বুধবার ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসন কতদুর?

মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০২৪
103 ভিউ
রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসন কতদুর?

কক্সবংলা ডটকম(৪ জুন) :: বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে গত সাত বছরে বহু আলাপ-আলোচনা হলেও বাস্তবে একজনকেও এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন করা যায়নি। তার ওপর মায়ানমারে এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে এ প্রত্যাবাসন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

যদিও এ সমস্যা সমাধানে অনেক পক্ষই বিভিন্ন সময়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। আন্তর্জাতিক আদালতে মায়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলায় দ্রুত একটি ‘পজিটিভ আউটকাম’ আসবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। এ বিষয়ে এখন নানা ধরনের সেমিনার-সিম্পেজিয়ামও হচ্ছে। কিন্তু চূড়ান্ত সমাধান হচ্ছে না।

সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অগণিত মানুষ শরণার্থী হয়েছিলেন। যুদ্ধশেষে একমাত্র ইউরোপেই ৪০ মিলিয়নেরও অধিক লোক শরণার্থী ছিল। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি জাতিসংঘ ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রশাসন (ইউএনআরআরএ) গঠন করে; যার প্রধান কাজ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন দেশসহ ইউরোপ ও চীন থেকে আসা শরণার্থীদের সহায়তা করা। তাদের নিয়ন্ত্রণে ও প্রত্যক্ষ সহায়তায় ৭ মিলিয়ন লোক নিজ বাসভূমিতে ফিরে যায়।

কিন্তু উদ্বাস্তু এক মিলিয়ন লোক মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। বিশ্বযুদ্ধের শেষ মাসে প্রায় ৫ মিলিয়ন জার্মান বেসামরিক নাগরিক পূর্ব প্রুশিয়া, পোমারানিয়া এবং সিলেসিয়া রাজ্য থেকে রেড আর্মির প্রচণ্ড আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ম্যাকলেনবার্গ, ব্রান্ডেনবার্গ এবং স্যাক্সনিতে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেয়। ১৯৯১-৯২ সালে আড়াই লাখের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী মায়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের অনেকেই ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ সরকার তাদের দুটি ভাগে ভাগ করেছে। একটি শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থানকারী স্বীকৃত রোহিঙ্গা; অন্যটি বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশে যাওয়া অস্বীকৃত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। কক্সবাজারের নয়াপাড়া এবং কুতুপালং এলাকার দুটি ক্যাম্পে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। বিশ্বে যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে এক বছরের ব্যবধানে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ। ২০২৩ সাল শেষে অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে রেকর্ড ৭ কোটি ৫৯ লাখ মানুষ। আগের বছর শেষে বিশ্বে উদ্বাস্তু ছিল ৭ কোটি ১১ লাখ মানুষ।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এ নিয়ে এক ধরনের চাপ রয়েছে বাংলাদেশের ওপর। এরপর আবার নতুন করে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পুনরায় রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আহ্বান করা হচ্ছে। মায়ামারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও রাখাইনে আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের তীব্রতা চলমান রয়েছে। সীমান্তের ওপারে রাখাইনের কয়েকটি টাউনশিপে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে এএ-র ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।

সেখানে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের তীব্রতায় টিকতে না পেরে রোহিঙ্গারা প্রাণভয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে পালিয়ে আসছেন। অনেকে মনে করছেন, এএ সেসব এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করে দেশত্যাগে বাধ্য করছে।

চলমান সংঘর্ষে মায়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে এএ-র কাছে অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় এএ-র সঙ্গে সংঘর্ষের সময় রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ধরে তাদের এএ-র সঙ্গে লড়াই করার নির্দেশ দিচ্ছে মায়ানমার সেনাবাহিনী। তারা রোহিঙ্গাদের তাদের এলাকায় এএ-র আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার নামে এএ-র সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে বাধ্য করে আন্তসাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবারও তুঙ্গে উঠেছে সংঘর্ষ, পাওয়া গেছে শিরশ্ছেদ, হত্যাকাণ্ড ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার খবর। এমন ভয়াল পরিস্থিতি এড়াতে আরও ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে, জাতিসংঘের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

এরই মধ্যে মায়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার থমাস অ্যান্ডুস রাখাইনের চলমান সংকটের প্রেক্ষিতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ‘বন্ধ সীমান্ত’ নীতি থেকে সরে আসতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ, দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করে যাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের উদারতা রোহিঙ্গাদের একমাত্র ভরসা বলে তারা মতপ্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার বাংলাদেশের ভেতরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি উন্নয়নে জরুরি তহবিল নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বের সব রাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে। মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টার্ক।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরাসহ অনেক সংস্থার সাংবাদিক ইতোমধ্যেই বলেছেন, বাংলাদেশে যত পরিমাণ রোহিঙ্গা পুনর্বাসিত হয়েছে, তাদের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশেল জন্য এটা কোনোভাবেই গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

তাছাড়া ইতোমধ্যেই শঙ্কার কারণ হচ্ছে, দাতাগোষ্ঠীগুলো তাদের সাহায্য-সহযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে নতুন করে চাপ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য অনেকটা কঠিন। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, যারা বাংলাদেশকে আহ্বান জানাচ্ছে তারা কেন কার্যকর ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না? বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই যে অবদান রেখেছে, তা আর কেউ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে করেনি। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করতে পারে।

কিন্তু সে বিষয়ে আমরা স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। প্রসঙ্গক্রমে বলা ভালো, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আন্তরিকতা কিংবা উদারতা দেখাচ্ছে না। এমনকি বাংলাদেশ যেভাবে প্রায় ১৩ লাখ শরণার্থী গ্রহণ করতে আন্তরিকতা কিংবা উদারতা দেখিয়েছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এত উদারভাবে শরণার্থী গ্রহণ করেনি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় মায়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনকে (আইওএমের)। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু (বাংলাদেশে) মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে, আইওএমের উচিত এই উদ্দেশ্যে আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা।

বাংলাদেশকে নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে অর্থাৎ জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে শরণার্থীশিবির পরিচালনা করতে হচ্ছে। মাঝখান দিয়ে সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হতভাগা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তাদের ন্যূনতম জীবনধারণের সুযোগ ও সুবিধাগুলো নষ্ট হচ্ছে। এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য আওয়াজ কোথাও নেই।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

103 ভিউ

Posted ৪:০৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com