কক্সবাংলা ডটকম(১১ আগস্ট) :: ভারত, চীন ও ভুটান সীমান্তের ডোকলাম উপত্যকায় চীন ও ভারতের সামরিক বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে আছে প্রায় দুই মাস ধরে। ডোকলামে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন ও ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড়। সীমান্তে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি।
চীনা গণমাধ্যম এবং সরকারের কেউ কেউ প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে মনে করিয়ে দিচ্ছে, তাদের সামরিক শক্তির কাছে ভারত কিছুই নয়। ভারতও পিছু হটার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না। এরই মাঝে ভারতের কাশ্মীরে প্রবেশের হুমকি দিয়েছে চীন।
সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল চীন। কিন্তু তাদের সেই হুঁশিয়ারি আমলে নেয়নি ভারত। সেনা প্রত্যাহার না করায় ভারতকে হুমকি দিয়ে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা যদি উত্তরাখন্ড বা কাশ্মীরে ঢুকে পড়ি তখন কী হবে?
চীনের সীমান্ত ও মহাসাগর বিষয়ক উপমহাপরিচালক ওয়াং ওয়েনলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতীয় পক্ষ নানান অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে। যদি আমরা একই অজুহাত ব্যবহার করি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার কাশ্মীর অঞ্চলে এবং উত্তরাখন্ডের কালাপানিতে প্রবেশ করি তখন..।’ তিনি বলেন, ওই অঞ্চল নিয়ে ভারত ও তাদের প্রতিবেশী পাকিস্তানের মধ্যে বিতর্ক আছে। উত্তরাখণ্ডের কালাপানি নিয়ে নেপালের সঙ্গে সমস্যা আছে। তাই, অজুহাত ব্যবহার করে পানি ধরে রাখা যায় না। এটা শুধু ঝামেলার কারণ হবে।
ওয়াং ওয়েনলি বলেন, ‘যদি সেখানে একজনও ভারতীয় সেনা থাকে তাহলেও আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক ভূখণ্ডে প্রবেশাধিকার লঙ্ঘন করছে।’
অপরদিকে চীনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, সব সময়ই ভারত-চীন সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী ভারত। পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য ভারত চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক পথেই যোগাযোগের চেষ্টা করবে।
তবে ওয়াং বলেন, পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে দোকলাম থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া।
ভারত ভুল পথ বেছে নিলে সঠিক পথেই থাকবে চীন
ভারতের বিরুদ্ধে চীন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে—এ প্রশ্নের উত্তরে ওয়াং বলেন, ‘আমি শুধু এটাই বলতে পারি যে, পিএলএ (পিপলস লিবারেশন আর্মি) এবং চীন সরকারের নিজেদের সংকল্প রয়েছে। যদি ভারতের পক্ষ থেকে ভুল পথ বেছে নেওয়া হয় তখনো নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন মেনে সঠিক পথটিই বেছে নেব আমরা।’ তিনি বলেন, এটা একেবারেই পরিষ্কার ব্যাপার যে, চীনের নিজস্ব অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। তাই তাদেরই সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
২০ হাজার কোটি রুপি জরুরি বরাদ্দের দাবি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের
ভারত, চীন ও ভুটান সীমান্তের ডোকলাম উপত্যকায় চীন ও ভারতের সামরিক বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যই জরুরি ভিত্তিতে আরও ২০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সঞ্জয় মিত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জরুরি ভিত্তিতে ২০ হাজার কোটি রুপি দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের বেশির ভাগই খরচ হয়ে গেছে। বেতন-ভাতায় অনেক অর্থ যাচ্ছে। সমরাস্ত্র কিনতেও বিশাল অঙ্ক ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের পর এবারই প্রতিরক্ষা বাজেট মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সবচেয়ে কম অংশ।
এর আগে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ১৩তম প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার (২০১৭-২০২২) অধীনে সেনবাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য প্রায় ২৭ লাখ কোটি রুপি চেয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা এবং ভারতের ভূকৌশলগত স্বার্থ সুরক্ষায় এই অর্থ প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে।
এখন আগামীতে কি হয় তাই দেখার বিষয়। কারণ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সংসদে বলেছেন, ভারতকে যদি সরতে হয়, চীনকেও তাহলে ডোকলাম ছেড়ে পিছিয়ে যেতে হবে। কারণ, তিন দেশের সীমান্তের ওই ‘তেমাথার’ প্রকৃত দাবিদার এখনো অমীমাংসিত। ২০১২ সালের চুক্তি অনুযায়ী একমাত্র তিন দেশের মধ্যে আলোচনাতেই তার মীমাংসা সম্ভব। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়া টুডে
Posted ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta