কক্সবাংলা ডটকম(২৫ আগষ্ট) :: প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আইনজীবীদের সঙ্গে তার কথাকে গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং তাকে বিব্রত হতে হয়। ভবিষ্যতে সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে আহবান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার আইনজীবী শান্তি পদ ঘোষের লেখা ‘জুডিশিয়াল ইন্টারপ্রেটেশন’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার একটা আবেদন। আমি প্রকৃতপক্ষে কোনো ইয়ো করি না। আপনারা আমাকে অনেক ইয়ো করছেন।’
“কিন্তু একটু মিসকোট করবেন না। আমাকে নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। আমি কোর্টে যা বলি কিছু ডিস্টোর্টেড ইয়ো করা হয়। এতে গিয়ে আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এটা যাতে আমাকে না পড়তে হয়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেস কনফারেন্স করে কোনো কিছু বলা এটা সম্ভব না। এটা বিচারক হিসেবে কোনো মামলার শুনানির সময় আইনজীবীকে একটা প্রশ্ন করতে পারি। এটা আমার স্বাধীনতা। প্রশ্নটা কী কারণে, কোন উদ্দেশ্যে, না বুঝে এটা করাটা এটা অনেক সময় ভুলভ্রান্তি হতে পারে। এটা একটু খেয়াল করবেন।’
আমেরিকার প্রধান বিচরপতি আর্ন ওয়ারন্ট’র বিচারিক নিরপেক্ষতার প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি সিনহা দেশের বিচারকদের নিরপেক্ষভাবে বিচারকাজ পরিচালনার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, মেধার কারণে তিনি (আর্ন ওয়ারন্ট) তিন তিনবার গভর্নর হয়েছিলেন। উনি ছিলেন রিপাবলিকন প্রধান বিচারপতি। নিয়োগের আগে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি আর রাজনীতি করবেন না।
“আমরা বিচারকরা হয়তো ছাত্রজীবনে বা প্রফেশন জীবনে প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনা থাকতে পারে রাজনীতি নিয়ে। আমরা বিচারকরা যখন বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করি এবং দেশে যারা বিচারক আছেন আপিল বিভাগে, হাইকোর্ট কিংবা নিম্ন আদালতে, তাদেরকে বলবো- আপনারা আপনাদের পাস্ট (অতীত) ভুলে যান। এই বিচার ভিাগের আপনি যখন বিচারক আপনাকে প্রেজেন্ট এবং ফিউচার নিয়ে ভাবতে হবে।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে মাত্র পনের ষোলোশ বিচারক। অনেককে আমরা দেখি নিরপেক্ষভাবে বিচার করার জন্য। বিচার করতে গেলে কে কি রাজনীতি করত সেটা বিবেচ্য বিষয় না। যদি রাজনীতি করতে হয়, আপনারা ছেড়ে চলে আসেন। বিচারক যদি হোন নিরপেক্ষভাবে করবেন। এটা আপনাদের প্রতি মানুষের অধিকার।’
শুধু বিচারকদের নয় আইনজীবীদেরও পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। আইনজীবীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু, জতীয় চারনেতা হত্যা মামলার তদন্ত, প্রসিকিউটিংয়ের দুর্বলতা, ত্রুটির কথা উল্লেখ করে এসকে সিনহা বলেন, ‘শোকের মাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে এই মাসে ১৫ আগস্ট কয়েকজন বিপথগামী লোক নৃসংশভাবে হত্যা করেছিল। আমি এই মামলার শেষ রায় এবং রিভিউ আমার হাতে নিষ্পত্তি করেছি।’
‘‘আমি যখন মামলার ইঅ করি তখন এত কষ্ট লাগলো! এই মামলাতে অনেক কিছু ছিল। একটা বাচ্চা ছেলে রাসেল, তাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? এটা পশুর চেয়েও ইঅ। কিন্তু এর নথি যখন পর্যালোচনা করলাম, যেহেতু এটা ফাইনাল কোর্ট, আমরা দেখলাম অনেক ত্রিুটি ছিল এই মামলায়। যেরকম ইনভেস্টিগেশনের ত্রুটি ছিল, সেরকম প্রসিকিউশনের ত্রুটি ছিল।
আমি হয়তো ভবিষ্যতে কিছু লেখার চিন্তা-ভাবনা করছি। আমি তুলে ধরবো শুধু এই মামলা না, জেল হত্যা মামলাও। সেখানেও কিন্তু অনেক ত্রুটি ছিল এবং অনেক গাফিলতি ছিল। আপনারা দুইটা রায় পর্যালোচনা করে দেখবেন। আমরা ট্রায়াল কোর্টের জাজমেন্ট এবং আপিল হাইকোর্টের জাজমেন্ট কিন্তু আমরা মানিনি। আমরা দুই রায়ই না মেনে পরিস্কার বলেছি এটা ক্রিমিনাল কনসপেরেসি ছিল। ক্রিমিনাল কনসপেরিসি যদি হয় এটা একেবারে ক্যান্টনম্যান থেকে কনসপেরেসি হয়েছে। এই কনসপেরিসে কে কে জড়িত ছিল? কনসপেরেসিতে যদি একজন লোকও থাকে এবং তার সাথে যদি আর যারা আছে প্রত্যেকেই সমভাবে দায়ী।”
“আমরা মাত্র ১৫/১৬/২০ জনের বিচার করেছি। যারা সেই রাত্রে মার্চ করেছিল, মার্চ করার পরে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিল, মার্চ করে ৩২ নম্বরে আনা হয়েছে, তখনতো কনসপেরেসি ক্লিয়ারলি ডিসক্লোজড হয়ে গিয়েছিল। এখন যারা বড় বড় কথা বলেন, আমি একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে মুখ খুলতে পারছি না। কিন্তু আমি হয়তো কিছু লিখে যাব। আমি দেখিয়ে দেব যারা ষড়যন্ত্রের মধ্যে কারা কারা ছিল। কিরকম গাফিলতি হওয়ার পরেও যারা সেনাবাহিনীর মধ্যেও অনেকজন যারা কোষাগার থেকে সুবিধা নিয়ে চলে গেছেন। তারা তো পাওয়ার কথা ছিল না।”
আইনজীবী নেতা সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম ড. কামাল হোসন, ‘জুডিশিয়াল এন্টারপ্রেটেশন’ বইয়ের লেখক শান্তি পদ ঘোষ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু ইয়াহিয়া দুলাল প্রমুখ।
Posted ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta