতাকর্মী কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।
এরই ধারাবাহিকতায় পেকুয়াস্থ সিকদার পাড়ার গ্রামের বাড়িতে তৈরি করেন বিলাসবহুল দু’টি বাড়ি। পৈত্রিক জমির উপর নির্মিত বসতবাড়িটি ছিল লোক সমাগমে ভরপুর। তিনি এমপি পরবর্তি তার স্ত্রীও এমপি নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীসহ আগত মেহেমানদের অভাব ছিলনা ওই বাড়িতে। ঢাকা থেকে তিনি পেকুয়ায় অবস্থান করলে ওই বাড়িতেই রাত্রি যাপন ও দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন।
এছাড়াও বেশ কয়েক বছর আগে সরকারী হাসপাতাল সংলগ্ন জমিতে আরেকটি বিলাস বহুল বাড়ি তৈরি করেন তিনি। নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ওই বাড়িতে তার রাত্রী যাপনের ভাগ্যে এখনো হয়নি। আর ওই দু’টি বাড়ি এখন পড়ে আছে অন্ধকারচ্ছন্ন অবস্থায়। লোকারণ্যতো দূরের কথা দলীয় নেতাকর্মীরাও ভুলেও এই মুখো হননা। অল্প কয়েক বছরে তার অবর্তমানে জৌলুস যেন হারিয়ে গেল ওই দুটি বাড়িটি।
সরেজমিন ওই বাড়ি দু’টি ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি বাড়ির গেইটে তালা লাগানো। পৈত্রিক বাড়িতে তার ভাই নাসির উদ্দিন থাকা নিশ্চিত বলে জানা গেলেও গত ২/৩ মাস ধরে চট্রগ্রামে পরিবার নিয়ে অবস্থান করায় বাড়িটি ভুতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তবে ওই বাড়িতে স্বপন নামের জিয়াউর রহমান কলেজের বাবুর্চি সব সময় ওই বাড়িটি দেখাশুনা করেন বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেন।
একই ভাবে উপজেলা পরিষদ গেইট ও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় নতুনভাবে তৈরি বিলাসবহুল বাড়িটির গেইটে তালা লাগানো। আবদু রশিদ নামের এক ব্যক্তি এ বাড়িটি দেখাশুনা করার কথা নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
বাড়ির আশেপাশের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি থাকা অবস্থায় নেতাকর্মীরা বাড়িতে ভিড় জমালেও কয়েক বছর ধরে এভাবে পড়ে থাকায় আগের জৌলুস নেই বললে চলে।
এ সময় পাশের কয়েকজন মহিলা জানান, সাবকে (সালাউদ্দিন আহমেদকে তার অনুসারীরা সাব হিসাবে ডেকে থাকে) সরকার জোর করে ভারত পাঠিয়েছে। বাংলাদেশেও মামলা আছে। তাই দেশের বাড়িতে আসতে পারেনা। যার কারণে বাড়ি ঘর ফাঁকা থাকে। তার স্ত্রী সন্তানরা আসে কিনা জানতে চাইলে তারা আসেনা বলে জানান।
জানা গেছে, আওয়ামীলীগের দুই বারের ক্ষমতায় তিনি পেকুয়ায় অল্প কয়েকবার আসেন। সর্বশেষ সাঈদীর রায় পরবর্তি পেকুয়া বাজারে সহিংসতায় নিহত শিবিরের কর্মী সাজ্জাদ এর জানায়ায় শরীক হন এবং চৌমহুনীস্থ জনসভায় ভাষন ও গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করলেও আর পেকুয়ায় আসেনি। আসেনি তার স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ ও সন্তানেরা। দলীয় নেতাকর্মীরাও কখনো সিকদার পাড়ার ওই বাড়িতে জান বলে স্থানীয়রা বলতে পারেনি।
এদিকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। অল্প কয়েক মাসের মধ্যে রায়ের অপেক্ষায় ওই মামলাটি। বাংলাদেশের নাশকতাসহ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য: ২০১৫ সালের ১২ মে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার হন বিএনপির এই নেতা। এর আগে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।তার অভিযোগ ছিল, সালাহ উদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। তবে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।
Posted ৩:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta