বিশেষ প্রতিবেদক :: বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের শরনার্থী শিবিরে আশ্রিত ১৩ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত না পাঠিয়ে তৃতীয় কোনো নিরাপদ অঞ্চলে স্থানান্তরের পক্ষে মত দিয়েছে জাতিসংঘ ও ইউএনএইচসিআর।
তবে এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের প্রতি জোর দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও সে মোতাবেক পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এমনকি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ)-এর সভায়ও একই রকম পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সংকট সমাধানের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও গত বছর দুই দফায় সহায়তার হার কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগেই রোহিঙ্গা ইস্যুর একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধান খোঁজার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের যে আন্তর্জাতিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, গত বছর দুই ধাপে কমানো হয়েছে।
যা এখন প্রতি মাসে মাথাপিছু ৮ ডলারে নেমে এসেছে।
সহায়তার এ হার আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খাদ্য বরাদ্দ কমানোর ফলে রোহিঙ্গাদের সার্বিক দুর্গতি ও অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এ খাতে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ব্যয়ও বেড়েছে। যার একটা বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্থানীয়দের ওপরও।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘও। এ কারণে অর্থ সংকটে পড়েছেন রোহিঙ্গারা।
গত বছর ডব্লিউএফপি দুই দফা কমিয়েছে অর্থ বরাদ্দ। গত বছরের মার্চে রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি মাসিক বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়।
সর্বশেষ গত ১ জুন থেকে ওই বরাদ্দ আরও কমিয়ে ৮ ডলার (৮৭০ টাকা) করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় একাধিক রাষ্ট্র ও সংস্থার সঙ্গে পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
সেসব সভায় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
বিশেষ করে অর্থায়ন, স্থানান্তর ও প্রত্যাবাসনের টেকসই সমাধান খুঁজতে আন্তর্জাতিক মহলকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
এক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে ইউএনএইচসিআরের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। কেননা ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এ ইস্যুতে বিদেশি সহায়তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
২০২৩ সালে জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।
কিন্তু পাওয়া গেছে মাত্র ৪৪০ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে ২০২৪ সালের জন্য ৮৫২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হলেও পাওয়া গেছে ৫০০ মিলিয়নের মতো।
নতুন বছর ২০২৫ সালে এক বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। তবে কতটুকু পাওয়া যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও সহায়তার হার বাড়ানোর বিষয়েও আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণেও মিয়ানমার ও চীন সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু এড়িয়ে চলছে।
ড. ইউনূস সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের যোগাযোগ ভালো হওয়ায় বাদ সেধেছে চীন ও ভারত। দেশ দুটি এ বিষয়ে কোনো সহায়তাই করছে না।
এসব বিষয়েও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় আলোচনা হয়েছে।
তবে তৃতীয় স্থান হিসেবে ঠিক কোন অঞ্চল বা দেশে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা যেতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলেনি জাতিসংঘ এবং ইউএনএইচসিআর।
Posted ১:১৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta