দীপন বিশ্বাস :: গত বেশ ক’দিন ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমূল সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষের গোলাবারুদ, মর্টার সেল বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন বাসা বাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, মানুষের শরীরসহ নানাস্থানে এসে পড়েছে।
রোববার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে প্রবীর চন্দ্র ধর (৫৯) নামে এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এর আগে ভোরে তুমব্রু কোনার পাড়ায় একটি বসতঘরে মর্টারশেল এসে পড়ে। এসব ঘটনায় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৬৮ সদস্য সীমান্ত অতিক্রম করে তুমব্রু’র বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্রোহীদের চাপের মুখে তারা টিকতে না পেরে এদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন বলে সীমান্ত এলাকাবাসি সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিজিবি তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে আহত ১৫ জন সদস্যকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান,রোববার সকালে ১৪ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসে এপারে আশ্রয় নেন। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে পরে আরও বিজিপি সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় চান। এ ছাড়াও, রোববার দুপুর ও বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্ত দিয়ে আহত অন্তত ১০ জন এসেছেন। তাদেরকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, বেশ ক’দিন ধরে মিয়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘাত চলছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক। এসব গোলাবারুদ আর বিস্ফোরকের বিকট শব্দে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে বাংলাদেশের একজন আহত হয়েছেন। এর আগে ভোরে মর্টারশেল এসে একটি বসতঘরে পড়ে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে দেশটির জান্তা বাহিনীর ৬৮ সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে। পরে আরও ৫ সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন।
এই অবস্থায় স্থানীয়দের সরানো হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। আমি কিছু বলতে পারব না।
তুমব্রু’র উত্তরপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল আমিন বলেন, যেভাবে মিয়ানমার থেকে গুলি এ পারে এসে পড়ছে তাতে পরিবার ও নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না। আপাতত উখিয়ায় বোনের বাসায় আশ্রয় নিচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরব।
খালেক নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, গত শনিবার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এসে শেল পড়েছে। রোববার এক কৃষকের শরীরে। ভোরে বসতঘরে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ নিরাপদ নয়। তাই অন্য জায়গায় যাচ্ছি। সীমান্তের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছি।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আলম বলেন, আমার ওয়ার্ডের কিছু মানুষ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। ভোর থেকে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া বলেন, এখানকার পরিস্থিতি এই মুহূর্তে কিছুটা স্বাভাবিক আছে। সীমান্ত এলাকায় কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বিজিবি ও আমরা তৎপর আছি। আতঙ্কিত হয়ে এলাকা ছাড়ার খবর তেমন নেই।
ঘুমধুমে সীমান্ত উত্তেজনায় ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা:
উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে সীমান্তের ১০০ গজ দূরত্বে থাকা মিশকাতুন নবী দাখিল মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানান বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী।
আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান বলেন, রোববার সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরে গোলাগুলি বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
Posted ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta