কক্সবাংলা ডটকম(১২ জুলাই) :: গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপানো বিষফোড়ার নাম রোহিঙ্গা সমস্যা। জাতিসংঘ ও বিশ্বমোড়লদের অনুরোধের ঢেঁকি গিলে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মধ্য থেকে চাপ সৃষ্টি করেছিল একটি পরজীবী গোষ্ঠী। গত ছয় বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রতিবেশী দেশের এ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা আশ্রয়দাতাদের প্রতি শুধু কৃতঘ্নতার পরিচয় দিয়েই চলছে। তারা বাংলাদেশে মাদক আগ্রাসনের বাহকের ভূমিকা পালন করছে। দেশের প্রধান পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের গাছপালা, পাহাড়-টিলা ধ্বংস করে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে।
রাখাইন থেকে ১৯৯১ সালে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে এবং টেকনাফের হ্নীলায় দুটি করে মোট চারটি শিবির ছিল। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের পর টেকনাফে আরও ৬টি এবং উখিয়ায় ২৪টি আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ বাংলাদেশে ১২ লাখ মানুষের আশ্রয় দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে সংকট সৃষ্টি করছে। দুর্বিনীত এই ভিনদেশিরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।
সময় যত গড়াচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতাও তত বাড়ছে। এসব ক্যাম্পে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কর্মকান্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। সামান্য ঘটনা থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, পূর্ব-শত্রম্নতার জের, মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচারের জন্য অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো।
শুক্রবার ভোরেও উখিয়ার একটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুটি গ্রম্নপের গোলাগুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছে। ক্যাম্প-৮ পশ্চিমের এ ঘটনায় নিহতের প্রত্যেকেই মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি, আরসা সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নিহত চারজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। তাদের একজন আরসা কমান্ডার, একজন জিম্মাদার ও বাকিরা সাধারণ সদস্য। পরে বিকাল ৫টার দিকে একই ক্যাম্প থেকে সানাউলস্নাহ নামে আরও এক রোহিঙ্গার গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিক সশস্ত্র গ্রম্নপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বাড়ছে খুনোখুনি। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় একাধিক সশস্ত্র গ্রম্নপ। ওরা ভয়ঙ্কর, তুচ্ছ ঘটনায় এক পক্ষ অন্য পক্ষকে খুন করতে দ্বিধা করে না। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না হত্যাকান্ড।
তাদের মধ্যে মাদক, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই ঘটছে খুনোখুনি। অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত। মুক্তিপণ দিয়েও স্বজনদের বাঁচাতে না পারার একাধিক নজির রয়েছে। ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আর্থিক সুবিধা দিয়ে মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্রগোষ্ঠীর কমান্ডারদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে দেশে নেশাদ্রব্যের পাশাপাশি চোরাই পণ্য আনছে মাদক ও চোরাকারবারিরা।
শুক্রবার (৭ জুলাই) ভোরে উখিয়ার ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টে দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রম্নপের গোলাগুলিতে পাঁচজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আরসা গ্রম্নপের সদস্য নিহতের ঘটনায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় সন্ত্রাসী সংগঠনের ২ হাজারের বেশি সদস্য অপতৎপরতায় জড়িত। উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অস্থিরতার মিশনে জড়িত ৩০টির বেশি সশস্ত্রগোষ্ঠী। শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ক্যাম্পে খুনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯-এ। এ নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮২ জন খুন হয়েছে।
আরসা এবং সমমনা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো মিয়ানমার সরকারের মতলব পূরণে কাজ করছে। রোহিঙ্গারা যাতে স্বদেশে ফিরে না যায় এটাই তাদের লক্ষ্য। এ দুর্বৃত্তদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হবে এমনটিই প্রত্যাশিত।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে পুরোপুরি মানবিক কারণে দেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধারণা করা হচ্ছিল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধীরে ধীরে ফিরে যাবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। কিন্তু বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ঠিক কবে এই রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে, বা আদৌ তারা ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা জোরদার হচ্ছে।
আশা করছি, রোহিঙ্গারা যত দিন ফিরে না যাচ্ছে, ততদিন ওইসব ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজর দেবে প্রশাসন। এছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে সরকারসহ সব মহল যথাযথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
Posted ১:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta