কক্সবাংলা ডটকম(১০ জুলাই) :: ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধায় (জিএসপি) স্থগিতাদেশ জারি করে তত্কালীন ওবামা প্রশাসন। রানা প্লাজা ধসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম অধিকার ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়েই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশটি। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো জিএসপি সুবিধার বার্ষিক পর্যালোচনা সম্পন্ন করেছে বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু এ পর্যালোচনায় বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি এবারও।
সম্প্রতি বার্ষিক জিএসপি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি সংস্থা ইউএসটিআর। ঘোষণায় জিএসপির সুবিধা পাওয়া নতুন পণ্য ও দেশের বিস্তারিত বিবরণসহ তালিকা প্রকাশ করা হয়, যাতে বাংলাদেশের নাম নেই। অন্যদিকে এ সুবিধা পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, একুয়েডর, তুরস্ক, পাপুয়া নিউগিনি, পাকিস্তান, মিসর ও কাজাখস্তান। নতুন জিএসপি কার্যক্রমের আওতায় ১ জুলাই থেকে এ সুবিধা পাচ্ছে দেশগুলো।
প্রসঙ্গত, ১২০টি দেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে। এসব দেশ থেকে গত বছর জিএসপি সুবিধার আওতাধীন পণ্য আমদানিতে মোট ১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউএসটিআর প্রকাশিত জিএসপি ঘোষণায় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটজারের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘জিএসপি কর্মসূচির বলিষ্ঠ প্রয়োগে অঙ্গীকারবদ্ধ ট্রাম্প প্রশাসন। জিএসপি সুবিধার আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাজার সংস্কার ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য ও সেবা সরবরাহে প্রণোদনা দেয়া হয়ে থাকে। এ ঘোষণার লক্ষ্য হলো, বাণিজ্য কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি মার্কিন উত্পাদনশীল খাতকে সহযোগিতা করা।’
২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। নিহতদের বেশির ভাগই ছিলেন পোশাককর্মী। এ ঘটনার পর বাংলাদেশে কারখানায় কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে দুর্বলতার ইস্যুকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে মার্কিন সরকার। এর পর জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশকে ১৬টি শর্তসহ ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ দেয় ইউএসটিআর।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক কখনই মার্কিন বাজারে জিএসপি সুবিধা পায়নি। সিরামিক, প্লাস্টিকসহ কিছু পণ্যে এ সুবিধা পেত বাংলাদেশ। তবে সেসব পণ্যের রফতানি মার্কিন বাজারে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
পোশাক খাতের শ্রম নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক বা অন্যান্য পণ্য রফতানি থেকে পাওয়া আয়ে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। ২০১৬ সালের নতুন জিএসপি স্কিম চালুর সময়েও সুবিধাপ্রাপ্তদের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে রফতানিকারকদেরও কোনো উদ্বেগ ছিল না। তাদের দাবি, ভাবমূর্তি ছাড়া
দেশের রফতানি বাণিজ্যে আর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি এ স্থগিতাদেশ। গত বছরের রফতানি পরিসংখ্যানেও তাদের এ দাবির সমর্থন পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় প্রবৃদ্ধির হার ছিল দুই অংকের ঘরে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘মার্কিন জিএসপি নিয়ে সরকারের অবস্থান হলো, আমরা এ সুবিধা চাইব না। দেশটির প্রশাসন যদি একতরফা সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ সুবিধা দেয়, তাহলে তা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে চলতি বছরের শুরুতেও বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া এক চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেসের ১১ সদস্য বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, শ্রম অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দিক থেকে বাংলাদেশ ভুল পথে ধাবমান। এ প্রেক্ষাপটে আমরা আপনার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পাশাপাশি শ্রম অধিকার বিষয়ে সরকারের নীতি ও চর্চার অবক্ষয়ের কারণ পরিষ্কার করারও অনুরোধ জানাচ্ছি।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পোশাক শিল্পে শ্রম অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত নেতাদের গ্রেফতার ও আটকের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। দুই দেশের জোরদার সম্পর্কের সমর্থক হিসেবে এ বিষয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা জানতে পেরেছি যে, পোশাক শিল্পে ‘বড় ধরনের রূপান্তর’, ‘কর্মপরিবেশ নিরাপত্তা’ ও ‘শ্রমিক কল্যাণের’ ঘোষণা নিয়ে ঢাকা অ্যাপারেল সামিট-২০১৭ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও বিষয়টিতে বিগত কয়েক মাসের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিজিএমইএর এসব ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মনোযোগের কারণ হয় ২০১৩ সালে সহস্রাধিক শ্রমিক নিয়ে রানা প্লাজা কারখানা ধসের ঘটনায়। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে অনেকেই নিরাপত্তাজনিত কারণে অনিচ্ছুক থাকলেও চাকরি হারানোর ভয়ে কাজে যোগ দেন।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধস ও ক্রমাগত অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সরকার কিছু বাংলাদেশী পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহার করে। এ পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে তাত্ক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ সরকার শ্রম অধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন ও ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং শ্রম আইন ও কারখানা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
বিগত কয়েক বছরে শ্রম অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়ে জিএসপি কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি পিছিয়ে পড়েছে। যেমন ইউনিয়ন নিবন্ধনের অনুমোদন ২০১৩ সালে ৬৫ শতাংশ থেকে ২০১৫তে ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। মার্কিন কংগ্রেসের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনেক ইউনিয়ন নিবন্ধনের আবেদনও বিবেচনা করা হয়নি।’
Posted ২:০০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১০ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta