কক্সবাংলা ডটকম(৭ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান অস্থিরতার জন্য মুসলিম দেশ পাকিস্তান ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই)।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের দৈনিক মিজিম।
খবরে বলা হয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভানেশন আর্মির সামরিক প্রধান হাফিজ তোহারের তিনটি দীর্ঘ তিনটি কল রেকর্ড রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। ২৩ ও ২৪ আগস্ট দীর্ঘ সময়ব্যাপী এসব ফোন কলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর হামলার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ২৫ আগস্ট ২০টির বেশি তল্লাশী চৌকিতে হামলা চালানো হয়। তারই সূত্র ধরে রাখাইনে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী।
মিজিমার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাফিজ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) ও আকা মুল মুজাহেদীন এর কাছ থেকে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সূত্র দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৩ আগস্ট রাতে আইএসআই এর এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন হাফিজ। আইএসআই-এর কর্মকর্তা আশফাকের সঙ্গে ৩৪ মিনিট ব্যাপী ওই ফোন কলে হাফিজ তোহার জানান তারা হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত।
সাংকেতিক ভাষায় ব্যবহার করা হয় এসব ফোন কলে। পরে বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ভারতীয় গোয়েন্দাদের বিষয়টি জানায়।
আইএসআই কর্মকর্তা আশফাক ফোনে হাফিজ তোহারকে বলেন, ‘কালা আদমি রিপোর্টে দিতেহি হামলা হো’। তোহার উত্তর দিয়েছিলেন, ‘জ্বি জনাব। জো হুকুম। পার ২৪ রাত সে পেহলে নাহি হোগা। ‘
‘কালা আদমি’ বা ‘কালো মানুষ’ বলতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই) কর্মকর্তা আশফাক রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনানের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরপরই হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় কলটি এসেছিল ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ১৩ মিনিটে। ২৮ মিনিটের ওই ফোন কলে হাফিজ তোহারকে আশফাক বলেন, ‘কালা আদমি (কফি আনান) রিপোর্ট পাবলিক (প্রকাশ) করতে যাচ্ছে।
‘ হাফিজ তোহার বলেন, ‘আর কয়েক মিনিট বাকি।’ আশফাক যতদ্রুত সম্ভব হামলা চালানোর অনুরোধ করেন। হাফিজ তোহার বলেন, ‘নির্দেশনা দেয়ার পর ‘রানারদের’ (বার্তাবাহক) সব আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) স্কোয়াডে পাঠানো হয়েছে। মধ্যরাতে হামলা চালানো হবে।
‘ আশফাক উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘দের কিউ কর রাহা হো ?'(দেরি কেনো করছো?)। হাফিজ তোহার উত্তর দেন, ‘মেসেজ পৌঁছানেমে টাইম লাগতা হ্যায় স্যার। ‘ (বার্তা পাঠাতো সময় লাগে)।
বিকেল ৬.০২ মিনিটে ইরাক থেকে তৃতীয় কলটি কল আসে। কল করা ব্যক্তি নিজেকে ‘আল আদমি অব দায়েশ’ (আইএসের কর্মীরা দায়েশ নামে পরিচিত) বলে তোহারকে পরিচয় দেয়। ১৪ মিনিটের ওই কলটিতে বলা হয়, ‘আইএস জানে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) বার্মার উপনিবেশবাদী, বৌদ্ধ ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে ভালোভাবেই জিহাদ করবে। ‘
(পাকিস্তানে এক সম্মেলনে একই মঞ্চে পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈয়বা প্রধান হাফিজ মোহাম্মদ সাইদের সঙ্গে মিয়ানমারের আরএসও প্রধান আবদুস কুদুস বারমী (বাঁয়ে গোল চিহ্নিত) ও অন্য রোহিঙ্গা নেতারা। (ছবি : সংগৃহীত)
২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি সামলাতে ব্যস্ত ছিল বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেই সুযোগে ওই সময় দেশের পার্বত্য এলাকা কক্সবাজারের টেকনাফ এবং বান্দরবানের বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে সংগঠিত হয় পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। তাদের পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, জামা’আতুল মুজাহিদীন ও পাকিস্তানি তালেবান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সালে পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে এসব রোহিঙ্গা জঙ্গি। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে গুপ্ত হামলাসহ নাশকতা সৃষ্টি করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এসব জঙ্গির বেশির ভাগই কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির থেকে সংগ্রহ করা হয়।
পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনু্যায়ী তাদের পরিকল্পনা এটাই যে রোহিংগাদের মাধ্যম্যে অস্থিরতা তৈরী করে এখানে সিরিয়া বা ইরাকের মত ইসলামিক স্টেট তৈরী করা যায় কিনা ?
এই প্রশ্নের মাধ্যমেই বোঝা যাবে কারা , কোন রাষ্ট্র বা কিভাবে প্রায় ৫ বছর আগে থেকেই এ ঘটনার পরিকল্পনা করেছে । ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ আসার কারণে এরও ২০ বছর পূর্বে পরিকল্পিত এ প্লটে ভাটা পড়ে ।
পরিকল্পনাকারীদের ধারণা ছিলো ২০১৮ এর মধ্যেই তুরষ্ক বা মিশর এর মত বাংলাদেশেও মওদুদ পন্থী বা মুসলিম ব্রাদারহুড পন্থী সরকার আনা সম্ভব । কিন্তু ২০১৪ প্রায় ৩০ বছরের পরিকল্পনাকে ধূলিস্মাত করে দেয় । কিন্তু ৩০ বছর আগের নেয়া মাঠ পর্যায়ের পরিকল্পনা থেমে থাকেনি । তাই ঠিক এই ২০১৭ সালেই প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এর পরিকল্পনাও থেমে থাকেনি ।
আগামী ২ বছরের মধ্যে আরাকান অঞ্চল জুড়ে ইসলামিক স্টেট অব আরাকান তৈরীর মহা পরিকল্পনা রয়েছে ।
আর এই অনুপ্রবেশ এর মাধ্যমে কমপক্ষে ৩০০০০ মুজাহিদিন ঢুকেছে বাংলাদেশে যা এই ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি ছাড়া অসম্ভব ছিলো ।
Posted ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta