সোয়েব সাঈদ, রামু :: কক্সবাজারের রামুতে ৭০০ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিলো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভ্রাম্যমান হাসপাতাল ‘জীবন খেয়া’। শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত রামু কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ মোবারক বাবু জানান- দিনব্যাপী মেডিকেল ক্যাম্পে চক্ষু বিশেষজ্ঞ, শিশু, নারী ও মেডিসিনে অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ, প্যাথলজি ল্যাব সুবিধা ও চোখের আধুনিক পরীক্ষা সহ ফ্রি চশমা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের পুষ্টিকর খাদ্য, কিশোরীদের স্যানিটারি প্যাড এবং শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু, সকল বয়সের নারী এবং ৫০ বছরের উর্ধ্বে পুরুষ এ কার্যক্রমের আওতায় ছিলো।
তিনি আরও জানান- রামু উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে এ মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রান্তিক রোগীদের দোরগোড়ায় বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসাসেবা পোঁছে দিচ্ছে এসসিবি-বিদ্যানন্দ ভ্রাম্যমান হাসপাতাল “জীবনখেয়া।
সারাদেশের লক্ষাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ, ল্যাব পরীক্ষা, পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ১ লক্ষ কিশোরীর মাঝে স্যানিটারি প্যাড পৌঁছে দিবে ভ্রাম্যমান এই হাসপাতাল। অবহেলিত প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জীবন খেয়া’ নামের ভ্রাম্যমান হাসপাতাল আবারো চালু করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও ষ্ট্যাণ্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ।
দেশের লক্ষাধিক প্রান্তিক রোগী এই হাসপাতাল থেকে আধুনিক চিকিৎসাসেবা পাবেন ৩ বছরে। থাকছে চক্ষু বিশেষজ্ঞ,শিশু,নারী ও মেডিসিনে অভিজ্ঞ ডাক্তার। থাকছে প্যাথলজি ল্যাব সুবিধা ও চোখের আধুনিক পরীক্ষা সহ ফ্রি চশমা।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন “দুর্গম পাহাড় কিংবা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষজন কে চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য হাজার টাকা শুধু যাতায়াত ভাড়ায় ব্যয় করতে হয়। এসসিবির অর্থায়নে বিদ্যানন্দের এই ভাসমান হাসপাতাল সেইসব মানুষের দোরগোড়ায় আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাজির হয়েছে। ৩ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ এখান থেকে চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন থেকে আরো জানানো হয়; বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ষ্ট্যাণ্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ৬ জন চিকিৎসক, ১ জন গাইনী বিশেষজ্ঞ, ১ জন শিশু বিশেষজ্ঞ ও ১ জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়ে এই ভাসমান হাসপাতালটি আগামী ৩ বছর ব্যাপী সারাদেশ বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্পটে ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেবে।
বিনামূল্যে ল্যাব টেস্ট ও ওষুধের পাশাপাশি রোগীদেরকে পুষ্টিকর খাদ্যপণ্যও দেয়া হচ্ছে এই হাসপাতাল থেকে। এর পাশাপাশি জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে স্বাবলম্বীকরন, শীতবস্ত্র বিতরণ সহ বহুমুখী সেবামূলক কার্যক্রমও চলমান থাকবে এই হাসপাতাল থেকে। ৩ বছরে ১২ বার এ মেডিকেল টিম বের হবে। প্রতি বারে টানা ১ মাস তাঁরা দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে ক্যাম্প স্থাপন করবে। এই টিমে কাজ করছে প্রায় ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক।
বিদ্যানন্দ চরাঞ্চচলের মানুষকে চিকিসা দেয়ার জন্য সর্বপ্রথম ২০২০ সালে ভাসমান হাসপাতাল চালু করে খুলনায়। ১ম বার বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এই হাসপাতাল পরিচালনায় সহযোগীতা করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর এই হাসপাতাল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গত বছর থেকে এই হাসপাতাল অর্থায়ন করছে ষ্ট্যাণ্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। এবার সারাদেশব্যাপী এটা পরিচালিত হবে।
দেশ-বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা তখন জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কতৃক জাতীয় মানবকল্যান পদক ও ২০২১ সালে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কতৃক “কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট” পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
Posted ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta