কক্সবাংলা ডটকম(২০ জুন) :: বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির বাড়বাড়ন্ত অবস্থা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। তাই দেশের দ্রব্যমূল্যে যেকোনো মূল্যে কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতির পারদ দুই অংকের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একাদশ মাস অর্থাৎ মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ।
এই মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের মে মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের মে মাসে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
দেশের অর্থনীতিবিদরা বলে আসছিলেন, মানুষকে স্বস্তি দিতে প্রবৃদ্ধিতে ছাড় দিয়ে হলেও মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। এছাড়া দেশের বাইরে দ্রব্যমূল্য কমেছে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পরে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছিলে। সেগুলোর দাম কমায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের কারণে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে কমে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ এর সুফল পাচ্ছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় গলদ আছে।
সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খোলা বাজার পন্য বিক্রি আগেই শুরু করেছে। সম্প্রতি মুদ্রানীতিতে ঋণের সুদের হারের উপর থেকে সীমা সরিয়ে নিয়েছে।
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা এল।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মূল্যস্ফীতি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। আমাদের সবার প্রধান দায়িত্ব এখন হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমানো।’
এই সময় পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সামনে মূল্যস্ফীতি কমে আসতে পারে।
এম এ মান্নান বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো। আমদানি একটু বেড়েছে। আমাদের রিজার্ভ স্থিতিশীল পরিবেশে আছে। এখন সময় হয়েছে এটাকে ওপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার। আমরা পারব। মুল্যস্ফীতি-রিজার্ভ এই দুটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমি ঝুঁকি নিয়ে একটি কথা বলতে চাই, আমার মনে হয় জুন মাসে মূল্যস্ফীতি একটু কমবে।’
রিবেশবান্ধব বিদ্যুত উৎপাদনে জোর
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী সৌর বিদ্যুতের ওপর জোর দিতে বলেছেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সোলারের একটি প্রকল্প ছিল। সোলার ব্যবহার করে সেচ প্রকল্প। সেই প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তৃণমূলে সেচ কাজে সোলার ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে হবে। সোলারের খুঁটির উচ্চতা বাড়াতে বলেছেন। এতে করে খুঁটির নিচেও ফসল হবে। এছাড়া যদি বেসরকারি ভাবে কেউ যদি সোলার নিয়ে কাজ করতে চায় তাকে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে।
সভায় বলা হয় ভারতে মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ আসে সৌর বিদ্যুত থেকে বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুত এর ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সরকারি প্রকল্পে জমি কম ব্যবহারের নির্দেশ
প্রকল্পে জমি কম লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন সরকারি প্রকল্পে জমি কম ব্যবহারের নির্দেশনা কবে থেকে কার্যকর হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই গুলো বিবেচনা করা হবে।
বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বাড়াতে হবে
বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে এখন ব্যাপক হারে দেশের ব্যংক থেকে বা আভ্যন্তরীন উত্স থেকে অর্থায়ন করা হয়। এখন থেকে প্রকল্পগুলো অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের বাইরের ঋণ অনেক জমে আছে আমরা কম ব্যবহার করছি।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘এটা তিনি ঠিক বলছেন আমরা বাইরের ঋণ ব্যবহার করছি। এতে আমাদের দেশের টাকার ওপর চাপ কমবে আমাদের রিজার্ভ এর জন্য ভালো হবে।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন বাংলাদেশের প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পাইপলাইনে আছে। আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। বাইরে থেকে টাকা আনলে আমাদের খরচ হয় সাড়ে তিন শতাংশ। দেশ থেকে টাকা নিলে খরচ পড়ে ৭ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ নিলে আমাদের অর্থনীতরি জন্য ভালো হবে।
আরো আশ্রয়ণ প্রকল্প নেয়া হবে
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘দেশের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মানুষের নিজের বাসগৃহে থাকার পরিমান বেড়েছে। এটার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজে যুক্ত আছেন। আমরা বিষয়টি তাকে জানিয়েছি। সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো নিয়েছে। তার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি এরকম প্রকল্প আরো নিতে হবে।’
এদিকে একনেক প্রায় ২৪ হাজার ৩৬২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১৬ টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ৮৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১১ হাজার ৪৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক-এর সভায় এসব অনুমোদন দেয়া হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এবং ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভায় অংশ নেন।
Posted ৭:৫৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta