কক্সবাংলা ডটকম(৫ জুন) :: আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ নিয়ে ব্যাংক পাড়ায় এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রাহকদের পাশাপাশি ব্যাংক কর্মকর্তারাও এই বিষয়টি নিয়ে বেশ শঙ্কায় আছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক ও স্থায়ী আমানতকারী মিসেস সালমা বেগম জানান, ‘অর্থমন্ত্রীর ওপর রাগ করে আমানতের টাকা তুলে নিতে এসেছি। সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করব।’
এদিকে বেসরকারি এনসিসি ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন গ্রাহক এসেছিলেন ব্যাংক থেকে আমানতে তুলে নিতে। তবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা ফিরে গেছেন। অর্থমন্ত্রীর সমালোচনায় ছিল ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ। আমানতে আবগারি শুল্ক আরোপের বিষয় সমালোচনা ছাড়াও সঞ্চয়পত্রের সুদ হার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে দেশের প্রচলিত নীতি পরিপন্থী বলে মনে করছেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো বা বাড়ানো বিষয়ে জনসম্মুখে অগ্রিম জানানোটা প্রচলিত নীতি-পরিপন্থী।’ তিনি বলেন, ‘সুদহার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর অগ্রিম জানানোর ফলে সঞ্চয়পত্র কেনার হিড়িক পড়ে গেছে।’
এদিকে আবগারি শুল্কের বিষয়ে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন, তা পরিবর্তন হতে পারে, এমন গুঞ্জনও ছিল ব্যাংকগুলোতে।
ডাচবাংলা ব্যাংকের মতিঝিল বৈদেশিক শাখার গ্রাহক রফিকুল্লাহ বলেন, ‘দেখবেন বাজেট পাস হওয়ার সময় অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব পরিবর্তন করা হবে। আবগারি শুল্ক কমবে।’ এই আশায় তিনি আরও কিছুদিন তার আমানত ব্যাংকে রাখবেন বলেও জানালেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সার্কুলার জারি হবে। এরপর আবগারি শুল্ক কার্যকর করা হবে। তবে অর্থমন্ত্রী যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করেন, তাহলে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে অন্য কোথায় বিনিয়োগ করব।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষকে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে বিরত রাখতেই এই আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ’
বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০টাকা আবগারি শুল্ক কর্তন করা হয়। প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক শুল্কমুক্ত রাখার কথা বলা হয়েছে।
ব্যাংক লেনদেনে নতুন আবগারি শুল্করোপে ‘অর্থপাচার’ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে আবগারি বৃদ্ধি করা হলে গ্রাহকরা ব্যাংকে আমানত রাখতে চাইবেন না। এর ফলে অর্থ ব্যাংক চ্যানেলে না গিয়ে ইনফরমাল চ্যানেলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।’
অর্থমন্ত্রীর নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে। ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত দেড় হাজারের পরিবর্তে আড়াই হাজার টাকা দিতে হবে। ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক সাড়ে ৭ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলেই ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে।
Posted ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৫ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta