কক্সবাংলা ডটকম(১৬ জুলাই) :: বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে ভারতের সঙ্গে যৌথ মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এই মহড়ায় তাদের সঙ্গে আছে আরেক পরাশক্তি জাপান। ভারত এমন সময় এ মহড়ার আয়োজন করেছে, যখন ডোকলামে চীনের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি। আর এই মহড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেইজিং।
৭ জুলাই শুরু হওয়া এই মহড়া কাল ১৭ জুলাই শেষ হওয়ার কথা। বলা হচ্ছে, বিশাল আয়োজনের এই মহড়ায় ভারত তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে যোগ দিয়েছে। ভারতীয় বার্তা সংস্থা আইএএনএস বলছে, বঙ্গোপসাগরের গভীরে চলা এই মহড়ার স্থান গোপন রাখা হয়েছে।
কিন্তু কেন এই মহড়া? চীন ও তার মিত্র পাকিস্তানকে নয়াদিল্লির নৌশক্তি দেখানোর জন্য? নাকি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে ভারতের সামরিক বন্ধন দিন দিন জোরদার হওয়ার বিষয়টি জানান দেওয়ার জন্য?
ভারত অবশ্য এ ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলছে না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এটা বলাই যায়—এই মহড়া দিয়ে নয়াদিল্লির এই শক্তি প্রদর্শনের লক্ষ্য আসলে চীন।
ভারত এত দিন তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবেই মেনে আসছিল। কিন্তু মোদি গত লোকসভা নির্বাচনের আগে অরুণাচল প্রদেশে গিয়ে সেই বিতর্ক উসকে দেন। আর তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর চীনের আপত্তি সত্ত্বেও তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ সফর করেন। তখন অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী এক বিবৃতিতে তিব্বতকে ‘রাষ্ট্র’ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা ক্ষুব্ধ করে চীনকে।
এ ছাড়া মোদির আমলেই পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর দিয়ে বেলুচিস্তান পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডর গঠনে ভারতের বাধা ও চীনের উদ্যোগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে ভারতের না থাকার বিষয়টি নিয়ে চীন-ভারত সম্পর্কে অবনতি ঘটে। ৩০টি দেশের সরকারপ্রধানসহ ১০০ দেশের প্রতিনিধিরা বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্মেলনে যোগ দেন।
ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান বেইজিংয়ে প্রতিনিধি পাঠালেও ভারত বিরত থাকে। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে চীনের ওই উদ্যোগকে তার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়। আর সর্বশেষ ভারত, চীন ও ভুটান—এই তিন দেশের জংশন হিসেবে বিবেচিত ডোকলাম মালভূমিতে অনেকটা মুখোমুখি ভারত-চীন। অবস্থানগত কারণে দুই দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই ডোকলাম। দুই দেশই সেখানে সেনা মোতায়েন করেছে।
এ ছাড়া জলদস্যুবিরোধী অভিযানের নামে গত দুই মাসেই ভারত মহাসাগরে চীন ১৩টি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। মূলত ভারত মহাসাগরসহ দক্ষিণ চীন সাগরে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিশ্চিত করতে বেইজিংয়ের এই সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে চীনকে নিজের নৌশক্তির মহড়া দেখানোর সুযোগ ভারত ছাড়বে কেন?
আর এ কারণেই যেন নিজের পুরো নৌশক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় নেমেছে ভারত। দেশটির সবচেয়ে বড় ও একমাত্র বিমানবাহী রণতরি আইএনএস বিক্রমাদিত্যও এই মহড়ায় যোগ দিয়েছে। তিন দেশের সব মিলিয়ে ১৬টি জাহাজ ও ৯৫টিরও বেশি বিমান এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস নিমিটজ ও জাপানের হেলিকপ্টারবাহী রণতরি জেএস ইজুমো এই মহড়ায় রয়েছে।
ভারত সরাসরি না বললেও যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান কিন্তু অনেকটা স্পষ্ট করেই বলেছে, এই মহড়ার উদ্দেশ্য চীনকে বিশেষ সংকেত দেওয়া। ইউএস স্ট্রাইক গ্রুপ ১১-এর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল উইলিয়াম ডি বায়ার্ন বলেন, ‘এই মহড়া সব ধরনের ভুল হিসাব-নিকাশ মুছে দেবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক মার্কিন কমান্ডার বলেন, ‘এই মহড়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে চীনের ওপর। তারা (চীন) জানবে আমরা (যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান) একসঙ্গে আছি।’
জাপানের মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের ভাইস চিফ অব স্টাফ হিরোশি ইয়ামামুরার বরাত দিয়ে দেশটির আসাহি শিম্বুন পত্রিকায় বলা হয়েছে, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ও তিন দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করা এই মহড়ার লক্ষ্য। আসাহি শিম্বুন এই প্রতিবেদনের শিরোনামে বলে দিয়েছে, এই মহড়ায় শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য চীনের প্রতি সংকেত পাঠানো।
সাগরে এই শক্তি প্রদর্শনের আয়োজন যে চীনের উদ্দেশ্যেই, সেটা বেইজিংও ভালো করে জানে। এ কারণেই মহড়া শুরুর আগেই নিজের অবস্থান তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে চীন। ৭ জুলাই চীন সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এই মহড়া তৃতীয় কোনো দেশকে উদ্দেশ্য করে করা হচ্ছে না।’ এই তৃতীয় দেশ বলতে চীনকেই বোঝানো হয়েছে।
তবে এটাও ঠিক, হুট করে এই নৌ-মহড়ার আয়োজন করেনি ভারত। ১৯৯২ সালে ‘মালাবার এক্সারসাইজ’ নামের এই মহড়া শুরু হয়। তখন থেকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এতে অংশ নিয়ে আসছে। ২০১৪ সাল থেকে জাপান প্রতিবছর এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুর এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। এবার চলছে ২১তম মালাবার মহড়া।
Posted ৭:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৬ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta