শনিবার ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মিয়ানমার ভেঙে নতুন দেশ কীভাবে জন্ম হতে পারে?

মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
22 ভিউ
মিয়ানমার ভেঙে নতুন দেশ কীভাবে জন্ম হতে পারে?

কক্সবাংলা ডটকম :: মিয়ানমার, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। বর্তমানে সেখানে গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরাজ করছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশটির বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তবে এ গৃহযুদ্ধে শুধু দেশটির ভবিষ্যৎ নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও সংকটময় করে তুলেছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছে। তবে, প্রশ্ন উঠছে—এটা কি সম্ভব? মিয়ানমারে নতুন একটি দেশ কীভাবে জন্ম হতে পারে? এ প্রক্রিয়ায় কার কী ভূমিকা রয়েছে?

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপ

মিয়ানমারে বর্তমানে ৫০টিরও বেশি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, যারা দীর্ঘসময় ধরে সামরিক জান্তা সরকারের শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য লড়াই করতে। এর মধ্যে কিছু গোষ্ঠী নিজেদের দেশের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হতে চাইছে। এমনই একটি গোষ্ঠী হলো আরাকান আর্মি। তারা রাখাইন রাজ্যের ব্যাপক অংশ দখল করেছে। আরাকান আর্মি তাদের নিজস্ব অঞ্চল তৈরির স্বপ্ন দেখছে। তারা মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও সামরিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

রাখাইনের কৌশলগত গুরুত্ব

রাখাইন রাজ্যটি মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাস মজুত রয়েছে। এ ছাড়া রাখাইন রাজ্যটি চীনের জন্য কৌশলগতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। মিয়ানমারের এই অঞ্চলে চীন বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায়। চীন রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। এটি তাদের ভারত মহাসাগরে প্রবেশের পথ সহজ করবে। এ কারণে চীন রাখাইন রাজ্যকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে। তাই তাদের শাসনাধীন রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আরাকান আর্মি এরই মধ্যেই মিয়ানমার ইউনিয়নের রাখাইন রাজ্যের ১৮টি শহরের মধ্যে ১৫টি দখল করে নিয়েছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ৩০০ কিলোমিটার সীমান্তবর্তী এলাকাও এখন সেই বাহিনীর দখলে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিভাজন

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একতা নেই। যেহেতু তারা বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্ত, তাদের আদর্শ ও লক্ষ্যও আলাদা। কিছু গোষ্ঠী যেমন আরাকান আর্মি, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে কিছু গোষ্ঠী কেবল স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম করছে। এই বিভাজন ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিদ্রোহী আন্দোলনকে দুর্বল করে তুলছে।

তবে, চীনের ভূমিকা এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সহায়তা করতে পারে। চীন মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। চীনের কূটনৈতিক তৎপরতা মিয়ানমারে নতুন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে আরও জটিল করে তুলেছে, কারণ চীন শুধু শান্তির জন্য কাজ করছে না, বরং তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থও রয়েছে।

চীনের কূটনৈতিক ভূমিকা

মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চীন খুবই সক্রিয়। চীনের লক্ষ্য মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সুবিধা অর্জন করা। তারা মিয়ানমারে শক্তিশালী অর্থনৈতিক এবং সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে চায়। এই কূটনৈতিক তৎপরতা কখনো কখনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। তারা তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মিয়ানমারের জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একাধিক বিরোধ থাকায় চীনের ভূমিকা এই বিরোধকে আরও তীব্র করতে পারে। কারণ চীন শুধু মিয়ানমারের ওপর কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

মিয়ানমার সরকারের চ্যালেঞ্জ

মিয়ানমারের জান্তা সরকার আরাকান আর্মির অস্তিত্বকে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। যদিও চীন ও ভারত উভয়ই জান্তা সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে তারা আরাকান আর্মির প্রতি যথেষ্ট আগ্রহও দেখিয়েছে। বিশেষ করে চীন রাখাইনে তার গ্যাস পাইপলাইন ও বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে, সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ হলে তাতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে ভারতও রাখাইনের কালাদান মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে অঞ্চলটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে।

নতুন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা

মিয়ানমারে কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী, বিশেষ করে আরাকান আর্মি, তাদের নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে। তবে এমন একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন অনেক জটিল বিষয়। আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে এটি মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অন্যদিকে, এই নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন এক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে।

কীভাবে সম্ভব

নতুন একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া সহজ নয়। এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জাতিগত সংঘাত ও সামরিক শক্তির এক বিরাট পরীক্ষার মধ্যে পড়বে। প্রথমত, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে পারে, তবে তারা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করতে হলে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অনুমোদন পেতে হবে। যদি জাতিসংঘ এবং বিশ্বের পরাশক্তির দেশগুলো এই নতুন রাষ্ট্রকে সমর্থন করে, তবে এটি একটি বাস্তবতা পেতে পারে। তবে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

বাংলাদেশের উদ্বেগ

বাংলাদেশের জন্য এ পরিস্থিতি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্ত থেকে মাত্র কিছু কিলোমিটার দূরে আরাকান আর্মি একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন করলে বাংলাদেশকে নতুন করে কূটনৈতিক ও সামরিক প্রস্তুতি নিতে হতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট থেকে শুরু করে সীমান্ত সমস্যায় বাংলাদেশের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

চীনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ

চীন মিয়ানমারের জাতিগত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর পেছনে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বাণিজ্যিক লাভের আগ্রহও রয়েছে। চীনের সহায়তায় মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা সরকারের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, তবে মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

পরিশেষে, মিয়ানমারে নতুন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা অনেকটাই রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক শর্তাবলির ওপর নির্ভর করছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়া এটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

22 ভিউ

Posted ৮:৩০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com