মঙ্গলবার ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মানিক বৈরাগীর একগুচ্ছ শীতের কবিতা

শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২০
1435 ভিউ
মানিক বৈরাগীর একগুচ্ছ শীতের কবিতা

কক্সবাংলা ডটকম(১১ জানুয়ারী) ::

শীতবালা

এই মধ্যরাতে প্রতীক্ষায় থাকি
মুটোফোন খোলা রয়, জেগে থাকে হৃদকর্ণ
খোলা চরে বিহঙ্গ রাতে কুয়াশা উৎসবে
আগুন পোহাতে নগ্নহাত টেনে, নিবিড় ঝাউয়ে
নিশিতে গান্ধী শালে লতাবে উষ্ণ চুমায়।

এখানে কুয়াশারা মিহিনদানা, খেজুরের গরম রসে
ভাপা পিঠা, কালোবিনির দুচোয়ানি সাথে কাঁকড়ার ঝোল
সারি সারি কুইশ্বল ক্ষেত, মাঝখানে পাহারা চৌকি
কত নিশি জড়াজড়ি করে বিহঙ্গ রাত কেটেছে আবেশ-আবেগে

মাঘরাতে কুইশ্বল চুষে পেচ্ছাব ফেলেছো তচ্ছল্লায়
কেউ কি জানে, জেগে আছ শীতবালা?
এসো আবারো কৈশোর হই।

আগুনমুখি

আর কোনও সত্য নেই আগুনমুখি তুমিই ঈশ্বরি
হিমেল বুকে বহ্নিকণা ফোটাও, ফুলকি ছোটাও জোরসে
উদ্বায়ী তরল বাষ্পিত করো ধোঁয়ায় বাঁকখালি চরে
এখানে চরম শীত শনফুলে এসেছি মধুকর
পাখনা মেলো মাধুকরী।

নাজিরার টেকে লালকাঁকড়া বালি শিল্পের প্রতিরূপ দেখি তোমায়
কাছিমের ডিমে গঙ্গা কৈতর ওম দেয়, গোবাক পাতার ছায়ায়
একবার এসো মাধুকরী প্রাণেশ্বরী হিমেল হাওয়ার রাতে দারুণ উষ্ণতায়।

এখন আর কারো জিকির করি না, তুমিই একমাত্র প্রার্থনা

মাঘের শীত

কুয়াশা ভেজা পাখি দারুণ রূপবতি হয় মাঘে হাড় কাঁপানো শীতে। তোমার পাখির রূপ জৌলুস মায়া খাসলত।

এ ঢালে খুটে খাও, ও ঢালে বসে গাও অন্য মন্ত্রের গান।

কুয়াশা ভেজা ভোরে মনের দেরাজে গভীর যত্নে তুলে রাখি কোকিলা সুর।

নবরূপে ফিরেছে গ্রামোফোন রেকর্ড। কত যন্তর মন্তর সিডি, প্যান ড্রাইভ নামে।

ওসব ডিক্সে ডাউনলোড করে সেইভ করেছি শৈত্যপ্রবাহের ঝিরঝির সুর হাওয়ার মন্ত্র থেকে।

কম্পুটারের হার্ড ডিক্সে কুয়াশার এন্টি ভাইরাসের ভার্সুয়াল পর্দা সাজিয়েছি জানালায়।

বড়ই আপসোস কবি মহাদেব সাহার, ভোরের সূর্যোদয় দেখতে পায় না বিলাসী ঘুমের স্বভাবে।

হাসান তীব্র দেহ যন্ত্রণাকে ঘুষি মেরে উড়িয়ে দিয়ে মাঘের হিমেল হাওয়ায় প্রার্থনা করে সূর্যদেবের, কুয়াশা ভেজা প্রভাতে হাসপাতালের কেবিনের বারান্দায় বসে চা খায় সুরাইয়ার সাথে।

আমিও তোমার মতো নিশি জাগি কুয়াশা পোহাই, রবির কিরণে জাগি ভেজা ঘাসেও কাঁথায়।

পৌষ পার্বনে

পৌষে রাতের গভীরে ডাহুকটি ডাকছে করুণ আর্তস্বরে, নীরব নেই পেঁচাটিও।

গলির মোড়ে মোড়ে বেওয়ারিশ সারমেয়রাও নীরব।

ঘোড়দৌড় ময়দানে সাপ বেজি হুল্লোড় করে ঝুপড়ি ঘরের শীৎকার শব্দে।

জেগে ওঠা শুকতারা, আমি তাকিয়ে থাকি মনোবীক্ষণ চোখে।

দেখি কার গায়ের উপর হেলে পড়ে। চোপা গলির মুখে রকে অনড়ভাবে বসে আছে অচেনা কোনজন।

নাইট গার্ড এই সময়ে ফুলির মায়ের সাথে লেপ্টে থাকে। ছায়াহীন কায়া কায়া ভাব নিয়ে কোনজন?

তবুও তারার কমতি নেই আকাশে।

উজ্জল কয়েকটি উল্কা ক্ষিপ্র গতিতে ছুটছে গণিকালয়ের দিকে।

উল্কাদেরও যৌন ক্ষুধা আছে বুঝি।

এসব অশুভ লক্ষণ না দেখাই ভালো। তবুও চোখ চলে যায়, মন ছুটে ঐদিকে।

বেহায়া মন বলে, লাভ। এই শীতে প্রতিটি দেহই চায় দেহের উষ্ণতা।

পৌষের মাঠে ধান কাটা হয়নি শুরু। জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিতে কৃষি ও কৃষক সমাজ।

গভীর রাতে পেঁচার ডাক শুভ নয়।

ধুর ওসব কুসংস্কার, অথচ গত দুপুরে একটি হলুদিয়া পাখি ডেকেছিল চাঁদমারিতে বন ভোজনে।

পাহাড়ে জলপাই শান্তিতে বিরাজ করছে।

পপি চাকমা কতবার ডেকেছে যেতে, আমি উর্দি পরা সেপাইদের ভয় পাই।

এই জোছনা পবনে বন মোরগের ঝুল দিয়ে বিন্নি ভাতের রসে টুইটুম্বুর হয়ে পপি জড়িয়ে উষ্ণ উত্তাপে দেহ আদিম রোগের মুক্তির স্বাদ পেত।

সুপ্রিয়া বলেছে, পৌষের তাড়িরসের সাথে প্যারাবনের ছোট মাছের চচ্ছড়ি খাওয়াবে।

বানাবে খোয়াপিটা, মাটির চুলোর ছাইয়ের আগুনে পুড়িয়ে তরতাজা খেজুর রসে চুবিয়ে খেলে অমৃতর স্বাদ পাওয়া যায়।

আর শীত তাড়াতে চুকচুক পান করো নতুন পুরান মিশ্রিত তাড়ি।

হলনো যাওয়া হবে না, জমে থাকে আশা, ডেকে যাক হলুদিয়া পাখি।

কোথাও যাব না, যে ক`পুরিয়া গঞ্জিকা আছে তার সুব্যবস্থা করে কবিতার ধ্যানে মশগুল রবো।

শীত স্মৃতি

কুয়াশা ঝরা চাদোয়া রাতে
তাড়ি খোলার মাঠে শীত পিঠা হাতে
চুবিয়ে চুবিয়ে চোখে চোখ রেখে
করেছি পান তোমাতে আমাতে স্পর্শের বাইরে।
কি বোধ জেগেছিল, মেতেছিলাম ভাব ও বাস্তবতায় টলে ও দুলে
তাবত বিষয় ও আশয়ে
টিনের চালে টুপ টুপ কুয়াশার শব্দে ঘুম ভাঙে মধ্যরাতে।
সে কী উদ্যম তারুণ্যে বিয়োগ লেন্সের
চশমায় অবাক করা রূপে লাবণ্য ঝরে
নিটোল অভয়বে, লুকিয়ে তাকাতেই স্তনের ঝিলিকে ভেবাচেকা খাওয়া চোখ
নির্বাক মুখ দেখে। কোমল স্পর্শের ধাক্কা, তড়িতাহত বুক এখনো বাজে
আমি হাত বুলিয়ে করি অনুভব, তুমি কি করো, দূর প্রবাসে?

শীত রাবনের আহ্বান

বহু ফলের রসে মাতাল মৌতাত শীতের নগর।

মৌসুমি শৈত্য প্রবাহে জুবুথুবু তুমি ওম নিতে আসো তপ্ত বুকের অলিন্দে।

এখানে ঠিক ঠিক ভোরে সূর্য ওঠে অসীম প্রতাপে।

কুয়াশা পালায় আমার দৌড়ের নৈরাজ্যে।

পাড়ার বুড়িটি ঠিক হিম হিম বাতাসে ঝুপড়ি দোকানে ধুপি পিঠার পসরা সাজায়।

গুড়ের রসে চুবিয়ে খায় দারুণ আহ্লাদ।

উঠতি যুবকেরা তাড়ি রসে চুবিয়ে খায় লাল লাল পুড়া পিঠা।

তুমি এসো আমরা ফলজ রসের তাপে ও ধোঁয়ায় চিবিয়ে খাব জড়তা ও আড়ষ্টতা উদ্যমে।

এখানে ইউরোপ কাশ্মীরের মতো বরফ ঝরে না, রাতের কুয়াশায় ভিজে বৃক্ষরা দারুণ টগবগে তারুণ্য পায়।

সবুজ পেলবতা ছড়ায় সবুজের শীতের আস্কারায়। আমাদের দেশে শীতে পাখি নয়, বৃক্ষও দারুণ যৌবন প্রাপ্ত হয়।

তুমি এসো এই নগরে। তোমাকে নিয়ে খোলা জিপে চড়ে কুদঙ গুহায় বেড়াতে যাব।

ওখানে আদিবাসী তঞ্চগ্যা পাড়ায় নিশি পোহাবো।

এসো লক্ষ্মীদেবি, মিথ্যে চরিত্রের রাবন হবো না।

প্রেমিক রাবন একবার খোঁজে দেখো এই শীত নগরে পাশের সমুদ্রে।

শীতার্ত ক্ষত

শীত এলেই চন্দ্রাহতের ঝলসানো ত্বকে ফোসকা ফোটে
জলপাই তেলের লেপনেও কমে না জ্বালা
ঈশ্বরের রূপে পোড়ে তুর পাহাড় আজ চোখের পবিত্র সুরমা
আমার পোড়া ক্বলবের কী হবে খোদা!

জিকির করি পিরিতির সুরে, পড়ি সখির নামে
পাথর হৃদয় হেঁটে যায় আমার দুয়ার দিয়া
আমি তার চলনের ঠাঁট, রূপের বাহার দেখতে দেখতে
আমার চোখ আজ হাজরে আসওয়াদ
আমার এ দেহখানা জবলে আঘাত।

এই শীতে সব ক্ষত জমে হিমালয় পাহাড়।

কবি পরিচিতি : মানিক বৈরাগী-নব্বই দশকের প্রগতিশীল ছাত্রনেতা। প্রকাশিত গ্রন্থ পাঁচটি। তিনটি কবিতার, দুটি শিশুতোষ গল্প। সম্পাকদ: ছোট কাগজ ‘গরান’

1435 ভিউ

Posted ১:১১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com