কক্সবংলা ডটকম(৫ জুন) :: ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলে এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। বুধবার লোকসভা নির্বাচন আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৪৩টি আসনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
বিজেপি পেয়েছে ২৪০টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন। সমাজবাদী দল পেয়েছে ৩৭টি আসন। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯টি আসন। আর বাকি আসনগুলো পেয়েছে অন্যান্য দলগুলো।
এবার এককভাবে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৭২টি আসনে জয় পেতে হয়। এ সংখ্যা কোনো দলই পায়নি। তাই এবার জোট সরকার গঠিত হবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি একাই ৩০২টি আসনে জিতেছিল।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ‘এনডিএ’ ২৯৩টি আসন পেয়েছে। অপরদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ‘ইনডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩টি আসন। অন্যান্য দলগুলো পেয়েছে বাকি ১৭টি আসন।
এদিকে এনডিএ জোটকে বিজয়ী ঘোষণা করে ভাষণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার রাতে দিল্লিতে বিজেপি কার্যালয়ের সামনে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তৃতীয়বার এনডিএর সরকার গঠন নিশ্চিত। মানুষ পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছে বিজেপি ও এনডিএর ওপর।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নীতিশ ও নাইডুকে জোটে ধরে রাখতে এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। মঙ্গলবার রাতেই দুই নেতার সঙ্গে কথা বলেন অমিত শাহ। এছাড়া নিজের বাসভবনে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। অমিত শাহ ও রাজনাথ সিংয়ের মতো শীর্ষ নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এনডিটিভির খবর, ‘ইন্ডিয়া’ জোটও শরিক বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারাও গতকাল নীতিশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এদিকে প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস, ম্যাজিক কিছুই যেন কাজে এল না। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। তাদের লক্ষ্য ছিল ৪০০ আসন। কিন্তু ফল ঘোষণার পর দেখা গেছে, তারা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২টি আসনই এককভাবে জিততে পারেনি।
তাই ২০১৪ সালের পর প্রথম বারের মতো সরকার গঠনে মোদিকে এনডিএ জোটের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। এদিকে, প্রাথমিকভাবে পিছিয়ে থাকলেও এখনই সরকার গঠনের আশা ছাড়ছে না কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট। সেক্ষেত্রে জোটে নতুন অংশীদার যোগ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মঙ্গলবার (৪ জুন) মধ্যরাতে দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ৫৪২টি আসনের মধ্যে ২৪০টিতে জয় পেয়েছে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধীদল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, রামমন্দির নির্মাণ, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিল বিজেপি। ‘এক দেশ এক ভোট’, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের অঙ্গীকার ছিল তাদের, ছিল ৪০০ আসন পার করার স্লোগান। কিন্তু লোকসভার ফলাফল জানিয়ে দিলো এ প্রথম বার সহযোগীদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেই সরকার গঠন করতে হবে বিজেপিকে। মাত্র সাড়ে ১১ মাস আগে গড়া বিরোধী জোট ‘পদ্মে’র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথ আটকে দিলো।
এনডিএ জোটের অন্যতম দুইটি দল হলো চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও নিতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড। বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করতে পারে তারা। ২০১৪ সালের পর প্রথম এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলো।
ভোটের ফলপ্রকাশের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘জয় জগন্নাথ’ দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন নরেন্দ্র মোদি। তবে এবার তার বক্তৃতায় বিজেপি নয়, জোর দিলেন এনডিএ জোটের ওপর। তার ভাষণে বার বার শোনা গেল এনডিএর কথাই। জোট সরকারের ক্ষেত্রে অন্য দলগুলো বিজেপির ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ভোটের ফলাফল বলছে, দেশে মোদি সরকার থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের ঢালাও সমর্থনে খানিকটা ভাটা পড়েছে।
এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবর অনুসারে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খারগে বলেছেন, তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়েছে। আগামীকাল জোটের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইন্ডিয়া জোটের সরকার গঠনের আশা এই মুহূর্তে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের আসনসংখ্যার পার্থক্য মাত্র ৬০টির মতো।
এ অবস্থায় সবচেয়ে আলোচিত দল হয়ে উঠেছে চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি এবং নীতিশ কুমারের জেডিইউ। বলা হচ্ছে, এ দুটি দলই হতে পারে এবারের নির্বাচনে ‘কিংমেকার’। দল দুটি বর্তমানে বিজেপি জোটের অংশীদার হলেও অতীতে তারা উভয়েই কংগ্রেসের মিত্র ছিল। এ কারণে তাদের আবারও পাশে টানার চেষ্টা করছে ভারতের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলটি।
উল্লেখ্য এবারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয় সাত ধাপে। নির্বাচন চলে প্রায় ছয় সপ্তাহ। ভোটার সংখ্যা ৯৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি। প্রথম ধাপের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল। ১ জুন হয় সপ্তম ধাপের ভোট। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলগতভাবে বিজেপি পায় ৩০৩টি আসন। আর জোটগতভাবে পায় ৩৫২টি। ব্রিটিশ শাসনামলের পর ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের ৭৬ বছরের মধ্যে ৫৪ বছরই দেশটির ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। কিন্তু শতবর্ষীয় এ দল গত দুই নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যায়।
Posted ১:১৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta