কক্সবাংলা ডটকম(২০ জুন) :: রিকস হলো বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর একটি জোট। এই জোটে বাংলাদেশ যোগ দিতে চায়। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছে ঢাকা। সদস্য দেশগুলোও বাংলাদেশকে জোটে নিতে আগ্রহী।
রাশিয়ায় চলতি মাসে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশকেও।
তবে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে আপাতত নতুন সদস্য নেওয়া হবে না। ‘অংশীদার রাষ্ট্র’ মডেলে দেশগুলোকে ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এর ফলে বাংলাদেশসহ আগ্রহী দেশগুলো এই মডেলে ব্রিকসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ পেতে করতে হবে অপেক্ষা। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে আপাতত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে।
ব্রিকস হলো উদীয়মান অর্থনীতির পাঁচটি দেশ– ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং সাউথ আফ্রিকার একটি জোট। দেশগুলোর প্রথম অক্ষর দিয়ে এর নামকরণ করা হয়েছে।
গত বছর সদস্য হয়েছে সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, মিসর ও ইথিওপিয়া।
নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামে জোটের একটি ব্যাংক আছে। সদস্য দেশগুলো অনেক আগে থেকেই নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন, ব্রিকস মুদ্রা প্রবর্তন এবং নিজস্ব রিজার্ভের কথা বলছে।
গতবছরও দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকসের ১৫তম বৈঠকে যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্রিকসের পক্ষ থেকেই বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
তখন মনে করা হয়েছিল বাংলাদেশ সদস্যপদ পেয়ে যাবে। কিন্তু সেবার যে ছয়টি সদস্য দেশকে নতুন সদস্য করা হয়েছিল সেই তালিকায় বাংলাদেশ ছিল না।
এর কারণ হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলছেন, বাংলাদেশ আগ্রহ দেখিয়েছিল পরে। আগ্রহ দেখানো এবং তার জন্য যে মোবিলাইজেশন দরকার সেটা কতটুকু হয়েছিল সেটা ব্যাপার।
সেকারণেই হয়তো বিষয়টি বিবেচনায় আসেনি। এটা একটা কারণ হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারপর থেকে বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠক হলেই বাংলাদেশ সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে সহায়তা চাইছে। সদস্য দেশগুলোও আশ্বাস দিচ্ছে জোটে নেওয়ার।
গত ৫ জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ব্রিকসের সদস্য হতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে বেইজিং। ব্রাজিলও সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মস্কোর দিক থেকেও বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন আছে।
ব্রিকসে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা সবার সঙ্গে আছি। কিন্তু সামরিক কাঠামোর মধ্যে আমরা নেই।
আর ব্রিকস অর্থনৈতিক জোট। তবে অপেক্ষা যে করতে হচ্ছে সেটা সদস্যদের নিজেদের ব্যাপার। এখানে বাংলাদেশের কিছু করার নেই।’
১২ জুন রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ হজে যাওয়ায় দীপু মনি সম্মেলনে যোগ দেন। এর আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ড. হাছান মাহমুদকে আমন্ত্রণপত্র পাঠান।
সম্মেলনে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলে বাংলাদেশ অনেক কিছু দেওয়ার সক্ষমতা রাখবে। এ জোটে যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’
এদিকে ব্রিকসের দেশগুলোর মধ্যে নানা কারণে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ব্রিকসের সম্প্রসারণ নয়, সংস্কার চাইছে ভারত। কিন্তু চীন-রাশিয়া নতুন সদস্য নেওয়ার ব্যাপারে একমত। আবার চীনা প্রভাবের সম্ভাব্য ‘ঝুঁকি’র কারণে ভারতের অবস্থানের প্রতি সম্মতি আছে ব্রাজিলের।
ব্রাজিল ও ভারত চায় ব্রিকস যেন একটা পশ্চিমাবিরোধী জোট না হয়। এ জন্যই মূলত নতুন সদস্যপদ দেওয়া স্থগিত করে আপাতত ‘অংশীদার রাষ্ট্র’ মডেল প্রণয়ন করা হয়েছে।
Posted ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta