কক্সবাংলা ডটকম(১৮ জানুয়ারি) :: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপি এবং এর সমমনা রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। দ্রুত নির্বাচন চায় সিপিবি, বাম জোটসহ অন্তত ৪৮টি রাজনৈতিক দল।
তারা অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রার শুরুতে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানালেও এখন দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চাইছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো নিয়মিত বক্তব্য-বিবৃতিও দিয়ে আসছে। তাদের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যও উঠে এসেছে যে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব।
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, নির্বাচন দ্রুত না হলে এই সরকার বিতর্কিত হবে এবং বিশৃঙ্খলা বাড়বে। দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি মনে করে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে বিগত ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের ষড়যন্ত্র’। ফলে নির্বাচনে যত দেরি হবে, এমন সমস্যা তত বাড়বে।
ঢাকায় সম্প্রতি বিএনপির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে চীন ও সিঙ্গাপুরের কূটনীতিকদের। এ সময়ও যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় নিয়ে তাদের আলাপ হয়। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জানিয়েছে, তারা প্রত্যাশা করছে, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
এর মধ্য দিয়ে শুধু দেশের রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই নয়, বিশে^র প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে দ্রুত জাতীয় নির্র্বাচন অনুষ্ঠানের বার্তা উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দিন যত যাবে, দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের চাপ ততই বাড়তে থাকবে। শুধু রাজনৈতিক দলের তরফেই নয়, বিশ^ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও।
গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় ইংরেজি ভাষার টেলিভিশন উইঅন নিউজকে (ওয়ার্ল্ড ইন ওয়ান নিউজ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন, আমেরিকা ও ভারত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়। এতে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন হয়ে গেলে দেশটি তার পরবর্তী অধ্যায় শুরু করতে পারবে। আমেরিকা ও ভারত একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চায়।
বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে আমেরিকা ও ভারতের মনোভাবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, যে সব রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন চাইছে, তারা আরও বেশি দাবি করবে। তারা মানুষকে বোঝাতে চাইবে যে, তাদের সঙ্গে বড় দুটো শক্তি আছে।
বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, দেশে একের পর এক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচন দিতে দেরি হলে সংকট বাড়বে। একই সুর মিলছে বামপন্থি দলগুলোর নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতেও। উপরন্তু
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও অনেকেই একই অভিমত ব্যক্ত করছেন। তবে তারা এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কারও প্রত্যাশা করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদেশিরা তাদের নিজস্ব মতামত, ধারণা দেবেন। আমাদের চিন্তাভাবনা হলো বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, অন্তর্বর্তী সরকার অনির্দিষ্টকাল ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সরকার জনগণকে কথা দিয়েছে, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষমতা নিয়েছে। অতএব যত দ্রুত নির্বাচন করা যাবে এবং জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে, তা এ সরকার এবং দেশের জন্য ততই মঙ্গলজনক।
অবশ্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বলছে, ন্যূনতম সংস্কারে যেটুকু সময় প্রয়োজন, যৌক্তিক সে সময়টুকু নিয়ে সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও কিছু ইসলামিক দল ও সংগঠনও সংস্কারেই অধিকতর গুরুত্বারোপ করছে।
অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দ্রুত নির্বাচন আমাদের জন্য ভালো হবে না। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এরপর নির্বাচন। ডিসেম্বর অথবা আগামী ফেব্রুয়ারির আগে বেসিক সংস্কারগুলো হবে না।
ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের রসায়ন প্রসঙ্গে ড. দিলারা বলেন, অনেকে মনে করেন এখনও আমেরিকা ও ভারত পৃথক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের দিকে তাকায়। আসলে তা নয়। যতদিন পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব থাকবে, ততদিন আমেরিকা ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় একই সুরে কথা বলবে। ভারত ও আমেরিকা দ্রুত নির্বাচন চায়। চাইতেই পারে। কিন্তু এর আগে শেখ হাসিনা যে তিনটা নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) করল, সেগুলো তো নির্বাচনই হয়নি। তখন তো তারা কিছু বলেনি।
আসলে ভারত যেটা চায় সেটাই আমেরিকা এখানে প্রয়োগের চেষ্টা করছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ভারত দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার কে? এসব হলো ভারতের দাদাগিরি। ভারত এখন নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে কারণ তারা আগের অবস্থাকে ফেরত আনতে চায়। একইভাবে চীন যতদিন আমেরিকার শত্রু, ততদিন তারাও ভারতের সুরে কথা বলবে।
সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ভারত ও আমেরিকা দুটোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তারা তত্ত্বগতভাবে চাইবে যে কোনো দেশে সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকারই থাকুক। এটা বলায় অসুবিধা দেখি না। আমাদের দেশের যেসব রাজনৈতিক দল আছে, তারাও নির্বাচন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা এবং অন্য দশটা দেশের বাস্তবতা এক নয়। এখানে একটা বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর আগে একটা গভর্মেন্ট ছিল যারা নিজেরাই নিজেদের বলত, ‘নির্বাচিত সরকার’।
ভারতও তাই বলত। এ দেশের জনগণ কি একই কথা বলত? তিনি বলেন, ইলেকশন জনগণের অংশগ্রহণে হতে হয়। আমাদের দেশে সে ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এ বাস্তবতা না বুঝলে তো হবে না। তাদের (ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র) এ বক্তব্য তাত্ত্বিকভাবে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন দেশ যেভাবে চলছে, সেটা ঠিক আছে।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, আমাদের দেশের পার্টিগুলো নির্বাচন চাইছে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তার বিরুদ্ধে কী তারা আন্দোলনে নেমেছে? নামেনি। কারণ, সরকার নির্বাচন দেবে না, তা তো বলেনি। যেটাকে আমরা সংস্কার বলছি, সেটা সরকারের নির্বাচনী প্রস্তুতিরই একটা অংশ।
প্রতিবেশী ও প্রভাবশালী দুই দেশের বক্তব্য দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ বাড়াবে কি না- এমন প্রশ্নে মাসুদ কামাল বলেন, কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই। কারণ আমাদের দেশের যে ইকোনমি, তা ভারত ও আমেরিকার ওপর একদম নির্ভরশীল না, তা কিন্তু নয়। তবে সেই চাপ আবার এমনও নয় যে, আমরা নিতে পারব না।
জানা গেছে, নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে বিএনপিসহ অংশীজনদের কী অবস্থান, তা জানতে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার গত রবিবার বিএনপি ও অন্য দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। চীনের রাষ্ট্রদূত গত সোমবার বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন।
নির্বাচনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশে কাজ শুরু করছে। ইউএনডিপির একটি প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছে। নির্বাচনে সহায়তা চেয়ে নির্বাচন কমিশন জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছিল, এটি জানিয়ে ঢাকায় সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে কী সহায়তা প্রয়োজন, তা মূল্যায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে ইউএনডিপি কী সহায়তা দিতে পারে, তা জানানো হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরের সময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানেও কারিগরি সহায়তার বিষয়টি উঠে আসে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, তারা দ্রুতই নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে সরব হবেন। আমেরিকা, ভারত, চীনসহ বিশে^র প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচন জরুরি বলে মনে করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফেও ইতোমধ্যে একাধিকবার বলা হয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে তারা গুরুত্ব দেবে।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ সভায় এ বিষয়ে আলোচনার পর দলটির নীতিনির্ধারকেরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় সিদ্ধান্ত জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই। আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। কারণ, এখন তো পুরো দেশের, পুরো জাতির ফোকাসটা হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন হতে পারেনি। মানুষ সে জন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথটাকে পূরণ করতে চায়।’
বিএনপি মনে করে, সরকারের দিক থেকে নানাভাবে জাতীয় নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রক্রিয়ার অংশ। সে জন্য দলটির নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েই এ ধরনের চিন্তার সমালোচনা করছেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মহাসচিব তির্যক প্রশ্ন তোলেন, এ রকম ক্রিটিক্যাল সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তাটা আসে কোত্থেকে?
জাতীয় সংসদ, নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে—এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি জামায়াতে ইসলামী। তাদের সাংগঠনিক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে বলেও জানা যায়নি। তবে তারা যে কোনো জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে জানান একজন কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি জানান, জাতীয় সংসদ, নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে—এ প্রশ্ন জোরালোভাবে সামনে এলে দল এর ভালোমন্দ বিশ্লেষণ করে অবস্থান জানাবে।
তবে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়াই ভালো। একটা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সে সরকার স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এটা যদি না হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে যে লড়াই শুরু হবে, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’
জরিপের সময় বিবিএস মানুষের কাছে কী ধরনের প্রশ্ন করেছিল, মতামত উঠে আসার ক্ষেত্রে তাতে জরিপকারীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ। এ ছাড়া এ সময়ে নাগরিক সেবা বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ মানুষ হয়তো এ ধরনের মতামত দিতেও পারেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘জরিপে কীভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমি জানি না। এ মুহূর্তে মানুষ বিক্ষুব্ধ আছে স্থানীয় সরকারের নাগরিক সেবা নিয়ে। সে কারণে কেউ কেউ এমনটা বলে থাকলে সেটাকে আমি সাধারণভাবেই দেখি। কিন্তু দেশের এখনকার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনই আগে করা উচিত। সরকার নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে কাজ করছে। আমি মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে তারপরই নির্বাচন করা উচিত হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিবলেন, ‘গণতন্ত্র উত্তরণে কোনটা আগে কোনটা পরে, সেটা চিহ্নিত করতে হবে। নির্বাচনের আগে যে সংস্কারগুলো করা যাবে, সেগুলো শেষ করাই হচ্ছে এখনকার জাতীয় অগ্রাধিকার। আমরা মনে করি, সেদিকেই মনোযোগ বেশি থাকা দরকার। আর কোন নির্বাচন আগে করতে হবে, সেটা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
এ মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনই মুখ্য মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সব সময়েই ঝামেলার। এখন এ নির্বাচন করতে চাইলে আওয়ামী লীগের মুখচেনা দাগিরাও ঢুকে যাবেন। এতে এলাকাভিত্তিক গন্ডগোল হওয়ার আশঙ্কা আছে। এটা মোকাবিলার করার মতো যে ধরনের সরকার থাকতে হয়, এ সরকার সে রকম জনসম্পৃক্ত সরকার নয়। তাই আগে জাতীয় নির্বাচন হওয়াই উত্তম।
আবার দলীয় সরকারের অধীন অতীতের স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। সে অভিজ্ঞতা থেকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হলে মন্দ হবে না বলেই মনে করে।
চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা হলো, দলীয় সরকারে অধীন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না। এবার সে আশঙ্কা থাকা উচিত নয়। কারণ, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারের পরই তো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। বিবিএসের জনমত যদি সঠিক হয়, তাহলে আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে মন্দ হবে না। এতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বোঝা যাবে।’
আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন রয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ সংগঠনের মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার কার্যকর না থাকায় জনভোগান্তি হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলাও ঠিকমতো কাজ করছে না। বিবিএসের জরিপের ফলাফলে আমাদের দাবির যৌক্তিকতারই প্রতিফলন ঘটেছে। আগামী দিনে যৌক্তিক নির্বাচন হচ্ছে গণপরিষদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া যৌক্তিক।’
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করছেন, সরকারের উচিত সিরিয়াসলি নির্বাচনমুখী হওয়া। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারকে খুব বেশি সিরিয়াস দেখা যায়নি। সরকার একবার বলছে ২০২৫ সালের শেষে, আবার বলছে ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচন দেবে। এত লম্বা সময়ের পরও নির্বাচনের সময়টা কনফার্ম করা যাচ্ছে না।
ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে অনাস্থা ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আবার সরকারের কার্যক্রমেও কিন্তু বোঝা যায়নি যে, সরকার নির্বাচন দ্রুত করতে খুব আগ্রহী। অথচ সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের বোঝানো যে, তারা দ্রুত নির্বাচন দিতে চায়। আমি মনে করি সরকারকে খুব সিরিয়াসলি নির্বাচনমুখী হওয়া উচিত।’
Posted ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta