মঙ্গলবার ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আরাকান আর্মি : নতুন চ্যালেঞ্জে রোহিঙ্গা স্বদেশ প্রত্যাবাসন

শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
42 ভিউ
রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আরাকান আর্মি : নতুন চ্যালেঞ্জে রোহিঙ্গা স্বদেশ প্রত্যাবাসন

বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজার সীমান্তের ওপাড়ে থাকা রাখাইন অঞ্চল দীর্ঘদিন থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক চলছে। এর মধ্যে সম্প্রতি সীমান্ত-সংলগ্ন মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার এলাকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান বিদ্রোহীরা। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের মংডু শহর দখল করেছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।

গত পাঁচ মাসে সরকারি হিসাবেই দেশে ৬০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। সেই সঙ্গে নতুন করে সীমান্ত নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এতদিন দেনদরবার চলেছে। এর মধ্যে আরাকান বিদ্রোহীরা মংডু দখলের ফলে নতুন আসা ঠেকানো এবং আগে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো আরাকান আর্মি দখলে নেওয়ায় নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ বেশ কঠিন হবে। তারা মনে করছেন, প্রথমত এখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জরুরি হলো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো। সীমান্তে সতর্ক থাকা। এটাকে শুধু ঢাকা-নেপিদো সমস্যা হিসেবে না দেখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংকট হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করতে হবে। বিষয়টিতে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ আগে ছিল একপক্ষ।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব ভালো না গেলেও তারা সরকার হিসেবে স্বীকৃত। আর এখন হলো দুটি পক্ষ। এর মধ্যে আরকান বিদ্রোহী বাহিনী অনির্বাচিত এবং রোহিঙ্গা ইস্যুটি আরাকান বিদ্রোহীদের দখল করা অংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মত, আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নেতিবাচক। ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় তাদের শত্রুপক্ষ। তখন বাংলাদেশ সেই শত্রুপক্ষকে আশ্রয় দিয়েছিল। সেই দলে রোহিঙ্গা নেতারাও ছিলেন। তাছাড়া বিদ্রোহীরা রোহিঙ্গামুক্ত রাখাইন চায়।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আরকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকার উভয়পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে সমস্যার সমাধান করতে চায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা।

বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে জটিল রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে আরাকান আর্মির সঙ্গে অর্থবহ আলোচনায় বসতে হবে। কারণ তারা এখন দক্ষিণ রাখাইনের গওয়া, তাউংগুপ এবং আন শহরের দখল নেওয়ার জন্য লড়াই করছে। এরই মধ্যে আন শহরের বেশিরভাগ অংশ এবং ৩০টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটি ও অবস্থান দখল করেছে তারা। সরকারের পক্ষ থেকে এর মধ্যে গত কয়েক মাসে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশের কথা বলা হলেও এটা লক্ষাধিক হবে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক আমিনা মহসীন বলেন, ‘নতুন বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। মিয়ানমারের ক্ষেত্রে দেশটির মধ্যে থাকা বিভিন্ন ফ্র্যাকশনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’ তিনি বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে চলমান ভূরাজনীতিতে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখাও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।’

বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে মিয়ানমারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। অথচ বাংলাদেশের সংকটের তালিকায় বেশ ওপরই জায়গা করে নেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি। এখন বড় বিষয় হবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসি বলেন, ‘আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক অন্যভাবে তৈরি করতে হবে। এখনই তাদের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ স্থাপনের উপযুক্ত সময় নয়। তবে আমাদের সামরিক বিকল্পগুলোও উন্মুক্ত রাখা উচিত।’ ঢাকা যদি আরাকান আর্মির মতো বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে না পারে, তাহলে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য সব অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল খুঁজে বের করারও পরামর্শ দেন এ বিশ্লেষক। রাখাইনে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিদ্রোহের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলেও সতর্কতা উচ্চারণ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘নয়াদিল্লি ঐতিহাসিকভাবে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও, রাখাইনের পরিবর্তনশীল অবস্থার আলোকে আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সেটিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ফলে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো।’

এদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন এরই মধ্যে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে উল্লেখ করে বলেছেন, ঘুষ দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের তৎপরতার কথা তুলে ধরে আরও বলেন, আমি মিয়ানমারকে জানিয়েছি যে সীমান্ত আর তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি এখন আরাকান আর্মির মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। একটি রাষ্ট্র হিসেবে আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি না। সীমান্ত ও রাখাইন সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানে মিয়ানমারকে অবশ্যই একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। যাতে সমাধান করা যায়।

এ ছাড়া গত মাসের শেষ দিকে থাইল্যান্ডে এক বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চলমান সীমান্ত ও রাখাইন সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আরাকান আর্মির মতো কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঢাকা যুক্ত হতে না পারার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।

গত সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের সীমানাঘেঁষা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, মিয়ানমারের বিপ্লবী গোষ্ঠীর পাশাপাশি জান্তা সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর রাখছে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা সরকারের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে বাংলাদেশ তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘নতুন করে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশ সীমান্ত পুরোপুরি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে। সীমান্তে স্থানীয়দের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে কিছু দালাল রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে। আমাদের স্বার্থ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রথম থেকে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ-মায়ানমারের সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে আসে। ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের শিকার হয়ে কক্সবাজারে আসে আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলা গণহত্যা চালানোর পর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসে আরো সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদের সাথে আগে থাকা উল্লিখিতরা মিলে কক্সবাজার জেলা এখন ১৫ লাখ রেহিঙ্গা শরণার্থীর আবাসভূমি। এদের ছয় লাখ এখন আছে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত কুতুপালং মেগা শিবিরে। আর এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।

42 ভিউ

Posted ৩:২৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com