রবিবার ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত : যেসব প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
17 ভিউ
মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত : যেসব প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে

কক্সবাংলা ডটকম(৩০ জানুয়ারি) :: আমেরিকা ফার্স্ট নীতিকে প্রাধান্য দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিনেই প্রায় সব বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করার নির্বাহী আদেশ জারি করেন।

বিদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে।

ইতোমধ্যেই দেশটির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মীদের হোম অফিস করার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক সহায়তায় পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য দেশটি ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে।

শুধু ইসরায়েল ও মিসরকে এর বাইরে রাখা হয়। আপাতত তিন মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি।

সহায়তার আওতায় থাকা প্রকল্পগুলো বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা এই সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক সহায়তা-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশকে প্রতিবছর দেওয়া সহায়তার পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

এর আগের বছরগুলোয় ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এই সংখ্যাটা প্রায় ৪৯০ মিলিয়ন ডলার।

ইউনাইটেড স্টেটস্ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএইডের তথ্য বলছে, এই অর্থ যেসব খাতে ব্যবহৃত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা, পরিবেশ ও জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার জন্যও বরাদ্দ ছিল এতে।

ইউএসইডের বরাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, অন্যান্য বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি কার্যক্রমের অর্থায়ন বজায় থাকবে। কিন্তু তিন মাসের জন্য অন্য সহায়তা প্রকল্পগুলো থমকে যাওয়া বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে? এতে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন?

ইউএসএইডের কার্যক্রম

জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকের মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমেও বিভিন্ন দেশে সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটির সহায়তার উল্লেখযোগ্য অংশ আসে ইউএসএইডের মাধ্যমে।

বাংলাদেশে এই সংস্থাটির কার্যক্রমের মূল ক্ষেত্রগুলো হলো౼

খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি

বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে ইউএসএইডের তরফে। এর মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্যপ্রাপ্তির সুযোগ মেলে প্রকল্পের আওতাধীন প্রান্তিক মানুষের। এ ছাড়া জলবায়ু সহনশীল কৃষিপ্রযুক্তি উন্নয়নেও সহায়তা করে তারা।

দক্ষিণাঞ্চলে ২৩টি জেলায় এমন প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছিল বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

গণতন্ত্র মানবাধিকার ও শাসন

বাংলাদেশে সুশাসন ও জবাবদিহি বৃদ্ধিতেও ইউএসএইডের বিভিন্ন প্রকল্প চলমান ছিল। সংস্থাটির মতে, সরকারের প্রতি নাগরিকদের আস্থা বাড়াতে এবং মানবাধিকার রক্ষায় সহায়ক এসব প্রকল্প।

পরিবেশ ও জ্বালানি

পরিবেশ ও জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা উন্নয়নে কাজ করার কথা বলছে ইউএসএইড, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে।

স্বাস্থ্যসেবা

মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে এবং সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ইউএসএইড। এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে সহায়তা করে বলে দাবি তাদের।

শিক্ষা

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউএসএইডের কর্মসূচি পরিচালিত হতো। শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ করে তারা।

রোহিঙ্গা শরণার্থী সহায়তা

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় ভূমিকা পালন করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলো। শরণার্থীদের জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে তারা।

প্রকল্প বন্ধ ও স্থগিত করেছে উন্নয়ন সংস্থাগুলো

কর্মসূচির ব্যাপ্তি ও বিপুল কর্মীসংখ্যার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি ও অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে পরিচিত ব্র্যাক।

বাংলাদেশ ভিত্তিক সংস্থাটির কাজ রয়েছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর বাংলাদেশসহ মোট চারটি দেশে ৯টি কর্মসূচি স্থগিত করেছে সংস্থাটি।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘বাংলাদেশে মার্কিন অর্থায়নের ছয়টি প্রকল্প স্থগিত করেছে তারা। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প সরাসরি আমরা বাস্তবায়ন করি, তিনটি অন্য এনজিও দিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান ও লাইবেরিয়ায় ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের চলমান তিনটি প্রকল্পও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।’

‘ডাইভারসিটি ইনক্লুশনের (বৈচিত্রের অন্তর্ভুক্তি) প্রজেক্ট থাকলে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমাদের নির্দিষ্টভাবে ডাইভারসিটি ইনক্লুশনের প্রোগ্রাম নেই নির্দিষ্টভাবে। ফলে একেবারে বন্ধ বা বাতিল করতে হয়নি। কিন্তু ডিরেক্ট ফান্ডের প্রজেক্টগুলো আপাতত স্থগিত রাখতে হয়েছে,’ বলছিলেন আসিফ সালেহ।

এসব প্রকল্প থমকে যাওয়ার কারণে অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে জানান তিনি। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, যদি পর্যালোচনার পর প্রকল্পগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়, সেটি ছোট এনজিওগুলোর জন্য একটা বড় ধাক্কা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল আরেকটি উন্নয়ন সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তাদের দুটি প্রকল্প আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কয়েকজনকে হোম অফিস করতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সবার মধ্যে।’

পরিস্থিতি কতটা গুরুতর?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই প্রান্তিক পর্যায়ের কর্মতৎপরতা চালিয়ে আসছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো। বিদেশি অর্থায়নে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে তারা।

এসব প্রকল্পে ক্রমেই বেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা কিংবা জলবায়ু-সংক্রান্ত যে প্রজেক্টগুলো আমেরিকার অর্থে চলছে, এগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, এই তিন মাসে তো একটা সমস্যা হবেই। যদি রিভিউর পরও কন্টিনিউ করে, সেটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও ব্যাপক চাপ তৈরি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ছোট উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সরাসরি আঘাত আসতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তিন মাস নিলেও, বাংলাদেশের জন্য এখনই একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু বা জেন্ডারের মতো ইস্যুতে ট্রাম্পের যে অবস্থান, তাতে রিভিউর পরও এ-সংক্রান্ত সহায়তার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম।’

অবশ্য এখনই সব শেষ হয়ে গেল এমন ভাবার পক্ষে নন উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।

তিনি বলেন, ‘খারাপটা চিন্তা করেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে এখনই সব বন্ধ করে দিতে হবে এমন না। প্রজেক্টগুলোকে জাস্টিফাই করার জন্যও তিন মাস সময় পাওয়া গেল।

সামাজিক জীবনে প্রভাব পড়বে জানিয়ে সালেহ বলেন, ‘ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে যাদের নিয়ে আমরা কাজ করি, তাদের জীবনযাত্রার মান সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর ইমপ্যাক্ট ফেলে। একটা মানুষ যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে আর ১০টা কাজ করবে না; যা সমাজের ক্ষতির কারণ হয়।’

প্রান্তিক মানুষের জীবনমানের অবনমন হলে তা আঞ্চলিক এমনকি বৈশ্বিক পর্যায়েও অশান্তির কারণ হতে পারে বলে অভিমত তার, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকেই বিঘ্নিত করবে। তিনি বলেন, ‘এই গ্রুপ থেকেই ইলিগ্যালি মাইগ্রেট করে, ইলিগ্যালি ট্রাফিকিংয়ের শিকার হয়।’

এই পর্যায়ের মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়লে, তা দেশের পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি করতে পারে বলে উল্লেখ করে সালেহ বলেন, ‘আগামী তিন মাসে ইউএস গভর্নমেন্টকে এগুলোর ইমপ্যাক্ট আমাদের বোঝাতে হবে।’

17 ভিউ

Posted ১:৫১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com