কক্সবাংলা ডটকম(২৬ জুন) :: মাঝে মাঝে ধনীদের সম্পদের পরিমাণ এত বেশি পরিমাণ হয় যে সেগুলোকে সম্পদের পাহাড় বললেও ভুল ঠেকবে। বলতে হবে সম্পদের পর্বত। এরকম ধনী ব্যক্তি বা ধনীরা যে উপায়েই তাদের সম্পদ উপার্জন করে থাকুক না কেন, তাদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে সেসব সম্পদ রক্ষা করার জন্য ছিল তাদের যোগ্য উত্তরসূরি। কারণ এক জীবনে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা উপার্জন করে ফেলা অনেক কষ্টকর ব্যাপার। যেসব মানুষের সন্তানেরা যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে পিতার ব্যবসা ধরে রাখতে পেরেছে, পরবর্তীতে তারাই বিশ্বসেরা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সম্পদশালী পরিবারের ইতিহাসের মাধ্যমে সেই সত্যতাই বারবার ফুটে উঠছে। এখানে দশটি বিশ্বসেরা ধনী পরিবার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।
১. সৌদি রাজপরিবার
সমগ্র সৌদি আরবের অর্ধেকের চেয়েও বেশি পরিমাণ সম্পদের মালিক সৌদি রাজপরিবার। সেই অষ্টাদশ শতক থেকে সৌদি আরব শাসন করছে এই পরিবার। ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে তাদের সম্পদের পাহাড়। এই পরিবারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তার বিপরীতে দেশটির মোট সম্পদ (GDP)-এর পরিমাণ ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। কাগজে কলমে এই পরিবারই বর্তমানে সমস্ত বিশ্বে সবচেয়ে সম্পদশালী পরিবার। এই সম্পদের সবচেয়ে বড় উৎস তেলের খনি। এছাড়াও আয়ের উৎস হিসেবে আছে জায়গা, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, মূল্যবান ব্যবসায়িক চুক্তি ইত্যাদি।
২. ওয়ালটন পরিবার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী পরিবার। বিশ্ববিখ্যাত রিটেইল শপ ‘ওয়ালমার্ট’-এর মালিক এরাই। ওয়ালমার্টই তাদের আয়ের মূল উৎস। সারা বিশ্বের ২৭টি ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রে ১১ হাজারেরও বেশি রয়েছে ওয়ালমার্টের শাখা। জনাব ওয়ালটন ১৯৬২ সালে ওয়ালমার্টের প্রথম শপটি চালু করেন। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করতে পারেন বড় শহরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না। তাই তিনি বেছে ছোট শহরগুলোকে। কিন্তু শহরগুলো বিচ্ছিন্ন এবং দূরে দূরে হলে সেগুলোতে সঠিক সময়ে সঠিক পণ্য সরবরাহ করা দুরূহ হয়ে যাবে। এই দিকটি তিনি সফলতার সাথে সামাল দিলেন। উপযুক্তভাবে বিপণনকারী, নির্বাচনকারী এবং সরবরাহকারী বানিয়ে নিলেন এবং এই আইডিয়ায় অনেক সফলতা পেলেন।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ দিলে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান দাতা। ২০১৫ সালে এখানে চাকুরীজীবীর সংখ্যা ছিল ২.১ মিলিয়ন। ওয়ালটন পরিবার এই সংস্থার প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এতেই তাদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫২ বিলিয়ন ডলার।
৩. কচ পরিবার
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ বেসরকারি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ‘কচ ইন্ডাস্ট্রি’র মালিক এই পরিবার। এদের আয়ের উৎস তেল, রিয়েল এস্টেট, কেমিক্যাল, সার ইত্যাদি। এরা এতই প্রভাবশালী যে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রার্থীদেরকে বড় অংকের অর্থ অনুদান দেয়। প্রকৌশলী ফ্রেড সি কচ এই সম্পদের ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৯৪০ সালে তিনি একটি তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পরবর্তীতে খুব শক্তিশালী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে পরিণত হয়।
৪. স্লিম হেলু পরিবার
মেক্সিকোর সবচেয়ে ধনী কার্লোস স্লিম হেলু ও তার পরিবার। লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় মোবাইল টেলিকম কোম্পানি ‘আমেরিকা মোবাইল’ এর মালিক এই পরিবার। এর পাশাপাশি সম্পদের উৎস আছে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন, খনিজ উত্তোলন, রিয়েল এস্টেট ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের ১৭% মালিকানাও তাদের। কার্লুস হেলুর তিন সন্তানের মেধা ও পরিশ্রমে বর্তমানে তারা বিশ্ববাজারে প্রভাব রাখছে। তাদের প্রভাব মেক্সিকো ছাড়িয়ে আমেরিকা, স্পেন, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে।
৫. কারগিল ম্যাকমিলান পরিবার
এই পরিবারে ১৪ জন বিলিয়নিয়ার সদস্য আছে। সংখ্যার দিক থেকে এই পরিবারেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার আছে। খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ তাদের আয়ের উৎস। ১৮৬৫ সালে উইলিয়াম ওয়ালেস কারগিল নামে একজন ব্যক্তি কারগিল ইনকর্পোরেটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। ১৯০৯ সালে এর সকল সম্পত্তি তার চার সন্তানের মাঝে ভাগ করে দেন। সন্তানেরাও বাবার মতো পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানটিকে আরো দূরে নিয়ে যায়। এখন এই কোম্পানিটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানির মাঝে একটি। আর এর ৮৮ শতাংশের মালিক এই পরিবার। এই হিসেবে তাদের সম্পদের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন ডলার।
৬. লিলিয়ান বেটেনকোর্ট ও তার পরিবার
বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী নারী লিলিয়ান বেটেনকোর্ট। প্রসাধন ও ফ্যাশন সামগ্রীর জন্য বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড ল’রিয়েলের মালিক এই পরিবার। ১৯০৭ সালে লিলিয়ানের বাবা জনাব ইউজিন এই কোম্পানির গোড়াপত্তন করেন। তখন সারা বিশ্বের মাঝে প্যারিস ছিল ফ্যাশন সামগ্রীর রাজধানী। উদ্ভাবনী দক্ষতাও ছিল তার এবং এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বাজারও দখল করতে পেরেছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে এই সম্পদের মালিক হন লিলিয়ান বেটেনকোর্ট।
৭. বার্নার্ড আর্নল্ট ও তার পরিবার
এটিও ফ্রান্সের পরিবার। সারা বিশ্বে ৭০টিরও বেশি ব্র্যান্ডে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত। ডম প্যারিগনন, বুলগেরি, লউস ভোটন, ফেন্ডি, সেফোরা ইত্যাদি বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো তাদের মালিকানায়। সারা বিশ্বে ছড়ানো ৩ হাজার ৭০০টি রিটেইল স্টোরের মালিকও তারা। পণ্য কেনাবেচার মাধ্যমেই তারা এত সম্পদের মালিক হয়েছে।
৮. কক্স পরিবার
প্রভাবশালী মিডিয়া কমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রির মালিক। বিংশ শতকের শুরুর দিকে জেমস মিডলটন কক্স নামে একজন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো রাজ্যের গভর্নর হিসেবে নির্বাচন করেন। সেখানে হেরে গিয়ে উপলব্ধি করেন রাজনীতি তাকে দিয়ে হবে না। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি পরে কয়েকটি পত্রিকা প্রতিষ্ঠান কিনে নেন এবং একটি মিডিয়া গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান তার দুই পৌত্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাদের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
Posted ২:১১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta