কক্সবাংলা ডটকম(৮ আগস্ট) :: দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে কেউ শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র এবং একটি মুঠোফোনের নম্বর দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক হতে পারেন। এখন থেকে ব্যাংকে সাধারণ হিসাব খুলতে যেসব ডকুমেন্ট দিতে হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক হতেও একই ধরনের ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
ব্যাংকে গ্রাহকের তথ্য যেভাবে সংরক্ষণ করা হয় এ ক্ষেত্রেও তা করতে হবে। বর্তমানে ফুটপাত বা যে কোনো জায়গায় বসে একজন এজেন্ট কার্যক্রম চালাতে পারেন। এখন তাদের নির্ধারিত ঠিকানায় অফিস থাকতে হবে। সব ধরনের লেনদেন নির্ধারিত রেজিস্টারে লিখতে হবে।
সম্প্রতি সচিবালয়ে জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা এবং এ কার্যক্রম অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অচিরেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকাতে ব্যাংকেও নগদ লেনদেন সীমিত করার জন্য একটি নীতিমালা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাস্কফোর্সের সভা শেষে আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়। ওই সারসংক্ষেপ থেকে উপরোক্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে ওই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামাল উদ্দীন আহমেদ, পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি বছরের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, মোট ১৭টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক ৫ কোটি ৩৭ লাখ। সারাদেশের প্রায় ৭৬ লাখ এজেন্টের মাধ্যমে এসব হিসাব থেকে গত জুন মাসে মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। দৈনিক গড়ে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা।
সাধারণত চাকরিজীবী, গার্মেন্ট শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিয়ে থাকে। এ মাধ্যমে বড় লেনদেন করার সুযোগ নেই। বর্তমানে দিনে দু’বারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা এবং ১০ হাজার টাকা তোলা যায়। এর আগে দৈনিক ২৫ হাজার টাকা জমা ও তোলা যেত। সাধারণত বাড়িতে বা আত্মীয়স্বজনের কাছে বিকাশ বা রকেটসহ অন্যান্য এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হলে এই সেবা বিঘি্নত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
জঙ্গিবাদে অর্থের লেনদেন ঠেকাতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কড়াকড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, টাস্কফোর্সের নেওয়া সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা তাদের কাছে এলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এখনও টাস্কফোর্সের নতুন কোনো নির্দেশনা তারা পাননি।
এদিকে চলমান মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার এজেন্টরা একটি নিয়মের মধ্যে চলতে চাইলেও তারা বলছেন, নতুন কড়াকড়িতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পেঁৗছানো সম্ভব হবে না। এতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সংকুচিত হয়ে যাবে। তাদের খরচও বাড়বে। সাধারণ গ্রাহক হাতের কাছে আর এই সুবিধা পাবেন না।
মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র টেলিকম ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসটিএ) সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন মোহন বলেন, তারাও একটা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আসতে চান। তবে তাদের রেজিস্ট্রেশন, গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণ বা অফিস নেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হন কর্তৃপক্ষকে সেদিকে নজর দিতে হবে।
এদিকে টাস্কফোর্স বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিদের অস্ত্র-গোলাবারুদ কেনা ও প্রশিক্ষণে টাকার লেনদেনের বেশির ভাগই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় অর্থ লেনদেন সহজ ও ধরা পড়ার ভয় কম থাকায় জঙ্গিরা এটা বেছে নিয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে এলে এ ধরনের সুযোগ বন্ধ হবে।
টাস্কফোর্স কমিটির সভায় জঙ্গিবাদে অর্থায়নকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সন্দেহজনক কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস ও সন্দেহজনক টেলিযোগাযোগে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টাস্কফোর্সের ওই সভায় ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম ও ঋণগ্রহীতাদের নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় অনেকে অভিযোগ করেন, ইসলামী ব্যাংকের কতিপয় ঋণগ্রহীতা ও কর্মকর্তা নানাভাবে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত। তাদের চিহ্নিত করা ছাড়াও সব ব্যাংকে অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও অস্বাভাবিক লেনদেনে আরও কঠোর নজরদারি করতে বলা হয়।
টাস্কফোর্সের সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজাল অভিযোগ করেন, ইসলামী ব্যাংকের ২০ ভাগ আমানতকারী জামায়াত ও শিবিরের লোক। তারাই জঙ্গিবাদে অর্থের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ওই বৈঠকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম বিধি মোতাবেক পরিচালনার জন্য সাতজন নিরপেক্ষ পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ ইসলামী ব্যাংকের জঙ্গি অর্থায়নসহ বিভিন্ন অনিয়ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন।
ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, এটা ঠিক নয়। দেশের একটি শীর্ষ ব্যাংক হিসেবে এখানে সব ধরনের আমানতকারী রয়েছেন। সব ধরনের লোকজনই ঋণগ্রহীতা। বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠীর ঋণ নেওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক লেনদেনের অসঙ্গতি রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি মনিটরিং কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয় টাস্কফোর্স কমিটির ওই বৈঠকে। কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকবেন।
Posted ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta