কক্সবাংলা ডটকম(৩১ আগস্ট) :: ভোক্তাব্যয় ও ব্যবসায় বিনিয়োগের সুবাদে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ গতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকেও অর্থনীতির এই গতি অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠার খবরে ইয়েনের বিপরীতে গতকাল ডলারের মান দুই সপ্তাহের সর্বোচ্চে উঠেছে। খবর এএফপি ও রয়টার্স।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বার্ষিক ৩ শতাংশ হারে জিডিপি সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে। প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ।
তৃতীয় প্রান্তিকেও মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী ভাব ধরে রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। খুচরা বিক্রি ও বিনিয়োগে এরই মধ্যে সে ধরনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে কর্মী নিয়োগও বেড়েছে দেশটিতে। বুধবার প্রকাশিত এডিপি ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্টে দেখা গেছে, আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতে মোট ২ লাখ ৩৭ হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে; বিগত পাঁচ মাসের মধ্যে বেসরকারি খাতের সর্বোচ্চ নিয়োগ এটি। রয়টার্সের জরিপ ও এডিপির পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, আগস্টে ১ লাখ ৮৩ হাজার জন বেসরকারি খাতে নিয়োগ পাবে। দেশটিতে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে স্থিতিশীল থাকবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের সমন্বিত চিত্র প্রকাশ করা হবে। আশা করা হচ্ছে সরকারি প্রতিবেদনে আগস্টে মসৃণ কর্মসংস্থানের তথ্য পাওয়া যাবে। অর্থনীতি ও শ্রমবাজারের ইতিবাচক খবরের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঝুড়িতে অন্তর্ভুক্ত মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের মান আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মান ১১০ দশমিক ৬২-এ পৌঁছেছে; ১৬ আগস্টের এটি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থা।
অর্থনীতির সূচকগুলোর স্থিতিশীল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন ডিসেম্বরে নীতিনির্ধারণী বৈঠকে সুদের হার বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ওয়ান্ডার এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের ট্রেডিং শাখার প্রধান স্টিফেন ইনস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খুব শিগগিরই মজুরি বৃদ্ধির উপাদানগুলো ঊর্ধ্বমুখী হওয়া শুরু করবে।’
এদিকে অর্থনীতি ও শ্রমবাজারের ইতিবাচক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ফেড শুধুমাত্র সুদের হার বৃদ্ধিই নয়, পরিকল্পিত পোর্টফোলিও হ্রাসের কার্যক্রমও শুরু করবে। অক্টোবর থেকে ট্রেজারি বন্ড ও বন্ধকি ঋণভিত্তিক সিকিউরিটিজের ৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের পোর্টফোলিও কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে ফেড।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি বৃদ্ধির পাশাপাশি বছরের প্রথমার্ধে দেশটির অর্থনীতি ২ দশমিক ১ শতাংশ সম্প্রসারিত হয়েছে। গত মাসে প্রকাশিত প্রাথমিক হিসাব ১ দশমিক ৯ শতাংশের তুলনায় যা বেশি। চলতি বছরের জন্য ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কর ব্যবস্থায় মিশ্র সংকোচন, নীতিমালা হ্রাস ও অবকাঠামো খাতে ব্যয় বৃদ্ধির সুবাদে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে আশা করছেন তিনি। যদিও দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত অর্থনীতি-সংক্রান্ত কোনো ধরনের আইন পাস করাতে সমর্থ হয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া কর ব্যবস্থা সংস্কার ও অবকাঠামো ব্যয় নিয়েও গোছানো কোনো পরিকল্পনা দাঁড় করাতে পারেননি তিনি। অবশ্য ওয়াশিংটনে যে রাজনৈতিক স্থবিরতা চলছে তা এখন পর্যন্ত ব্যবসা বা ভোক্তা আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ভোক্তাব্যয়ের অবদান এক-তৃতীয়াংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটিতে ভোক্তাব্যয় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে; যা এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ গতি। জুলাইয়ের প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছিল, ভোক্তাব্যয় ২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়বে। এ সময় ক্রেতারা গাড়ি, সেলফোন, আবাসন ও পরিষেবা খাতে পূর্ব ধারণার চেয়েও বেশি ব্যয় করেছেন। ভোক্তাব্যয় বাড়লেও মজুরিতে প্রবৃদ্ধি অনুপস্থিত থাকায় সঞ্চয় কমে গিয়েছে দেশটিতে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চয় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে সঞ্চয়ের হার পূর্ব হিসাব অনুযায়ীই রয়েছে (৩ দশমিক ৮ শতাংশ)।
সঞ্চয়ে গতি না থাকায় ভোক্তা ব্যয়ের গতি স্থিতিশীল থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ মার্কিন ক্রেতারা অনেক সময়ই ভোগব্যয়ের অর্থ সঞ্চয় থেকে জোগাড় করে থাকে। অন্যদিকে ভোগব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি খুব একটা বাড়েনি। খাদ্য ও জ্বালানি বাদে ব্যক্তিগত ভোগব্যয়ের মূল্য সূচকটি (পিসিই) দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যবসায় খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ হয়েছে। সরঞ্জাম খাতে বিনিয়োগ ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
Posted ২:১৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta