কক্সবাংলা ডটকম(২১ জানুয়ারি) :: মার্কিন মুলুকে শেষ হল জো বাইডেনের রাজত্ব। শুরু হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানা।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল হিলসে এক জমকালো অনুষ্ঠানে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান নেতা।
তাঁর সঙ্গেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন জেডি ভ্যান্স।
প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথের পরেই উপস্থিত অতিথি ও দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে চিরাচরিত ভঙ্গিমায় ট্রাম্প বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজ থেকেই সোনালি যুগের শুরু হল।
আমেরিকার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখবে। কেউ নিজেদের স্বার্থে আমাদের ব্যবহার করতে পারবে না। যারা অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাস করছেন, তাদের বিদায়ের ঘন্টা বেজে গিয়েছে। সব অনুপ্রবেশকারীকে তাড়ানো হবে।’
২০০৩ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে হামলা করার সময়, প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু বুশ দাবি করেছিলেন তাঁকে ঈশ্বর বেছে নিয়েছেন আমেরিকাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। বলেছিলেন, ঈশ্বরের নির্দেশেই তিনি ইরাকে স্বৈরাচারের অবসান ঘটাতে চলেছেন।
২২ বছর পর, ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার পর্বে তাঁর উপর যে হামলা হয়েছিল, তা থেকে ঈশ্বরই তাঁকে রক্ষা করেছেন।
যাতে তিনি আমেরিকাকে ফের ‘গ্রেট’ বা মহান করে তুলতে পারেন। দ্বিতীয়বার শপথ নেওয়ার পর, ক্যাপিটল হিল থেকে তাঁর প্রথম ভাষণে আত্মবিশ্বাসে ফুটতে ট্রাম্পের গলায় শোনা গেল প্রত্যাশিত উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং রক্ষণশীল সুর। কী বললেন তিনি?
স্বর্ণযুগের সূচনা
‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হচ্ছে। আজ থেকে, আমাদের দেশ আবার সমৃদ্ধশালী হবে এবং সারা বিশ্বে সম্মানিত হবে। প্রতিটি আমাদের ঈর্ষা করবে এবং আমরা আর তাদের সুবিধা নিতে দেব না। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে এক গর্বিত, সমৃদ্ধ এবং স্বাধীন দেশ গছন করা। আমেরিকা শীঘ্রই আগের থেকে আরও বৃহত্তর, শক্তিশালী এবং অনেক বেশি ব্যতিক্রমী হবে। দেশজুড়ে পরিবর্তনের জোয়ার বইছে। পুরো বিশ্বে সূর্যের আলো পড়েছে, এবং আমেরিকার কাছে এই আগের থেকে অনেক বেশি করে একে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। তবে প্রথমে, আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন, সেগুলি সম্পর্কে আমাদের সৎ থাকতে হবে। চ্যালেঞ্জ প্রচুর, তবে বিশ্ব এখন আমেরিকাকে যে দুর্দান্ত গতিতে দেখছে, তাতে এগুলি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র
‘গত কয়েক বছর ধরে, আমাদের ২৫০ বছরের ইতিহাসে অন্য যে কোনও প্রেসিডেন্টের থেকে আমাকে অনেক বেশি পরীক্ষা দিতে হয়েছে এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমি অনেক কিছু শিখেছি। যারা আমাদের আটকাতে চায়, তারা আমার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং প্রকৃতপক্ষে আমার জীবন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। মাত্র কয়েক মাস আগে, পেনসিলভানিয়ার এক সুন্দর মাঠে, এক আততায়ীর গুলি আমার কান ভেদ করে চলে গিয়েছিল। আমি তখন অনুভব করেছি এবং এখন আরও বেশি করে বিশ্বাস করি, আমার জীবন একটি কারণেই রক্ষা পেয়েছে। আমেরিকাকে আবার মহান করার জন্য ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করেছেন।’
মুক্তিদিবস
‘২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি এক মুক্তির দিন। আমেরিকায় এখন ফিরে আসছে জাতীয় ঐক্য। আজ আমি একগুচ্ছ ঐতিহাসিক কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করব। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, আমরা আমেরিকার সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার এবং সাধারণ জ্ঞানের বিপ্লব শুরু করব। কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক করার বিরোধিতা করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী থেকে অন্যায়ভাবে যে সেনা সদস্যদের বহিষ্কার করা হয়েছে, এই সপ্তাহে আমি তাদের পূর্ণ বেতন-সহ পুনর্বহাল করব।’
সীমান্তে জরুরী অবস্থা
‘প্রথমে আমি আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করব। আমাদের দেশের উপর ভয়াবহ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আমি দক্ষিণ সীমান্তে সেনা পাঠাব। আজ আমি যে আদেশগুলি স্বাক্ষর করছি, তাতে আমরা মাদক চক্রগুলিকে বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করব।’
খুঁড়ব সোনা, খুঁড়ব
‘আজ আমি একটি জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করব। আমরা খুঁড়ব সোনা, খুঁড়ব। আমেরিকা ফের একটি উৎপাদনশীল দেশ হবে। আমি আমার মন্ত্রিসভার সকল সদস্যকে নির্দেশ দেব যাতে তাঁরা তাঁদের হাতে থাকা বিশাল ক্ষমতাগুলিকে কাজে লাগিয়ে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিকে হারিয়ে দ্রুত খরচ ও দ্রব্যমূল্য কমান। আমরা আবারও একটি ধনী দেশ হব এবং আমাদের পায়ের নীচে থাকা তরল সোনাই এতে করতে সাহায্য করবে। আমরা গ্রিন নিউ ডিল বাতিল করব এবং আমরা বৈদ্যুতিক যানবাহনের আদেশ প্রত্যাহার করব, আমাদের অটোমোবাইল শিল্পকে রক্ষা করব।’
মাত্র দুটি লিঙ্গ
‘আমি অবিলম্বে সমস্ত সরকারি সেন্সরশিপ বন্ধ করে আমেরিকায় বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করব। আজ থেকে আমেরিকার সরকারি নীতি হবে, শুধুমাত্র দুটি লিঙ্গ আছে – পুরুষ এবং মহিলা।’
শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী
‘আমাকে সকলে মনে রাখবে একজন শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী এবং ঐক্যবদ্ধকারী হিসেবে। সেটাই হবে আমার সবথেকে গর্বিত উত্তরাধিকার। আমি সানন্দের বলতে চাই, গতকাল থেকে, আমার দায়িত্ব গ্রহণের ঠিক একদিন আগে, মধ্যপ্রাচ্যে পণবন্দিরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসতে শুরু করেছে।’
চিনকে দিইনি পানামা খাল
‘আমরা মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর করতে চলেছি। পানামা খাল ছিল আমাদের বোকা উপহার। এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করা হয়েছে। এটা কখনও দেওয়া উচিত হয়নি। এখন পানামা খাল পরিচালনা করছে চিন। এটা আমরা চিনকে দিইনি। আমরা এটা পানামাকে দিয়েছিলাম এবং আমরা এটি ফিরিয়ে নেব।’
মঙ্গলে আমেরিকান পতাকা
আমরা আমাদের স্বপ্নের নিয়তি অনুসরণ করব। মঙ্গল গ্রহে তারা এবং ডোরাকাটা (আমেরিকার জাতীয় পতাকা) স্থাপনের জন্য আমেরিকান মহাকাশচারীদের সেখানে পাঠাবো।’
বাণিজ্য সংস্কার
‘আমেরিকান কর্মী এবং পরিবারগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে আমি অবিলম্বে আমাদের বাণিজ্য ব্যবস্থার সংস্কার শুরু করব। অন্যান্য দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের নাগরিকদের উপর কর আরোপের পরিবর্তে, আমরা আমাদের নাগরিকদের সমৃদ্ধ করার জন্য বিদেশি দেশগুলির উপর শুল্ক এবং কর আরোপ করব।’
দেশে-বিদেশে ব্যর্থ
‘আগের সরকার দেশের একটা সাধারণ সংকটের মোকাবিলাও করতে পারেনি, একই সঙ্গে বিদেশে ধারাবাহিক ভাবে ভয়াবহ ঘটনার মধ্যে পড়ে গিয়েছে। আমাদের মহৎ, আইন মান্যকারী আমেরিকান নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পারেনি। বরং বিপজ্জনক অপরাধীদের আশ্রয় এবং সুরক্ষা দিয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে অনেকেই কারাগার এবং মানসিক প্রতিষ্ঠান থেকে এসে অবৈধভাবে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। এই সরকার আছে বিদেশি সীমান্ত রক্ষার জন্য সীমাহীন তহবিল দিয়েছে, কিন্তু আমেরিকান সীমান্ত, অথবা আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, নিজেদের জনগণকে রক্ষা করতে অস্বীকার করেছে।’
‘আমাদের দেশ জরুরি অবস্থার সময়ে আর মৌলিক পরিষেবাটুকুও দিতে পারেনি। সম্প্রতি উত্তর ক্যারোলিনায় যেমনটা দেখা গিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের ভুগতে হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যগুলিও বহু মাস আগে ঘটে যাওয়া হারিকেনে এখনও বিধ্বস্ত। আরও সাম্প্রতিক উদাহরণ লস অ্যাঞ্জেলেস। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে যেখানে আমরা আগুন জ্বলতে দেখেছি। কোনও প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ করা হয়নি। ঘরবাড়ি জ্বলছে, পাড়া জ্বলছে, এমনকী আমাদের দেশের কিছু ধনী এবং সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাঁদের কেউ কেউ এখন এখানে বসে আছেন। তাদের আর কোনও বাড়ি নেই। আমরা এটা ঘটতে দিতে পারি না।’
অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাই
‘অনেকেই ভেবেছিলেন আমার পক্ষে এই ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন অসম্ভব। কিন্তু আজ আপনারা আমাকে এখানে দেখতে পাচ্ছেন। আমেরিকান জনগণ তাদের মনের কথা বলেছে। আমেরিকাতে আমরা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাই। আমরা আমেরিকান ইতিহাসের চারটি শ্রেষ্ঠ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের শক্তি সমস্ত যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং ক্রুদ্ধ, হিংস্র এবং সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এক বিশ্বে ঐক্যের এক নতুন চেতনা আনবে। বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষ আবার আমেরিকাকে সম্মান করবে এবং প্রশংসা করবে। আমরা সমৃদ্ধ হব। আমরা গর্বিত হব। আমরা শক্তিশালী হব এবং আমরা আগের মতো জয়ী হব। আমরা সাহসের সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াব। আমরা গর্বের সঙ্গে বাঁচব। আমরা সাহসের সঙ্গে স্বপ্ন দেখব। কিছুই আমাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কারণ আমরা আমেরিকান। ভবিষ্যত আমাদেরই এবং আমাদের স্বর্ণযুগ সবেমাত্র শুরু হলো।’
Posted ২:০১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta