কক্সবাংলা ডটকম(৩০ আগস্ট) :: সীমান্তে নিয়ে চীন ও ভারতের মুখোমুখি অবস্থান ও সংকট সমাধানের পর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো দাবি করছে, চীনা বাহিনীকে মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাদের শক্তিশালী উপস্থিতির কারণেই হার মেনেছে চীন।
ভারতের দৃঢ় অবস্থানের কারণেই চীন সমঝোতায় এসেছে। তবে চীন দাবি করেছে, আবহাওয়াগত কারণেই তারা সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিকিমে চীনের চেয়ে ভারতীয় সেনাদের দ্রুত ও তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর সুযোগ ছিল। তবে মঙ্গলবার ডোকলাম প্ল্যাতো থেকে সেনা সরিয়ে নেয় দুই দেশ। এই স্থানটি নিয়ে চীন ও ভুটানের বিরোধ চলে আসছে।
দীর্ঘদিন পর ডোকলাম সীমান্তে চীনের সড়ক নির্মাণ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। সীমান্তের ওই অংশটি ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভুটান নিজের বলে দাবি করে। ভুটানের দাবির পক্ষে চীনা সেনাদের মুখোমুখি অবস্থান নেয় ভারত।
গত ১৬ জুন থেকে ডোকলাম সীমান্তে মুখোমুখি ছিল দুই দেশের সেনাবাহিনী। অন্তত ৩০০ সেনাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল বিতর্কিত ওই সীমান্তে। বারবার যুদ্ধের হুমকিও দিতে শুরু করেছিল চীন। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সরে আসে দুই দেশ।
চীন প্রতিদিনই ভারতকে সামরিক আগ্রাসনের হুমকি দিয়েছে। সীমান্ত বিরোধী নিয়ে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধও হয়েছিল।
উত্তেজনার প্রধান কারণ ছিল, ডোকলামে একটি রাস্তা তৈরি করতে চায় চীন। কিন্তু অঞ্চলটি ভুটান ও চীনের মধ্যকার একটি বিরোধপূর্ণ এলাকা। এলাকাটির মালিকানা দাবি করে আসছে চীন ও ভুটান উভয় দেশই। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ভুটানের পক্ষে। ভারত মনে করে, চীন যদি এ রাস্তাটি তৈরি করে তাহলে কৌশলগতভাবে তারা পিছিয়ে পড়বে। এ রাস্তাটির মাধ্যমে চীন এমন একটি জায়গায় পৌঁছে যাবে যেটি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, তারা হার মানতে রাজি ছিল না। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফিট উপরে ডোকলামে কৌশলগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল ভারতীয় সেনা। সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তাদের দাবি, এর ফলেই কূটনৈতিক সমাধানে যেতে বাধ্য হয়েছে চীন।
চীন এই রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কিনা জানতে চাইলে সরকারের এক মুখপাত্র জানান, ‘আমরা আবহাওয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখব আমরা।’ তিনি জানান, চীনা সৈন্যরা ওই স্থানে তাদের টহল অব্যাহত রেখেছেন।
এবার একটু দেখে নেওয়া যাক মোদীর ভারত কোন কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেল-
১) পাকিস্তানে ঢুকে ভারতীয় সেনা জওয়ানের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক যেমন দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, তেমনই কিন্তু চিনের মতো শক্তিশালী একটি দেশের কাছে মাথা নত না করে, ডোকালাম সীমান্ত থেকে সেনা না সরিয়ে যেভাবে চিনের মতো একটি শক্তিশালী দেশকে একের পর একের প্রত্যুত্তর দিয়ে গিয়েছে ভারতীয় সেনা তা যে ভারতেরই মুখ উজ্জ্বল করল তা বলাই বাহুল্য৷ আর ভারত যে ১৯৬২সালের সেই বারত নয়, তা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি৷
২) ভারতের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা প্রথম থেকেই বলে আসছেন৷ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ থএকে শুরু করে সম্পর্কের উন্নতিতেও জোর দেন৷ শুধু তাই নয়, চিনের প্রেসিডেন্ট জি জিংপিং-কেও ভারতে আমন্ত্রণ জানান তিনি৷ যদিও চিন পরে তার নীতিতে অনড় থাকলেও, সোমবারের ডোকালাম সমস্যা সমাধান যেন মোদীর বিদেশনীতির জয়কেই আরও স্পষ্ট করে৷
৩) চিন বারবারই বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করে বলে সমালোচনা হয়, এমনকি ভারতকে খারাপ প্রতিবেশী বলতে ছাড়ে না তারা, কিন্তু ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির ওপর ভরসা রেখে চিনের মতো শক্তিশালী দেশকে জবাব দিয়েছে৷ আর এর ফলে ভারতের প্রতি অন্যান্য দেশের আস্থা যে আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে এমনটাই এখন মনে করা হচ্ছে৷
৪) ভারত ছাড়াও, এমন কিছু দেশ রয়েছে যাদের কাছে চিনের আগ্রাসী নীতি বেশ সমস্যার৷ ভুটান, ভিয়েতনাম, জাপান সহ বেশ কিছু দেশ বারবার এর বিরোধিতা করে এসেছে৷ ডোকালামে চিনের এই পিছু হটে যাওয়ার ফলে এইসব দেশের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ আরও মজবুত করে তুলতে পারে৷ প্রসঙ্গত, জাপান এর আগেই ডোকালাম ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন করেছে, সমর্থন করেছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াও৷
Posted ৬:২৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta