কক্সবাংলা ডটকম(২৫ মে) :: বিশ্বের সবচে জনবহুল দেশ হিসেবে পরিচিত চীন। এর পরই ভারতের অবস্থান। কিন্তু প্রচলিত এ তথ্য মোটেও সঠিক নয়। চীনের জনসংখ্যা গণনা পদ্ধতিতে ভুল আছে। তাই বিশ্বের সবচে জনবহুল দেশ চীন নয়, ভারত- এমনটাই দাবি করেছেন উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ই ফুজিয়ান। সম্প্রতি চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এমন দাবি করেন।
ফুজিয়ানের মতে, ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সরকারি হিসেবে চীনে ৪৬ কোটি ৪৮ লাখ মানুষ জন্ম নিয়েছে। সেই হিসাবে দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। তার হিসেবে সেই সময়ে দেশটিতে ৩৭ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ জন্মেছেন। সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা বেশি বলায় মোট জনসংখ্যাও বেড়েছে।
জনসংখ্যা গণনায় এ ভুল চীনকে বিশ্বের সবচে জনবহুল দেশের তকমা দিয়েছে। তত্ত্বগতভাবে যা ভুল। ফুজিয়ানের মতে, সরকারি হিসেবের চেয়ে চীনের জনসংখ্যা অন্তত ৯ কোটি কম। যা ইউরোপের দেশ জার্মানি ও বেলজিয়ামের মোট জনসংখ্যার সমপরিমাণ।
তার হিসাব অনুযায়ী, চীনের বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ নয় বরং সর্বসাকুল্যে ১২৯ কোটি। অন্যদিকে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৩২ কোটি। তাই চীনকে কোনোভাবেই বিশ্বের সবচে জনবহুল দেশ বলা যায় না। এ তকমা ভারতের প্রাপ্য।
ফুজিয়ানের এ তত্ত্ব ভারত ও চীনের গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করেছে। তার এ দাবি সঠিক হলে জাতিসংঘের একটি প্রচলিত মতবাদও মিথ্যা প্রমাণিত হবে। সংস্থাটির মতে, ২০২২ সাল নাগাদ ভারত জনসংখ্যার নিরিখে চীনকে ছাপিয়ে যাবে।
একদিকে ভারতে জনসংখ্যার হার দ্রুত বাড়ছে, অন্যদিকে চীনে এ হার বেশ নিম্নমুখী। তাই ২০২২ সাল নাগাদ ভারত চীনকে ছাপিয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়। যদিও চীনে এক সন্তান নীতি বাতিল করার পরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু দেশটির নারীদের মধ্যে (বিশেষত শহরাঞ্চলের কর্মজীবী নারী) সন্তান নেয়ার প্রবণতা কমেছে।
এখন ফুজিয়ানের এ তত্ত্ব সঠিক হলে জনসংখ্যায় ভারত ইতিমধ্যে চীনকে ছাপিয়ে গেছে। আর এ তথ্য আমাদের চোখের আড়াল রয়েছে চীনের জনসংখ্যা গণনা পদ্ধতির ভুলের কারণে। ফুজিয়ান বলেন, ‘আমার এ হিসাব এখন গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু আমি অনেক আগেই এ ভুল ধরিয়ে দিয়েছি। তাই এ আলোচনায় আমি মোটেও বিস্মিত নই।’
২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় ই ফুজিয়ানের লেখা বই ‘বিগ কান্ট্রি উইথ অ্যান এম্পটি নেস্ট’। এ বইয়ের ২০১৩ সালের সংস্করণে তিনি চীনের জনসংখ্যা গণনা পদ্ধতিতে ভুল থাকার কথা যুক্ত করেন। সমালোচনা করেন দেশটির পরিবার পরিকল্পনা নীতির। এরও আগে ২০০৩ সালে এ ভুলের বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর হয় বলে জানান চীনা এ গবেষক।
তবে ফুজিয়ানের এ দাবি মানতে নারাজ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেমোগ্রাফার ওয়াং ফেং। তার মতে, চীন সরকার যে সংখ্যা জানিয়েছে তা যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই জানিয়েছে। কোনো স্বাধীন গবেষকের পক্ষে এত বড় আকারে নিরীক্ষা চালানো সম্ভব নয়। তাই ফুজিয়ানের সংখ্যার চেয়ে সরকারি সংখ্যা বেশি বিশ্বাসযোগ্য।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেমোগ্রাফার লি জিয়ানজিং বলেন, ‘চীনা সরকার দেশটিতে জন্মহার বেশি দেখিয়েছে। আর এর মাধ্যমে দেশটি জনমিতিক পরিবর্তনের বিষয়টি কম করে দেখানোর চেষ্টা করেছে।’ আর এ কারণেই তিনি ফুজিয়ানের দেয়া পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছেন।
সূত্র: এনডিটিভি
Posted ৭:১৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta