হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ(২৫ আগষ্ট) :: প্রতিবেশী দেশ রাখাইন শাসিত মিয়ানমারে আবারো সীমান্ত চৌকিতে হামলার ঘটনায় সরকারী বাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। এই ঘটনার পর পরই মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে দুই গ্রুপের মধ্যে থেমে থেমে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
উভয়পক্ষের মধ্যে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা পাওয়া না গেলেও মিয়ানমার সরকারের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উভয়পক্ষের হতাহতের যে হিসেব দেওয়া হচ্ছে বাস্তবে তা অনেক বলে রোহিঙ্গা নেতারা দাবী করছেন।
এমতাবস্থায় ওপারে উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়ায় মিয়ানমারের শত শত রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ ও শিশু প্রাণে বাঁচার জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়,২৫আগষ্ট রাতের প্রথম প্রহরে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম রাজ্যের পাহাড়ের পূর্ব পাশে রাশিদং রাজারবিল,বড়ছড়া, আন্দাম,ধুপমাইল,কুল্লুং,শীতাইক্যা,মন্ডুর মেরুল্লা,হাসছুরাতা,বাগঘোনা, তালাসখ, রাবাইল্যা, ঝিমংখালী,কুয়াংছিপং, তুমব্রু, ক্যাংবং,বুচিদংস্থ টংবাজার, মিংনিশি,পীরখালী,মগডিল,বলী বাজার,ফৈরা বাজার, কুয়ারবিল,মন্ডুর হাইন্ডার পাড়াসহ ২৪টি এলাকার সীমান্ত চৌকি ও সেনা ঘাটিতে স্বশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে।
এই হামলার পরপরই হামলাকারী ও সরকারী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি এবং সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়। তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে থেমে থেমে লড়াই চলতে থাকে। ব্যাপক ভারী অস্ত্রের ব্যবহার ও বিকট শব্দে বাংলাদেশ সীমান্তের মানুষ চরম আতংকিত হয়ে পড়ে। বেসরকারী হিসেবে উভয়পক্ষের হতাহতের যে হিসেব দেওয়া হচ্ছে বাস্তবে তা অনেক বেশী বলে ধারণা করছেন। এই ঘটনার জন্য মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে দায়ী করে।
তবে কয়েকজন রোহিঙ্গা জানায়,গত ২দিন আগে মন্ডুর হাইন্ডার পাড়ায় এক মুসলিমকে রাখাইনেরা খুন করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ১০/১৫জন মুসলিম নারীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানোর খবরে হয়তো ক্ষিপ্ত হয়ে পুরো এলাকায় একযোগে হামলার সুত্রপাত বলে মন্তব্য করেন।
মিয়ানমারে এই সংঘাত ফের শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী টেকনাফের হোয়াইক্যং এবং উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার নারী,পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়।
এসময় টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ ঝিমংখালী,ঊনছিপ্রাং,হোয়াইক্যং বিওপির জওয়ানেরা ১শ ৪৬জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে আটক করে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে দাবী করেন।
এদিকে পুরো সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ দমন ও সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এছাড়া এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উখিয়া উপজেলার রহমতের বিল পয়েন্টে প্রায় হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় ছিল বলে এলাকাবাসী দাবী করেন।
টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ সীমান্তে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি জওয়ানেরা প্রস্তুত এবং সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,গত বছরের ৯অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলায় সেদেশের কয়েকজন পুলিশ নিহত হওয়ার পর হতে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এরই জেরধরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটে।
Posted ১২:২১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৬ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta