কক্সবাংলা ডটকম(৮ জুলাই) :: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সেপ্টেম্বরে নির্বাচনি প্রচারণায় নামার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করার একদফা আন্দোলন নিয়ে বিএনপিও মাঠে নামবে এ মাসেই।
এ ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামও ঘোষণা দিয়েছে একই সময়ে মাঠে নামার। এর ফলে আগামী সেপ্টেম্বরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়া, এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ দখলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন মারমুখী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগসহ একদফা দাবি নিয়ে কর্মসূচি দেবে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
এতে রাজধানী ঢাকাসহ তৃণমূল পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা আরও বাড়বে। ক্ষমতাসীন দল সবসময় বিরোধী দলকে বিভিন্নভাবে দমিয়ে করে রাখতে চায়। কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতি উৎসাহী হয়েও বিরোধী দল দমনে নানা কৌশল নেয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও গণতান্ত্রিক চর্চা করতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপিই নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দলের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
এ থেকে বেরিয়ে না এলে দেশের পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হবে। অর্থাৎ দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। ঘটবে প্রাণহানির ঘটনা। আর এটি হবে রাজনৈতিক দলগুলোর আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এ জন্য দুই পক্ষকেই ব্যালেন্স করতে হবে। বসতে হবে আলোচনায়। কারণ দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধরে রাখতে হলে অবশ্যই আলোচনার বিকল্প নেই।
অবশ্য আওয়ামী লীগ বলছে, তারা বিএনপির কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেবে না। আওয়ামী লীগ কোনো সংঘাত চায় না। তবে কেউ সহিংসতা করলে তাদের প্রতিহত করা হবে। অপরদিকে বিরোধী দল বিএনপি বলছে, সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করার একদফা আন্দোলন নিয়ে আমরা মাঠে থাকব। দাবি আদায় ছাড়া রাজপথ ছাড়বে না। আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে। তবে সামনে আগস্ট মাস। এ মাসে বাঙালি জাতির জন্য শোকের মাস। এ মাসজুড়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচি থাকবে। এরপরই জোরেশোরে শুরু হবে নির্বাচনি প্রচারণা। কিন্তু বিএনপি নাকি একদফা দাবি নিয়ে মাঠে থাকবে। কিন্তু আমরা কোনো সংঘাতে যাব না। জাতীয় নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাই নির্বাচনি পরিবেশ ঠিক রাখতে আওয়ামী লীগ যা করার তাই করবে।
তবে সংঘাতের কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের প্রচারণা চালাবে। আর আমরা সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করার একদফা দাবিতে মাঠে থাকব। এখানে কোনো সংঘর্ষ বা সংঘাতের আশঙ্কা নেই।
তবে তারা যদি আঘাত করে আমরাও পাল্টা আঘাত করব। আর আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রচারণায় নামবে কী কারণে। তাদের কি ভোট দরকার আছে? তারা কার কাছে ভোট চাইবে। জনগণ তো তাদের সঙ্গে নেই। এটা আওয়ামী লীগের মশকরা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ পরিস্থিতিতে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে সব পক্ষকে ব্যালেন্স করতে হবে, না হলে তৃতীয় শক্তির উত্থানের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে ভূ-রাজনীতির কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বাইরের শক্তিগুলো শক্ত অবস্থানে। এতে রাজনীতিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিরোধী দল চিন্তা করছে মাঠ দখলের। কারণ এখন মাঠ দখল করতে না পারলে বিজয় কঠিন হয়ে পড়বে। আর সরকার আশাবাদী জয়লাভ করবে। এখন জনগণ যাদের সঙ্গে জোরালোভাবে যাবে দিনশেষে তারাই জয়ী হবে।
এ ক্ষেত্রে দুই দলই মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এটি না হলে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে অব্যশই জনগণের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব পক্ষকেই ব্যালেন্স করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। এতে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করবে। জনগণেরও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থা তৈরি হবে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দলগুলোকে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছতে হবে, না হলে প্রাণহানি ঘটবে বলে জানিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রচারণায় নামবে। আর বিএনপি সরকারের পতনের দাবিতে মাঠে থাকবে। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও যদি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকে, এতে মারামারি কাটাকাটি ও খুনাখুনি হবে।
এমনকি ১/১১-এর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। বিদেশি শক্তি এখানে সক্রিয় হলে তৃতীয় শক্তি আসবে না এমনটা বলা যাবে না। এ জন্য একে অপরকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এর সমাধান রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে। একমাত্র সমাধান আলোচনা। আলোচনা ছাড়া রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়। আর তা না হলে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক দলগুলোর যুদ্ধ ঘোষণা দেশের মানুষকে চোরাবালিতে নিমজ্জিত করবে বলে জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রচারণায় নামবে। আর বিএনপি সরকার পতনের একদফা দাবি নিয়ে মাঠে নামবে। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। এটা আসলে আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার মতো। এটা এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা। এতে দেশে চরম অস্থিরতা বাড়বে। দেশে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। কিন্তু রাজনীতি মানে যুদ্ধ ঘোষণা নয়।
রাজনীতি হলো, আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করা। রাজনৈতিক দলগুলো যেন চর দখলে নেমে পড়েছে। আসলে এটি দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। তাই আলোচনাই হলো এর একমাত্র সমাধান। এই সিদ্ধান্ত থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বেরিয়ে না এলে এটি হবে আত্মঘাতী।
Posted ৫:২৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta