কক্সবাংলা ডটকম :: শীতকালীন সবজিতে এখন বাজার ভরপুর। তাই দাম কিছুটা কম। তবে সবজি ছাড়া আর কোনো নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যে নেই। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩-৪ টাকা। আলুর কেজি এখনও ৭০-৮০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা।
আর ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
মুরগি, ডিম থেকে শুরু করে মাছ, মাংস সবকিছুরই দাম রীতিমতো আকাশচুম্বি। ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে মূল্যস্ফীতিও। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নিষ্পেষিত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ।
এদিকে প্রতিনিয়ত খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লেও সেভাবে বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ অক্টোবরের পর নভেম্বরেও সারা দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি রয়েছে দুই অঙ্কের ঘরে।
খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দাম মানুষের জন্য এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে শহর এলাকায়। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে নভেম্বরে শহরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশের বেশি। এ মাসে সারা দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের মাসে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সবজির বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় অক্টোবরে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় সবজি ও চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আমদানি পণ্যের দামেও লাগাম টেনে ধরা যায়নি। ডলারের দর স্থিতিশীল থাকা, কিছু খাদ্যপণ্যে শুল্ক কমানো, আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়ার পরও বাজারে অস্থিরতা রয়েই গেছে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন পণ্য ও সেবাবাবদ মানুষের খরচের হিসাবের ভিত্তিতে প্রতি মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বিশ্লেষণ করা হয়। এ সূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কত বাড়ল তার শতকরা হারই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি। এটির ১২ মাসের গড় হিসাব করে তৈরি হয় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির তথ্য-উপাত্ত।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে সারা দেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। গ্রামে এ হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর শহরে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে নভেম্বরে সারা দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ হার গ্রামে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং শহরে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছিল। আগস্টে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয়। সেপ্টেম্বরে আরও কিছুটা কমে হয় ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মাস এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মূল্যস্ফীতি। সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের আলোচনায় ঘুরে-ফিরে আসে প্রসঙ্গটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই জানিয়ে একে বাজেটের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে জানায় গবেষণা সংস্থাগুলো। এমনকি বাজেটের কিছু পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতির যে হিসাব পাওয়া যায় তাতে সে আশঙ্কার প্রতিফলনও ঘটে। ওই অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা গত ১৩টি অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। সেই অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয় ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।
গত অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার অনেকে বেশি। ওই অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ছিল সরকারের। বাজেট ঘোষণার সময় তা ছিল আরও কম, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। সে হিসাবে টানা প্রায় আড়াই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরেই রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক অর্থবছর ধরেই মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল বাজেটে। তবে বাস্তবতার আলোকে সে লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধন আনা হচ্ছে। গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে বলা হয় অর্থনীতির নীরব ঘাতক। এ ঘাতক কতটা নির্মম হতে পারে, নিম্নআয়ের মানুষেরা তা হাড়ে হাড়ে টের পান। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, কারণ নিম্নআয়ের মানুষের ব্যয়ের বড় অংশ চলে যায় খাদ্যের পেছনে।
Posted ২:৪১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta