কক্সবাংলা ডটকম(৪ জুন) :: সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, কক্সবাজারে ‘মোরা’ দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাস্তাঘাটের দুরবস্থা দেখে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে বলেছেন, ‘তোমাকে আগামীতে আর মনোনয়ন দেব না।’
তবে আবদুর রহমান বদি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে দাবি করেছেন, ‘এ ধরনের কথা যোগাযোগমন্ত্রী বলেননি। কিছু সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে লিখে মজা পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘উনি (ওবায়দুল কাদের) যতদিন এমপি থাকবেন, আমিও ততদিন থাকব। যখন সংসদ ভেঙে যাবে, তখন প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন, কাকে নমিনেশন দেবেন।’আবদুর রহমান বদি আরও অনেক প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত চার বছর ধরে রাস্তা মেরামত করা হয় না। সেই রাস্তার মেইটেনেন্স কি এমপি বদি করবেন, না যোগাযোগমন্ত্রী করবেন? ওই রাস্তার মালিক এমপি বদি, নাকি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়? আমি যদি রাস্তার মালিক হয়ে থাকি, তাহলে মন্ত্রী যা বলেছেন, তা সত্য। আর যদি রাস্তার মালিক না হয়ে থাকি, তাহলে মন্ত্রী কিছু বলেননি।’
তার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে এমপি বদি বলেন, ‘আমি সাজাপ্রাপ্ত হলে কিভাবে সংসদে যাই? সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে প্রশ্ন করলে আমার উত্তরটা পেয়ে যাবেন।’
একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে দেওয়া এমপি বদির সাক্ষাৎকারটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:

যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, আগামীতে আপনাকে আর মনোয়ন দেবেন না।
সেটা কি আপনি শুনেছেন?
না শুনি নাই, পড়েছি। লেখা দেখেছি।
লেখা দেখে থাকলে সেটা দেখে আপনিও যা ইচ্ছা, তাই লিখুন।
তাহলে ঘটনাটি কী?
কোনও ঘটনাই নেই, কোনও ঘটনাই ঘটেনি।
আপনি ও ওবায়দুল কাদের সাহেব তো একসঙ্গে ছিলেন।
ইয়েস, আমরা দুজন তো একসঙ্গেই…
উনি রাস্তাঘাটের খারাপ অবস্থা দেখে বলেছেন, ‘তোমাকে আর মনোনয়ন দেব না।’
ভেরিগুড। আমার রাস্তা, নাকি সড়ক ও জনপদের রাস্তা? গত চার বছর ধরে ভেড়িবাঁধ মেরামত হয় না। এটা সড়ক ও জনপথের রাস্তা। মেরামতের দায়িত্ব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। এটা আমার না।
ওবায়দুল কাদের সাহেব তাহলে এ রকম কথা বললেনন কেন?
এ সব কথা আমাকে তিনি বলেননি। আমি কিছু জানিও না। আমার এন্ট্রি যারা আছেন, তারাই এসব বলেন। আমাকে কেউ এ বিষয়ে প্রশ্নও করেননি। আমি শুনিও নাই। আমি তো জনপ্রতিনিধি। আমার এলাকার জনগণের কথাই শুনতে হবে।
যে রাস্তা দিয়ে আপনারা যাচ্ছিলেন, সেই রাস্তা ভাঙাচোরা ছিল, তখন যোগাযোগমন্ত্রী এই কথা বলেছিলেন কিনা?
রাস্তা খারাপ! রাস্তা তো উনার, আমার না। রাস্তা যদি খারাপ হয়, তাহলে দোষটা কার? কার রাস্তার দোষ কার ঘাড়ে এসে পড়বে? যে রাস্তা দিয়ে তিনি গেছেন, সেটা যোগাযোগমন্ত্রীর কিনা, নাকি এমপি বদির? সেই রাস্তার মেইটেনেন্স কি এমপি বদি করবেন, নাকি যোগাযোগমন্ত্রী করবেন? ওই রাস্তার মালিক এমপি বদি, নাকি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়? আমি যদি রাস্তার মালিক হয়ে থাকি, তাহলে মন্ত্রী যা বলেছেন, তা সত্য। আর যদি রাস্তার মালিক না হয়ে থাকি, তাহলে মন্ত্রী কিছু বলেননি। আমার এন্ট্রি সাংবাদিকরা মিথ্যা লিখে দিয়েছেন। তারা মিথ্যা প্রকাশ করছেন।
আপনাকে নমিনেশন দেওয়া হবে না…
এখন কাউকে নমিনেশন দিচ্ছে না। সামনের নির্বাচনের নমিনেশন দেওয়ার কথা। এখনও সময় আসেনি। আমি যতদিন এমপি আছি, যোগাযোগমন্ত্রীও ততদিন এমপি আছেন। মন্ত্রিত্ব চলে যেতে পারে, তবে তিনি এমপি থাকবেন। উনি যতদিন এমপি থাকবেন, আমিও ততদিন থাকব। ঠিক কিনা বলেন? যখন সংসদ ভেঙে যাবে, তখন প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন, কাকে নমিনেশন দেবেন। আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটা আছে না? তারা এসব লেখাচ্ছে। তারা নমিনেশন চায়। তারা একটু মজা নেওয়ার জন্য লিখছে। আমিও মজা নিচ্ছি। আমিও বলছি তোরা লেখ।
তাহলে আপনার মূল কথা কী?
রাস্তাটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। পত্রিকায় মন্ত্রীর বক্তব্য দিয়ে যা ছাপা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা। আমার প্রতিপক্ষ আমাকে হেয় করার জন্য, না বুঝে, না শুনে এই কথাটুকু বলেছে। যা আদৌ সত্য না। সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে প্রয়োজন হলে মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
মামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রী আপনার ওপর ক্ষুব্ধ?
আমার মামলার সঙ্গে মন্ত্রীর ক্ষুব্ধ থাকার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা মতো অনেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামিই আছেন, তারাও সংসদে যান। আমি সাজাপ্রাপ্ত হলে কিভাবে সংসদে যাই? সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে প্রশ্ন করলে আমার উত্তরটা পেয়ে যাবেন।
জানা গেছে, বদির ইয়াবা সামাজ্য, মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, টেন্ডারবাজি, দখলদারিসহ নানা ধরনের অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে একপর্যায়ে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শরণাপন্ন হয়েছিলেন কক্সবাজারের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ২০১০ সালের ১২ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বদির নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন তারা। এ সময় বদিকে সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি বছর জানুয়ারিতে কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে মাদকবিরোধী অভিযান ও প্রচারণা অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে আবদুর রহমান বদি বলেছিলেন, ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা কেউ প্রমাণ করতে পারলে তিনি সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করবেন। যদিও এ ঘোষণা মুখেই রয়ে গেছে।
গত ৬ মে কক্সবাজার সৈকতের কাছের স্টেডিয়ামে দলীয় জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কক্সবাজারের একটা বদনাম আছে, এখান থেকে নাকি ইয়াবা পাচার হয়। ইয়াবা পাচার বন্ধ করুন। যারা ইয়াবা পাচারে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা যত শক্তিশালী হোক, ছাড় দেয়া হবে না। কারণ তারা দেশের জন্য অভিশাপ।’ শেখ হাসিনা যখন এ বক্তব্য দেন তখন সমাবেশ মঞ্চে ছিলেন বদি। এ সময় তাকে অনেকটাই বিমর্ষ দেখা যায়। শুক্রবার ওবায়দুল কাদেরের বদিকে মনোনয়ন না দেয়ার হুশিয়ারি সেই ধারাবাহিকতারই অংশ বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এছাড় মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে জীবনে প্রথম এমপি হওয়ার পর পাঁচ বছরে তার আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। আর নিট সম্পদ বেড়েছে ১৯ গুণের বেশি। অভিযোগ রয়েছে, হলফনামায় বদি কেবল আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি গত পাঁচ বছরে আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও টেকনাফে জ্বালানি তেলের ব্যবসা করে এ টাকা অর্জন করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। হলফনামা অনুসারে এমপি বদির বার্ষিক আয় ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা ভোটে দ্বিতীয় দফায় এমপি হয়ে বদির সম্পদ আরও ফুলেফেঁপে ওঠে।