বুধবার ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতপার্থক্য অন্তর্বর্তী সরকারের

রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
19 ভিউ
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতপার্থক্য অন্তর্বর্তী সরকারের

কক্সবাংলা ডটকম(১৪ ডিসেম্বর) :: রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও রাজনীতিবিদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তা স্পষ্ট। নির্বাচন নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। বিএনপিসহ অনেক দল দ্রুত নির্বাচন চাইলেও সরকার সংস্কারে জোর দিচ্ছে।

শুরু থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপের (রূপরেখা) জোরালো দাবি থাকলেও সরকার সায় দিচ্ছে না।

শুক্রবার পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশের রাজনৈতিক সংস্কারে অগ্রগতির অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে প্রশ্ন তুলে বলেন, রাজনীতিবিদরাই যদি সংস্কার করেন, তা হলে গত ৫৩ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি কেন?

রাজনীতিবিদরা দেশ সংস্কার করলে অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় আসতে হতো না। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও করত না। নির্বাচনের আগে জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের দায়িত্ব দিয়েছে।

পরিবেশ উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে এই পর্যন্ত যত সংস্কার কিংবা পরিবর্তন হয়েছে সবই রাজনীতিবিদরাই করেছেন। হ্যাঁ, সব সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে যা হয়েছে তা অন্য কেউ করেনি। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। কেউ যদি মনে করে এককালীন সংস্কার দিয়ে ৫০ বছর চলবে, তবে এটা বোকামি হবে। সংস্কারে জনগণের সমর্থন লাগে। জনগণের মালিকানা থাকতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার বলার বহু আগে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। উপদেষ্টাদের কাছে সংস্কারের বিষয়টি নতুন মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে পুরোনো বিষয়। জনগণের মতামত নিয়ে তাদের সঙ্গে আমরা চলি। নতুন করে সংস্কারের পদ্ধতি শেখাতে হবে না।

এর আগে গত বুধবার তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে তাদের অধীনে সংস্কার হোক। তাই তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। তারা সংস্কারের পরিবর্তে নির্বাচনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ‘ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টার’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট দলের নাম বলেননি উপদেষ্টা নাহিদ।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। কয়েক মাসে জুলাই অভ্যুত্থানের মিত্রদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিভেদ সামনে এলেও সরকারকে ‘ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টার’ সরাসরি অভিযোগ এর আগে শোনা যায়নি। ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির তরফ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা যখন এ কথা বলেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য কাজ করছে-এটা অত্যন্ত ঘোরতর অভিযোগ। আমি তীব্রভাবে এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি এবং আমি মনে করি যে, এই ধরনের উক্তি তার প্রত্যাহার করা উচিত। দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে বা রাজনীতিকে আপনাদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের সহযোগিতা করছে। বিএনপি সংস্কারের চেয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে-এমন আলোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তা নাকচ করে দেন বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা দুই বছর আগে সংস্কারের কথা বলেছি, ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলীয় এক অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘সরকারের সমালোচনা করা মানে সরকারকে ব্যর্থ করা নয়।’ একজন উপদেষ্টার এ ধরনের কথা বলা সমীচীন নয়। কারণ যে শেখ হাসিনা গণতন্ত্র আটকে দিয়েছিল, আপনাদের কথা সেই শেখ হাসিনার মতো হবে কেন।

এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে রাখতে হবে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থিত সরকার। সরকার সফল হোক সেটা আমরা চাই। সংস্কার ও নির্বাচন পরস্পরবিরোধী নয়। জনসমর্থন ও রাজনৈতিক দল ছাড়া টেকসই সংস্কার সম্ভব নয়। কেননা সংস্কার অনুমোদন করতে সংসদ লাগবে। সব সংস্কার এ সরকার করতে পারলে তো আর নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, উপদেষ্টাদের শক্ত কথা পরিহার করতে হবে। শারীরিক ভাষায় আরও পরিপক্বতা দেখাতে হবে। বিভাজন সৃষ্টি হয় এমন কথাবার্তা বলা সমীচীন হবে না। শর্তহীন সমর্থন চাওয়াটা তাদের ঠিক হবে না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সরকারের উচিত হবে না রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা। সংকট সমাধানে প্রয়োজন অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ আলোচনা করা।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের মতে, উপদেষ্টাদের বক্তব্য একেবারে অমূলক নয়। আবার রাজনীতিবিদদের দাবিটাও যৌক্তিক। এ প্রসঙ্গে সময়ের আলোকে তিনি বলেন, এখানে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। কিছু দল নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়ো করছে। সরকার সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা এ লক্ষ্যে ১০টি কমিশনও গঠন করেছে। কমিশনের কাজ চলমান। এ সময়ে নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে।

অন্যদিকে উপদেষ্টাদের কথাবার্তা অতি রাজনৈতিক হয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে তাদের জনভিত্তি হলো রাজনৈতিক দলের সমর্থন। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের চির ধরেছে। এটা দূর করতে সরকারের উচিত অংশীজনদের নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রম আরও গতিশীল করা। সেইসঙ্গে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।

বিএনপির মতো বড় দলের দিক থেকে দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার চাপ রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কৌতূহল আছে। সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা কয়েকদিন আগে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন আগামী বছর নির্বাচিত সরকার দেখা যাবে। এর আগে আইন উপদেষ্টাও প্রায় একই কথা বলেন। যদিও নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসেনি।

ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাসের মাথায় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্রের ছয় খাত সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর নভেম্বরে আরও পাঁচ খাত সংস্কারের জন্য পাঁচটি কমিশন করা হয়। প্রত্যেক কমিশনকে সুপারিশ জমা দিতে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

সরকার সংস্কার কমিশন গঠনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে ওই বিষয়গুলোতে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করতে ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়। সংবিধান সংস্কারে ৬২টি ও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারে ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। রাষ্ট্র-কাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপি যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করেছিল, তার আলোকেই লিখিত প্রস্তাব দেয় দলটি। অন্যদিকে নির্বাচনব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ৪১টি প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তুলে ধরেছে জামায়াত।

সংস্কার নিয়ে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সরকার দূরত্ব তৈরি করছে কি না জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি বক্তব্যে বলেছি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য রাজনীতিবিদদের অবশ্যই প্রয়োজন আছে এবং এটিই কাম্য। নির্বাচনের পাশাপাশি এ সরকারের সংস্কার বিচার বিবেচনারও দায়িত্ব আছে। সুতরাং আমরা কেন, কী কারণে এ দায়িত্বে আছি তার বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। দূরত্ব সৃষ্টির কোনো কারণ নেই, কেননা বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ সংস্কারের পক্ষে।

অন্যদিকে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকলেও এতে জটিলতা হবে না বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

19 ভিউ

Posted ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com