কক্সবাংলা ডটকম(২০ আগস্ট) :: চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করেছিলেন প্রশাসন। হোয়াইট হাউজের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় বসিয়েছিলেন কাছের মানুষদের। এরপর সাত মাস পেরিয়ে গেছে।
এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনে রুশসংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন সমালোচনা ও আঘাত সামলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তবে সাত মাস পর এসে ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একে একে প্রশাসনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর পদত্যাগ কিংবা বরখাস্তে ট্রাম্প প্রশাসন টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে ধারণা অনেকের।
ট্রাম্পের মেয়াদকালে এখন পর্যন্ত মাইকেল ফ্লিন, রিন্স প্রিবাস, শন স্পাইসার, অ্যান্থনি স্কারামুচির মতো বেশ কয়েকজন পরিচিত ও প্রভাবশালী কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন। তারা সবাই ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্পের পাশে ছিলেন ব্যানন।
নির্বাচনে তার জয় পেতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। পদ ছাড়ার এ তালিকা শুরু হয় ট্রাম্পের ক্ষমতা নেয়ার এক মাস না যেতেই। গত ফেব্রুয়ারিতে পদত্যাগে বাধ্য হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা মাইকেল ফ্লিন। যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তা বেশ আগে থেকেই ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তার সখ্যতার কথা শোনা যায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে সামরিক গোয়েন্দাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে এসেছেন। ট্রাম্প ক্ষমতা নিয়ে তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে বসান। দায়িত্ব নেয়ার ২২ দিনের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের আংশিক স্বীকার করেছেন ফ্লিন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
তালিকায় পরের নাম হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসারের। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্রের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের বিষোদ্গার করে অল্প সময়ে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে লোকসমাগমের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোয় সমালোচিত হয়েছিলেন স্পাইসার। ১৮২ দিন দায়িত্ব পালন শেষে গত ২২ জুলাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তিনি। এ সময় হোয়াইট হাউজের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান অ্যান্থনি স্কারামুচি।
৩১ জুলাই মাত্র ১০ দিনের মাথায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। এক সাংবাদিকের সঙ্গে টেলিফোনে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তবে অনেকেই মনে করেন, তার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ছিলেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ কারণেই চাকরি হারাতে হয় তাকে।
হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ পদে দায়িত্বে ছিলেন রিন্স প্রিবাস। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে গোপন তথ্য ফাঁসের গুঞ্জন উঠেছিল। এর জের ধরে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সাবেক এ চেয়ারম্যানকে গুরুত্বপূর্ণ এ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তাকে রিপাবলিকান পার্টি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে সর্বশেষ যোগসূত্র বিবেচনা করা হতো। ট্রাম্পের টিম থেকে বরখাস্ত হওয়া সর্বশেষ কর্মকর্তা হলেন স্টিভ ব্যানন।
উগ্র ডানপন্থী ও শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী নেতা ব্যানন বিতর্কিত মার্কিন পত্রিকা ব্রেইটবার্টের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন। একসময় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। পরে বিনিয়োগ ব্যাংকার ও হলিউডে প্রযোজক হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছেন।’
ট্রাম্প প্রশাসনে এনএসসির প্রধান কৌশলবিদ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। হোয়াইট হাউজের অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে তার বিরোধ ছিল বলে শোনা যায়। সাত মাসে পাঁচজন ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ শীর্ষ কর্মকর্তার পদ হারানোয় প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় ট্রাম্প ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়ছেন। রুশসংশ্লিষ্টতা, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য বিরোধসহ আরো নানা ইস্যুতে আগে থেকেই চাপের মুখে আছেন তিনি। প্রশাসন থেকে একে একে ঘনিষ্ঠজনের বিদায় তাকে আরো বেশি চাপে ফেলবে।
Posted ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২০ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta