কক্সবাংলা ডটকম(২৩ জুন) :: দক্ষিণ আফ্রিকা, গ্রিস, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোয় বাংলাদেশী শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশী শরণার্থী রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০১৬-এ এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৯ হাজার ৭৯৬ জন বাংলাদেশী শরণার্থী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এদের সবাইকে ইউএনএইচসিআর নিরাপত্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৯৩১ জন বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। আর ৯০ জন রয়েছে বাংলাদেশী ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী শিবিরে। বাকি ১৩ হাজার ৮৫০ জন বাংলাদেশী শরণার্থী পরিস্থিতিতে রয়েছে। এর বাইরে ১৫ জন বাংলাদেশী ইউএনএইচসিআরের অন্যান্য সেবার আওতায় রয়েছে। বিশেষ মানবিক কারণে এ ১৫ বাংলাদেশীকে ইউএনএইচসিআর নিরাপত্তা দিচ্ছে, যা আরো কিছুদিন প্রয়োজন পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউএনএইচসিআরের এ প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থী পরিস্থিতির তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গ্রিসে ১ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশী শরণার্থী হিসেবে রয়েছে। দেশটিতে বিভিন্ন দেশের শরণার্থীর সংখ্যা ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গ্রিসে ২০১৫ সালে সিরিয়া, ইরাক, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশের শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৪০০, যা ২০১৬ সালে বেড়ে ৪৯ হাজার ৮০০-এ দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শরণার্থী বেড়েছে সিরিয়ার। ২০১৫ সালে দেশটির শরণার্থী ছিল ৩ হাজার ৩০০, যা ২০১৬ সালে বেড়ে ২৬ হাজার ৬০০ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালে ইরাকের শরণার্থী ছিল ৫৮০ জন, যা গত বছর ৪ হাজার ৮০০ জন হয়েছে। একইভাবে ২০১৬ সালে গ্রিসে পাকিস্তানি শরণার্থী ছিল ৪ হাজার ৪০০ জন, আফগানিস্তানের ৪ হাজার ৩০০, আলবেনিয়ার ১ হাজার ৩০০ ও ইরানের ১ হাজার ১০০ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোট-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য আগের তুলনায় অভিবাসন প্রক্রিয়া কঠিন করেছে। দেশটিতে ২০১৫ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৯০০ থাকলেও ২০১৬ সালে তা কিছুটা কমে হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০। গত বছর দেশটিতে সবেচেয়ে বেশি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন ইরানি নাগরিকরা। মোট ৪ হাজার ৮০০ জন ইরানি দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান ওই বছর। এর পরেই রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির ৩ হাজার ৭০০ নাগরিক যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। একই বছরে যুক্তরাজ্যে ২ হাজার ২০০ বাংলাদেশী রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
এর বাইরে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন। এসব বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে নিতে সরকারকে এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। চলতি বছরের মার্চে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশ সফরকালে এ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
একইভাবে জার্মানিতে বিভিন্ন উপায়ে অনুপ্রবেশ করা প্রায় ৫০০ বাংলাদেশীকেও ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হবে জানিয়েছে সরকার।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী শরণার্থী রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়ও। দেশটিতে গত বছর মোট ২ হাজার ৮০০ বাংলাদেশী রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন বলে ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়ার মতো দেশগুলোর অধিবাসীর সংখ্যাই বেশি। এ তালিকায় সবার উপরে রয়েছে কঙ্গো। দক্ষিণ আফ্রিকায় দেশটির ৫ হাজার ৩০০ জন নাগরিক রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এছাড়া ইথিওপিয়ার ৪ হাজার ৮০০, নাইজেরিয়ার ৩ হাজার ৩০০ ও সোমালিয়ার ১ হাজার ৬০০ জন দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরিসংখ্যান অধিদপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্যমতে, ২০১৪ সালে ইউরোপে ১১ হাজার ৬৭৫ জন বাংলাদেশী আশ্রয় প্রার্থনা করে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আশ্রয়প্রার্থী এ বাংলাদেশীদের আবেদনের মধ্যে ১০ শতাংশ মঞ্জুর হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ২০১৪ সালে ১০ হাজার ২৭৫ জন বাংলাদেশী ইউরোপে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
পশ্চিমা দেশগুলোয় আশ্রয়ের সুযোগ পেয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী জানান, মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তুরস্ক হয়ে জার্মানি কিংবা ইউরোপের অন্য দেশগুলোয় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশীরা। এছাড়া অনেকেই সাইপ্রাস, গ্রিস ও ইতালি হয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোয় যাচ্ছেন। খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি রুট দিয়ে প্রতিদিন ৩০ জন বাংলাদেশী ইউরোপে প্রবেশ করছেন। এদের বেশির ভাগই আসছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।
জার্মানির মিউনিখে অবস্থানরত এক বাংলাদেশী জানান, দুবাই থেকে তিনি স্থলপথে তুরস্কে গিয়েছেন। সেখান থেকে গ্রিসে গিয়ে তিন বছর থেকে বুলগেরিয়া হয়ে তিনি জার্মানি যান। উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে পাড়ি জমালেও এখনো বৈধতা পাননি তিনি।
Posted ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta