বিশেষ প্রতিবেদক(২২ জুন) :: কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুরে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে র্যাব। ২০ জুন দিবাগত রাত ১ টার দিকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ৩ ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলো- স্থানীয় ফকিরখালী পাড়ার নুর আহম্মেদ ছেলে দুধর্ষ শিবির ক্যাডার মৌং হাবিবুর রহমান হাবিব (৩২), বাড়িয়াছড়ির মৃত নুরুল আফছার এর ছেলে মোঃ নাসির উদ্দিন (৩০) এবং উত্তর নলাবিলার আজিজুল হক এর ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৪)।
উদ্ধার হওয়া অস্ত্রে মধ্যে রয়েছে, ১৩টি ওয়ান শুটারগান, ২২ টি ১২ বোর শর্টগানের গুলি, ৪০৮ টি ৫.৫ মিমি/২২ গুলি। এছাড়াও নগদ ২৩ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়। র্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিনের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।
তবে, আটক হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি ভিন্ন কাহিনী উল্লেখ করলেও অন্যদিকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৭ এর কক্সবাজার কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোঃ রুহুল আমিন জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শাপলাপুর এলাকায় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করার লক্ষে অবৈধ অস্ত্রসহ অবস্থান করার খবর পেয়ে র্যাব সেখানে অভিযান চালায় বলে জানান।
অভিযানে তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মতে স্থানীয় এনামুল হকের বসতবাড়ীর পূর্বদিকের দোচালা গোয়ালঘরের ভিতরে খড়কুটার মধ্যে তল্লাশী করে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয় বলে প্রেস ব্রিপিং ও জানানো হয়।
প্রশাসনের তথ্যমতে জানা যায়, অস্ত্রের চালানটি শিবির ক্যাড়ার মৌং হাবিবের এবং লক্ষাধিক জাল টাকা নিয়ে সে র্যাবের। হাতে গ্রেফতার হন। শাপলাপুরের একজনকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই র্যাবের জালে বন্দি হন প্রভাবশালী এই সোর্স।
তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার এবং মহেশখালী থানায় ১০ টি মামলা আছে। যার বিরুদ্ধে কক্সবাজার মডেল থানায় হত্যা মামলা নং ৩৪/১৩ ইং জিআর মামলা নং ১৯২/১৩ইং, মহেশখালি থানা হত্যা মামলা নং ১৭/১৪ইং জিআর নং ৪৫/১৪ইং, কক্সবাজার থানা আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও হত্যা মামলা নং ৩৫/১৩ইং জিআর নং ১৩০/১৩ইং,কক্সবাজার থানা হত্যা ও জঘম ৩৬/১৩ইং জিআর ১৩১/১৩ইং।
এ ছাড়াও মহেশখালি থানা নারী অপহরণ ১৯/১২ইং জিআর ১৪২/১২ইং, মহেশখালি থানা চাদা দাবি মামলা ১৫/১৪ইং জিআর নং ৪৩/১৪ইং, মহেশখালি থানা চাদা দাবি মামলা নং ১৫/১৩ ইং জিআর ১৫/১৩ ইং, মহেশখালি থানা ২৯/১৩ইং হত্যা চেষ্টা মামলা জিআর ৫৮/১৩ইং,মহেশখালি থানা হত্যা চেষ্টা মামলা ৩৩/১৩ইং জিআর ৭০/১৩ইং,মহেশখালি থানা হত্যা মামলা নং ০৬/০৫ইং,জিআর মামলা নং ১৯৫/০৫ইং মামলা সহ অসংখ্য মামলা চলমান রয়েছে জানা যায়।
দীর্ঘদিন পুলিশের নাগালে থাকলেও অদৃশ্য কারনে তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। সে র্যাব সোর্স পরিচয়ে এতদিন পুরো কক্সবাজার অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মৌং হাবিবের গ্রেফতার খবর শুনে মহেশখালীতে মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। যদিও কিছু সাংবাদিকের চোখে শিবির ক্যাডারের এসব নৈপথ্য কাহিনী উঠে আসেনি । এমনকি স্থানীয় প্রশাসন ও গনমাধ্যমের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে প্রতাপশালী সোর্স হাবিব তার অপারাধের রাজত্ব কায়েম করত বলে দাবি করে এলাকার মানুষ।
এ বিষয়ে মেজর রুহুল আমিন বলেন, ডাকাতি, লবণ চাষীদের নিকট থেকে চাঁদা আদায়, মাছের ঘের হতে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় সন্ত্রাসীরা। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য সন্ত্রাসীরা সব সময় অবৈধ অস্ত্র মজুদ রাখে। আটক অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ওইসব সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহের জন্য অস্ত্র বেচাকেনা করছিল। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা এই কথা স্বীকার করেছেন।
আটককৃত বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করে তাদেরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন।
তার গ্রেফতারের বিষয় নিয়ে স্থানীয় শিবির এর বক্তব্যে জানা যায়,সে ছাত্রজীবনে শিবির করলেও অপকর্মের দায়ে বহিস্কার হয়েছিল। তার অত্যাচার থেকে স্থানীয় জামায়াত শিবির ও বাদ পড়েনি। তার এসব অপকর্মে বাধা দেয়ায় অনেককে মিথ্যা মামলা সহ হামলার শিকার হতে হয়েছে অনেককে এমন মন্তব্য করেন।
মৌং হাবিবের অপরাধের তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সে অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি, কলাতলী হোটেল মোটেল জোনে তার আস্তানা গড়ে তোলে। যেখান থেকে সে প্রতিনিয়ত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজেকে র্যাবের সোর্স পরিচয়ে বড় বড় ইয়াবা চালান চালিয়ে যেত।
সেই সাথে কক্সবাজার ভুমি অধিগ্রহণ শাখায় অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে দালালী করে অসহায় মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিত।এসব অপকর্ম করে নিতান্ত অভাবী পরিবার থেকে আজ কক্সবাজার শহরে গাড়ি বাড়ির মালিক বনে যায়।
কেউ তার ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস পায়নি এতদিন, কেননা কেউ মুখ খুললে তাকে মিথ্যা মামলা, এবং তার বাড়িতে অস্ত্র রেখে র্যাব দ্বারা গ্রেফতার করাতো। অতীতেও অনেক অসহায় লোক তার রোষানলে পড়ে মাটির নিচে চলে যেতে হয়েছে, আবার অনেকে ভিটাবাড়ি ছাড়তে হয়েছে।
এলাকাবাসীর বক্তব্য মৌং হাবিব মহেশখালীর দ্বীপের বড় ত্রাসের নাম, তার কারণেই যত খুনাখুনি, অস্ত্রের ঝনঝনানি হত। তার কুনজর যার ঊপর পড়েছে সে সর্বশান্ত হয়েছে। তার গ্রেফতারে এলাকাবাসী স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছে এবং মিষ্টি বিতরণ চলছে।
Posted ৪:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta